পলাশ প্রধানঃ শিল্প নগরী টঙ্গীর বিভিন্ন স্থানে বেড়ে চলেছে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা। ফলে ভেস্তে যেতে বসেছে সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা কার্যক্রম। শিশুশ্রমের প্রধান কারণ দারিদ্র্য। দারিদ্র্যের কারণে এসব শিশু শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। শিশুদের স্কুলে নিয়ে আসা এবং ধরে রাখার জন্য ব্যাপকহারে উপ-বৃত্তি প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি থাকলেও গাজীপুর জেলা শিক্ষা বিভাগে তেমন কোন কার্যকরী ভূমিকা চোখে পড়ছে না। ফলে যে বয়সে শিশুদের স্কুলে যাওয়ার কথা সে বয়সের শিশুরা বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ ও অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ছে।
দরিদ্রতার জালে আবদ্ধ এসব শিশু বিভিন্ন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী, ক্ষুদ্র কারখানা, হোটেল, রেস্তোরাঁ, চা-দোকান, ইটের ভাটা, ওয়ার্কসপ, ফার্নিচার, মিলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কঠোর পরিশ্রমের কাজ করছে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে। নসিমন-করিমন, রিকশা, ভ্যান চালানো, বাস-ট্রাক, পিকআপ ও বিভিন্ন ধরনের গাড়ির হেলপার, ইট পাথর ভাঙা, ওয়েল্ডিং'র কাজসহ নানা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। বিশেষ করে টঙ্গীর বিসিক শিল্প এলাকার অধিকাংশ শিশুই স্কুলে যায় না। একদিকে পরিবারের দারিদ্র্য অপরদিকে এসব এলাকায় প্রাইমারি স্কুল খুবই কম। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় শিশু ৫-৬ কিলোমিটার পথ হেঁটে স্কুলে আসা-যাওয়া করে। এসব এলাকার অধিকাংশ শিশুরা অল্প বয়সে লেখাপড়ার পরিবর্তে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে।
দারিদ্র্যের কারণে গাজীপুর মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের দিনের পর দিন অস্বাভাবিকভাবে শিশু শ্রমিকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ হলেও গাজীপুর মহানগরীর শিল্পনগরীর টঙ্গীতে এ আইন লঙ্ঘন হচ্ছে। ফলে লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকারও। এ জেলায় দারিদ্র্যসীমার নিচে এখনও বহুলোক বসবাস করছে। তাছাড়া পরিবার পরিকল্পনার বড় ধরনের প্রচার থাকলেও তা বাস্তবায়ন খুবই কম। যার কারণে জনসংখ্যার হারও বেড়ে চলেছে। প্রতি বছরই দারিদ্র্যের কারণে শত শত শিশু স্কুল থেকে ঝরে পড়ে। তাদের বেশিরভাগ পিতা-মাতা দরিদ্র ও নিরক্ষর।
টঙ্গীর শিল্পনগরীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে শত শত শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে দেখা গেছে। এ সময় কথা হয় কয়েকজনের সাথে। তার মধ্যে মেহেনাজ কাটলারীজ, মুনিয়া কাটলারীজ, শারমিন কাটলারীজ, ইকবাল কাটলারীজ, নাজমা কাটলারীজ, উসমান কাটলারীজ, রাকিব কাটলারীজ, জিন্স কালেকশন ওয়াশিং, শ্বপনা ফুট, ১নং চিটাগাং মেটাল, ১নং নিউ চিটাগাং মেটাল, ঢাকা ফ্যাশন, খাঁন ফ্যাশন, আর.এম এন্টারপ্রাইজ, মুমেনা কাটলারীজ, ফরহাদ কাটলারীজসহ শতাধিক প্রতিষ্ঠান।
এবিষয়ে মুমেনা কাটলারীজের মালিক মোঃ মুমেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি গাজীপুর অনলাইনকে বলেন, এসব ছোট ছোট শিশুদের রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে আনা হয়েছে। তাদের অধিকাংশ ছেলে মেয়েদের বাবা-মা নেই। এসব পথ শিশু মাদকের সমাজ থেকে আমি উদ্ধার করে চাকরী দিয়ে জীবিকা নির্বাহের সন্ধানের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তবে এবিষয়ে যদি সরকার আমাকে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেন, তাহলে আমি তাই মাথা পেতে গ্রহন করে নিব।
মাছিমপুর এলাকার নাজমা কাটারিজ কোকারীজের সাইফুল্লা (৮) নামে এক শ্রমিকের সাথে কথা বলে জানা য়ায়, 'বাবা জন্মের পূর্বে মারা গেছেন, মা বাড়িতে অসুস্থ। আমি কাটারিজ কোকারীজের কাজ করে প্রতি মাসে ২৫০০ টাকা পাই। এই টাকায় সংসার চলে।' আমার লেখাপড়া করার অনেক স্বপ্ন ছিল। টাকার অভাবে তা পূরণ করতে পারি নাই। লেখাপড়া করার জন্য জানতে চাইলে তারা জানায়, স্কুলে গেলে মায়ের ওষুদের টাকা কে দেবে, খাব কি? আগে পেট বাঁচাতে হবে।
সূত্র মতে, সরকার ৬-১০ বছর বয়সী শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক এবং অবৈতনিক শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য ও উপবৃত্তি প্রকল্প চালু করলেও বেশির ভাগ এলাকায় শিশুদের ব্যাপকভাবে শিক্ষামুখী করা যাচ্ছে না মূলত নানা কারণে।
এবিষয়ে শিল্পনগরীর বিশিষ্ট শিক্ষা অনুরাগী আসাদ সিদ্দিকীর সাথে যোগযোগ করা হলে তিনি বলেন, শিশুশ্রম বন্ধের করে সরকার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা কার্যক্রম বৃদ্ধি করা উচিত।
এ ব্যাপারে গাজীপুর জেলা প্রাথমিক থানা সহকারী শিক্ষা অফিসার শিখা বিশ্বাস জানান, শিক্ষা বিভাগ সর্বশক্তি ও জনবল নিয়োগ করে কাজ করে যাচ্ছে। তবে শিল্পনগরীর টঙ্গীতে শিশুশ্রম হচ্ছে তা আমার জানা নেই। হয়ত ঈদের লম্বা ছুটিতে টাকার জন্য চাকরী করতে পারে। তাছাড়া এর চেয়ে বড় ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।