নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে আন্দোলন দীর্ঘদিনের। বাংলাদেশে নারী অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন একটি বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বলছে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ২২০৮ জন নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
সংস্থাটি মঙ্গলবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে নারীর প্রতি এ ধরনের সহিংসতার অবসানে ধর্ষণ-বিরোধী আইন কার্যকরসহ বেশ কিছু সুপারিশও করেছে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় বলছে, এ ধরনের তথ্য তাদের কাছে না এলেও সংস্থাটির রিপোর্ট পর্যালোচনা করে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
সংবাদ সম্মেলনে মহিলা পরিষদ বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ছ’মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৪৩১টি এবং এর মধ্যে গণধর্ষনের শিকার হয়েছেন ৮২ জন। এ সময়কালে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪৫ জনকে। এছাড়া ধর্ষণের চেষ্টার শিকার হয়েছেন আরও ৫১ জন।
ধর্ষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার পুরুষরাও
মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম বিবিসিকে বলেছেন, ধর্ষণের ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি শুধু নারী নির্যাতন হিসেবে বিবেচনা করলে হবেনা, বরং তিনি মনে করেন এটিকে একটি বিশেষ পরিস্থিতি হিসেবে দেখতে হবে।
তিনি বলেন, “হঠাৎ করে গত দু তিন মাস ধরে অনেক বেড়ে গেছে। ধর্ষণ, অপহরণের পর হত্যা, ধর্ষণের পর হত্যা আমরা দেখছি। তুলনামূলক ভাবে বেড়েছে।”
সরেজমিন ঘটনাগুলো যাচাই করেছেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “অবশ্যই। ৬০%-এর বেশি। আমাদের শাখা কমিটিগুলো এগুলো নিয়ে কাজ করছে, মামলা করছে।”
নারী প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সরকার বা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজেও সন্তুষ্ট নন বলে জানান মিসেস খানম।
নারী নির্যাতন প্রতিরোধে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রমে হতাশা প্রকাশ করলেও মিসেস খানম মনে করেন এ ধরনের বাহিনীগুলোকেই এ সব ঘটনা প্রতিরোধে সক্রিয় ও দক্ষ করে তুলতে হবে।
মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে দেয়া তিনি নানা প্রস্তাবও দেন যেগুলো তিনি মনে করেন নারীর প্রতি সহিংসতা কমিয়ে আনতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, “ধর্ষণ বিষয়ে আইন সংশোধন করা, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরও তৎপর হওয়া এবং সাক্ষীর সুরক্ষা নিশ্চিত করা দরকার। মামলা অনেক ঝুলে আছে, ডিএনও পরীক্ষা নিশ্চিত করা এবং অপরাধ প্রমাণের বোঝা এখনো নারীর উপর সেটাও পরিবর্তন করা দরকার।”
ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাওয়া ছাড়াও নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলোর বিষয়ে মহিলা পরিষদের দেয়া তথ্যগুলোর বিষয়ে কথা বলেছিলাম মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিকুল ইসলামের সাথে।
তিনি জানান মহিলা পরিষদের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
“পরীক্ষা করে দেখবো কি কি পদক্ষেপ নেয়া যায়, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এবং মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের আরও তৎপর হওয়ার বিষয়টিও আমরা দেখবো।”
মি. ইসলাম অবশ্য বলেন সাধারণত এসব বিষয়ে তথ্যের জন্য তারা পুলিশের রিপোর্ট ও মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব ব্যবস্থার উপর নির্ভর করেন। এর বাইরেও কোন সূত্র থেকে তথ্য পেলেও সেটিও তারা বিবেচনায় নিয়ে ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন।
তবে মহিলা পরিষদ বলছে, এ সব পদক্ষেপ সত্ত্বেও বিভিন্ন কারণে নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুরা ন্যায়বিচার পাওয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
সেক্ষেত্রে প্রশাসনের উপর রাজনৈতিক প্রভাবকেই সংস্থাটি অন্যতম বাধা হিসেবে বিবেচনা করছে।
সূত্রঃ বিবিসি