নাসির উদ্দীন বুলবুলঃ শিল্পাঞ্চল অধ্যুষিত নবগঠিত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের এক বছর পূর্তি আজ। গত বছরের ৬ জুলাই এদিনে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচনের এক বছর পার হলেও নগরবাসী এখনো নগরে কোন উন্নয়নের ছোঁয়া দেখেনি নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত নগরবাসী।
এক বছর আগে মেয়র নির্বাচিত হলেও চরম অর্থ সংঙ্কটের কারণে বিশাল এ নগরীর সার্বিক উন্নয়ন কাজের কোন ছিঁটে ফোটাও নগরীতে পড়েনি। মেয়র তার নগরবাসীকে দেয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির একটিও গত এক বছরে পূরণ করতে পারেননি। গাজীপুর সিটির প্রধান সমস্যা প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু ও নগরভবনে নাগরিকদের যাতায়াতে জয়দেবপুর রেলক্রসিংয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ নির্বাচিত মেয়র অধ্যাপক এম.এ মান্নানের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অন্যতম হলেও এখনও ওই ফ্লাইওভার নির্মাণের কোন কার্যক্রমই হাতে নেয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে সিটি মেয়রের একান্ত ব্যক্তিগত সচিব প্রকৌশলী মোঃ মজিবুর রহমান কাজল জানান, ওই স্থানে ফ্লাইওভার নির্মাণের প্রাথমিক কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। অচিরেই এই গুরুত্বপূর্ণ ফ্লাইওভারটি নির্মাণের যাবতীয় কার্যক্রম চলমান আছে। মেয়র মহোদয়ের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির সবগুলোই পর্যায়ক্রমে পূরণের কার্যক্রমও চলমান আছে।
ইতিমধ্যেই নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন কল্পে প্রায় ৬০ কোটি টাকার ড্রেন নির্মাণের কার্যক্রমও চলমান আছে। এটিও মেয়র অধ্যাপক এম.এ মান্নানের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অন্যতম ছিল। এতে নগরীর জলাবদ্ধতা অনেকাংশেই কমে আসবে বলে তিনি জানান। বিশেষ করে আর্থিক সংঙ্কটের কারণে প্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও নগরবাসীর চাহিদা অনুপাতে মেয়র মহোদয়ের প্রতিশ্রুতি থাকলেও সকল উন্নয়ন কাজ এক সাথে করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান সিটি মেয়রের একান্ত সচিব প্রকৌশলী মোঃ মজিবুর রহমান কাজল।
নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে বিশাল এ নগরীর খানাখন্দকে ভরা ভাঙ্গাচুড়া রাস্তা-ঘাট উন্নয়নেরও কার্যক্রম পরিকল্পনাতেই আটকে আছে। সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থ সঙ্কটের কারণে নগর উন্নয়নের কার্যক্রম অনেকটাই থমকে আছে। মেয়র নির্বাচনের এক বছর অতিবাহিত হলেও নতুন কোন প্রকল্পকাজ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে বাগিয়ে আনতে পারেনি।
এদিকে উন্নয়ন আর অগ্রগতির আশায় এক বছর পূর্বে নগরবাসী বর্তমান মেয়র অধ্যাপক এম.এ মান্নানকে মেয়র নির্বাচিত করলেও নাগরিকদের প্রত্যাশার ছিটে ফোটাও বাস্তবায়িত হয়নি এই এক বছরে।
এদিকে বিশেষ করে টঙ্গী অঞ্চল ও শিল্পাঞ্চল অধ্যুষিত এলাকাসমূহ থেকে জলাবদ্ধতা নিরসনের মেয়রের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি থাকলেও এই বর্ষা মৌসুমে এসব অঞ্চলের বসবাসকারী নগরবাসী উন্নয়নের জোয়ারের বদলে রাস্তার কাদা পানিতে ভাসছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যাচ্ছে এসব অঞ্চলের রাস্তা-ড্রেন। দীর্ঘদিনেও নগরীর বর্জ্য ও সুয়ারেজ ব্যবস্থাপনার উন্নতি না হওয়ায় নগরবাসীর ভোগান্তির শেষ নেই। বর্তমান জলাবদ্ধতার কারণে নগরীর অধিকাংশ সড়কই চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলোর মেরামতের কাজও হাতে নেয়া হয়নি।
সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়, সিটির হোল্ডিং সংখ্যা, বাজার, ট্রেডলাইসেন্স, বাস ও ট্রাক টার্মিনাল, পশুর হাট, নিজস্ব সম্পত্তি ও বাজার, মার্কেট ও অন্যান্য খাতের আয়ের অর্থ থেকেই নাগরিক সুবিধা ও উন্নয়নের কার্যক্রম সিটি কর্পোরেশন হাতে নেয়। এতে গাজীপুর সিটির প্রধান সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে নতুন ৬টি ইউনিয়ন পরিষদের সংযুক্তির ফলে এসব এলাকার হোল্ডিং টেক্স এখনও কার্যকর করা যায়নি।
এ বিশাল এলাকার হোল্ডিং টেক্স কার্যকর হলে সিটির রাজস্ব উন্নয়নে অনেকটা অগ্রগতী আসবে। এছাড়া নবগঠিত সিটির বিভিন্ন অঞ্চলে বাড়ি-ঘর ও স্থাপনা, কলকারখানা নির্মাণের জন্য সিটি কর্পোরেশনের প্ল্যান অনুমোদন কার্যক্রমের অনুমতি এখনও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনকে না দেয়ায় একদিকে যেমন অপরিকল্পিতভাবে বাড়ি-ঘর ও স্থাপনা নির্মিত হচ্ছে অন্যদিকে সিটি কর্পোরেশনও প্ল্যান অনুমোদনের এ বিশাল খাত থেকে রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।