যথাযোগ্য ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও ইবাদত বন্দেগীর মধ্যদিয়ে পালন করা হলো পবিত্র লাইলাতুল কদর। মহাগ্রন্থ আল কোরআনে বলা হয়েছে- এ রজনী হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। তাই ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা কাটান বিনিদ্র রজনী। পুরো রাত জেগে থেকে পবিত্র শবে কদরের নামাজ আদায় ছাড়াও কোরআন তিলাওয়াত ও জিকির-আজকার করেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। রাত জেগে ইবাদত বন্দেগি ছাড়াও অনেকে কবরস্থানে গিয়ে প্রয়াত মা-বাবা, আত্মীয়স্বজনের কবর জিয়ারত করে তাদের আত্মার শান্তির জন্য দোয়া করেন। এ শবে কদর মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে অত্যন্ত মহিমান্বিত একটি রাত। কারণ- এ রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে উত্তম। তাই তারাবিহর নামাজের পর থেকেই সেহরি পর্যন্ত সারাদেশের মসজিদে মসজিদে ওয়াজ মাহফিল, নামাজ ও জিকির আজকার করা হয়। এতে বিভিন্ন শ্রেণি, পেশা ও সব বয়সের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা অংশ নেন। সেহরির পূর্বে বিশেষ মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হয় মুমিন মুসলমানদের ইবাদত বন্দেগি।
মহিমান্বিত এ রজনীতে মহান আল্লাহ্তায়ালা পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ করেছেন। হেরা গুহায় ধ্যানরত রাসূলে পাক (সাঃ)-এর কাছে প্রথম পৌঁছান মুক্তির বাণী ‘ইক্রা বিস্মি রাব্বিকাল্লাজি খালাক’। আর এ রাতের মহিমা বর্ণনা করতে গিয়ে কোরআন শরীফে সূরা কদরে স্বয়ং আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন বলেছেন, ‘লাইলাতুল কাদরি খাইরুম মিন আলফি শাহ্র’। অর্থাৎ হাজার মাসের চেয়ে সর্বোত্তম এ রাত।
এ রাতে শেষ আসমানে এসে আল্লাহ্পাক তার বান্দাদের উদ্দেশে বলতে থাকেন, তোমাদের মাঝে এমন কে আছো, যে আমার কাছে নাজাত চাও? কল্যাণ চাও? তোমাদের মধ্যে কে আছো, যে মুক্তি চাও? আল্লাহ্র এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে রহমত, বরকত ও মাগফিরাত লাভের আশায় লাইলাতুল কদরে মুসলমানরা আজ সারা রাত ইবাদত-বন্দেগির মধ্যদিয়ে কাটাচ্ছেন।
প্রতিবছরের মতো এবারও কদরের রাতটি ফিরে এসেছে রোজাদারদের জন্য। সৌভাগ্যবশত, এবার জুমাতুল বিদার রাতেই পবিত্র শবে কদর এসেছিল। সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে সওয়াব হাসিল ও গুনাহ মাফের রাত হিসেবে শবে কদরের ফজিলত অতুলনীয়। এ রাতে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছিল এবং এ রাতকে কেন্দ্র করেই ক্কদর- নামে একটি সূরাও অবতীর্ণ হয়েছে। হাদিস অনুযায়ী, ২০ রমজানের পর যেকোনো বিজোড় রাতে পবিত্র লাইলাতুল কদর হতে পারে। তবে ২৬ রমজান দিবাগত রাতেই শবে কদর আসে বলে বিশিষ্ট আলেমদের অভিমত। তাই সাধারণত এ রাতেই পবিত্র শবে কদর পালন করা হয়ে আসছে।
ইসলাম ধর্মে বলা হয়েছে, অন্যান্য সময় এক হাজার মাস ইবাদত করলে যে সওয়াব পাওয়া যাবে, কদরের এই এক রাতের ইবাদতে তার চেয়েও অনেব বেশি সওয়াব হাসিল করা সম্ভব। তাই শবে কদরের রাতটিতে মুসলমান সম্প্রদায় মহান আল্লাহপাকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা ও পুণ্য লাভের আশায় নফল নামাজ আদায়, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার করে অতিবাহিত করেছেন। এ উপলক্ষে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ওয়াজ মাহফিল, দোয়া ও বিশেষ মোনাজাত হয়। সারারাত মুসল্লিরা জিকির-আজকার করেন।