ডেস্ক : ৫২ বাজার ৫৩ গলির শহর ঢাকার অনেক কিছু পরিবর্তিত হয়ে গেলেও এখনও আগের ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন ঐতিহ্যবাহী ভাসমান হোটেল। ২০১৪ সাল এসে ঢাকায় মাত্র ৬০ টাকার বিনিময়ে একজনের রাত্রিযাপন এবং ১০০ টাকায় দুইজন মানুষ রাত্রিযাপন করা কল্পনা করা যায়? রাজাধানীর সদরঘাটের উত্তর পাশে অবস্থিত বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র ওয়াইজ ঘাটেই মূলত এই ঐতিহ্যবাহী ভাসমান হোটেল। শ্রেনী-পেশা নির্বিশেষে যে কেউ চাইলেই এই ভাসমান হোটেলে রাত্রিযাপন করতে পারে। তবে এই হোটেলগুলোর সেবার মান নিয়ে খুব একটা সন্তুষ্ট নন গ্রাহকরা।
মহান মুক্তিযুদ্ধের আগে থেকেই মূলত এই ভাসমান হোটেলগুলো জমজমাট হতে শুরু করে। কারণ তৎকালীন সময়ে লবনের ব্যবসা করা হিন্দু ধনী ব্যবসায়ীরা ঢাকা শহরের অভ্যন্তরে কোনো মুসলিমদের হোটেলে খেতে বা থাকতে চাইতো না। তাই তাদের সুবিধার্থে নিম্নবর্গের কিছু হিন্দু ব্যবসায়ি লঞ্চকে কাজে লাগিয়ে এসব ভাসমান হোটেল তৈরি করেন। কালের পরিক্রমায় সেই হিন্দু মহাজনরা এখন আর নেই। তাদের জায়গায় চলে এসেছে স্বাধীনতা পরবর্তী মুসলমান ব্যবসায়িরা। হিন্দু ব্যবসায়ির কাছ থেকে কিনে নেয়া তেমনি এক হোটেল মালিক হাজী নওয়াব আলী। আর তার ভাসমান হোটেলের নাম ‘উমা উজালা হোটেল’। ১৩ বছর আগে তিনি এক হিন্দু মালিকের কাছ থেকে হোটেলটি কিনেছেন। পরে অবশ্য অবকাঠামোগত কিছু উন্নয়ন করিয়েছেন তিনি। তারপরও ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখনো হোটেলটিকে রাখা হয়েছে সেই আদি ঘরানায়।
উমা উজালা হোটেলে প্রবেশ করতে হলে প্রথমে কিছুক্ষণ হাটতে হবে সরু স্টিলের সিড়িঁ দিয়ে। তারপর মাথা নিচু করে প্রবেশ করলেই ঢুকে যাবেন হোটেলের মূল প্রাঙ্গনে। সেখানে প্রবেশ করলেই চোখে পরবে অভ্যর্থনা টেবিল। তবে এটা কোন অভিজাত পাঁচতারকা হোটেলের মতো নয়। বরং সেই আদি ঘরানার বাশঁ আর কাঠ দিয়ে তৈরী করা অভ্যর্থনা টেবিল। কাঠ দিয়ে তৈরী করা হোটেলটির বেশীর ভাগ জানালাই উন্মুক্ত। যা দিয়ে আসবে নদীর উন্মুক্ত বাতাস। যদিও বুড়িগঙ্গার পানি থেকে এখন আর সুবাতাস আসে না। অবশ্য বুড়িগঙ্গার পানির সুবাসের সঙ্গে কিছু পানির ছিটাও আসতে পারে।
উমা উজালা হিন্দু হোটেলের ম্যানেজার মো. রেজাউল করিমের সঙ্গে হোটেলের বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে কথা হয়। তিনি জানালেন, হোটেলটি ৩ তলা বিশিষ্ট হলেও বর্তমানে এর নীচতলা ও দ্বিতীয় তলা ব্যবহারের উপযোগী আছে। তৃতীয় তলায় কিছু সমস্যার কারণে আপাতত ব্যবহার অনুপযোগী ঘোষণা করেছেন মালিক। হোটেলটির নীচতলা ও দ্বিতীয় তলায় কক্ষ আছে মোট ২০টি।
রুম ভাড়া কেমন জানতে চাইলে ম্যানেজার বলেন, ‘সব রুম তো আর প্রতিদিন ভাড়া হয়না। দেখা যায় ঈদ বা পূজার সামনে দূর-দূরান্ত থেকে নদী পথে ব্যবসায়ীরা আসেন। তখন সব রুম ভাড়া হয়। তাছাড়া এমনিতে গড়ে ১০টির মত রুম সব সময় ভাড়া হয়। আশেপাশে এখন অনেকগুলো আধুনিক হোটেল হয়েছে। যে কারণে আমাদের এখানে এখন খুব কম মানুষই আসে। তারপরও আমাদের যারা রিজার্ভ খদ্দের তারা সব সময়ই আমাদের এখানেই থাকেন।’
এদিকে পানিতে ভাসমান হোটেল নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। হোটেল থাকার কারণে এখানকার পানি অতিমাত্রায় দূষিত হচ্ছে বলে এলাকাবাসীর অনেকেই জানান। আবার অনেকের দৃষ্টিতে এটি একটি ঐতিহ্যবাহী হোটেল। বর্তমানে ওয়াইজ ঘাট এলাকায় মোট পাঁচটি হোটেল থাকলেও এরমধ্যে বোর্ডারদের জন্য চালু আছে তিনটি। এই তিনটি হোটেলের উপরই দাড়িয়ে আছে শতবছরের ঐতিহ্য ধারণ করা ঢাকার এক প্রান্তিক ঐতিহ্য।