গুডবাই ব্রাজিল। আগামী ৪ বছর পর অর্থাৎ ২০১৮ সালে আবার দেখা হবে রাশিয়ায়। এর আগে দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে গত ১২ জুন শুরু হওয়া দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ খ্যাত বিশ্বের সবচেয়ে বড় আসর ২০তম ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্ণামেন্টের পর্দা নামছে এখানেই।
রবিবারের ফাইনাল ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে ১-০ গোলে হারিয়ে ৪র্থ বারেরমতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান হলো জার্মনি। এরই সাথে আগামী ৪ বছরের জন্য শেষ হয়ে গেলো বিশ্বব্যাপী ফুটবল উম্মাদনা। গত এক মাস ফুটবল জ্বরে বুদ হয়েছিল সমগ্র বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। আবারও বুঝিয়ে দিয়ে গেলো যে- একেই বলে বিশ্বকাপ ফুটবল। ৩২ দিন ১২টি ভেন্যুতে ৩২টি দলের ৬৪ ম্যাচের রংবেরং, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা আর নানা ঘটনার জন্ম দিয়ে ইতি টানলো ব্রাজিল বিশ্বকাপ। তারপর আবার দেখা হবে ২০১৮ সালে রাশিয়াতে। আর তাতেই আবারও প্রমাণ হলো যে, যার শুরু আছে তার শেষও আছে।
ফাইনাল খেলা শুরু হওয়ার আগে আধাঘণ্টার সমাপনী অনুষ্ঠানে গান গাইলেন বিশ্ববিখখ্যাত কলম্বিয়ান কণ্ঠশিল্পী সাকিরা। এর আগে ২০০৬ ও ২০১০ সালের বিশ্বকাপের সমাপনীতেও তিনি তার জদুকরি সুরে মাতোয়ারা করেছিলেন ফুটবল বিশ্বকে। এবারের সমাপনীতে বিশ্বকাপ উপলক্ষে সাকিরা তার নিজের গাওয়া ‘লা লা লা’ গানটি পরিবেশন করেন।
গত ১২ জুন স্বাগতিক ব্রাজিল ও ক্রোয়েশিয়ার ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠেছিল ঘটনাবহুল ব্রাজিল বিশ্বকাপের। ঘটনাবহুল এ কারণেই- ব্রাজিল বিশ্বকাপ শুরুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ফুটবল যাদের হৃদয়ের স্পন্দন সেই ব্রাজিলের জনগণের একটি অংশ বিশ্বকাপবিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত ছিল। তাদের কাছে বিশ্বকাপের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ছিল মৌলিক চাহিদাগুলো। অথচ এ বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য এক একটি দেশের সে কী প্রাণান্তকর চেষ্টা থাকে। কিন্তু ব্রাজিল স্বাগতিক হয়েছিল অনেকটা বিনা বাধাতেই তাদের সাথে স্বাগতিক হওয়ার লড়াইয়ে আর কোনো দেশ ছিল না। ২০০৭ সালে ফিফা তাদের স্বাগতিক হিসেবে বেছে নিয়েছিল। তবে বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার পর আর তাদের তৎপরতা চোখে পড়েনি। সবার কণ্ঠে তখন ছিল একটি আওয়াজ ফুটবল ফুটবল আর ফুটবল।
এর আরেকটি কারণও ছিল- ব্রাজিল দলের শিরোপার দিকে এগিয়ে চলা। যদিও সেমিফাইনালে গিয়ে জামার্নির কাছে ৭-১ গোলে নিমর্মভাবে হারের গ্লানি নিয়ে বিদায় নিতে হয়েছিল। যে হারে আবার ফুঁসে উঠেছিলেন ব্রাজিলের নাগরিকরা। তারা সহজভাবে মেনে নিতে না পেরে ভাঙচুর-লুটপাট চালিয়েছিলেন। যদি বিশ্বকাপে ফুটবলে একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি ৫ বার শিরোপা জিতেছে ব্রাজিল। সর্বশেষ তারা ২০০২ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল দেশটি। কিন্তু নিজ দেশে শিরোপা জিততে না পারাটা দেশের জনগণের জন্য ছিল বিরাট এক ধাক্কা। এর আগে ১৯৫০ সালেও ব্রাজিল এমনি করে স্বাগতিক হয়ে শিরোপা জিততে পারেনি। শিরোপা নির্ধারণী লিগ পর্যায়ের শেষ ম্যাচে উরুগুয়ের কাছে তাদের সে বারের আশার সমাধি হয়েছিল।
এই ব্রাজিল বিশ্বকাপেই এবার ফিফা প্রথমবারের মতো গোল লাইন প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। যেখানে প্রথম ব্যবহার হয়েছিল ফ্রান্স ও হন্ডুরাসের খেলায়। গোলদাতা হয়েছিলেন করিম বেনজামা। আবার কুলিং ব্রেকও প্রথমবারের মতো প্রবর্তণ করা হলো। অতিরিক্ত গরমে তাপমাত্র ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে হলেই কুলিং ব্রেক নেয়ার নিয়ম করা হলো। পর্তুগাল-যুক্তরাষ্ট্র নেদারল্যান্ডস-মেক্সিকোর ম্যাচে কুলিং ব্রেক দেয়া হয়েছিল।
৩২ দলের মধ্যে একমাত্র স্বাগতিক ব্রাজিল ছাড়া বাকি ৩১ দলই বাছাইপর্ব খেলে উঠে মূল পর্বে আসে। যেখানে ছিল গতবারের চ্যাম্পিয়ন স্পেনও। এবার একমাত্র নতুন দল ছিল বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা। কিন্তু তারা গ্রুপপর্বই পার হতে পারেনি। গ্রুপ পর্বে বাদ পড়া দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় অঘটন ছিল বর্তমান চ্যাম্পিয়ন স্পেনের বিদায়। শুধু তাই নয় নিজেদের প্রথম খেলায় তারা বর্তমান রানার্সআপ নেদারল্যান্ডসের কাছে ৫-১ গোলের হার। স্পেনের মতো গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল ২ সাবেক চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড ও ইতালি। আবার ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলার রোনলদোর পর্তুগালও গ্রুপপর্ব পার হতে পারেনি। চমক ছিল কোস্টারিকার প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনাল উঠা। নেদারল্যান্ডসের সাথে গোলশূন্য ড্র করে পরে টাইব্রেকারে তারা হার মেনেছিল।
এবারের বিশ্বকাপে মোট গোল হয়েছে ১৭১টি। যেখানে আবার আত্মঘাতী গোল আছে ৫টি। এর মধ্যে এবারের আসরের প্রথম গোলটিই ছিল আত্মঘাতী। তাও আবার ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়ার উদ্বোধনী ম্যাচে ব্রাজিলের মার্সেলো গোল করেছিলেন। অন্যদিকে গোল্ডেন বুট জিতে নিলেন ৬ গোল করে কলম্বিয়ার তরুণ সেনসেশন রদ্রিগুয়েজ। আর জাদুকরী ফুটবল খেলে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার গোল্ডেন বল জিতে নিলেন বিশ্বের অন্যতম সেরা তারকা লিওনেল মেসি। এবার হ্যাটট্রিক হয়েছে মোট ২টি। পর্তুগালের বিপক্ষে তার প্রথমটি করেছেন জার্মানির মুলার। হন্ডুরাসের বিপক্ষে অপর হ্যাটট্রিকটি করেছেন সুইজারল্যান্ডের শাখিরি।