শুক্রবার লজ্জাজনক এক হার দেশকে উপহার দিয়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ১৭৭ রানের বড় ব্যবধানে হারতে হয়েছে হাথুরুসিংহের শিষ্যদের। এই জয়ে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ নিশ্চিত করেছে স্বাগতিকরা। আর টানা হারের পরিসংখ্যান আরেকটু ভারী করেছেন মুশফিকরা।
প্রথমে ব্যাট করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ ২৪৭ রান। এর জবাবে ৪২ রানেই নেই বাংলাদেশের ৩ উইকেট। আর ৭০ রানে অলআউট! তামিমের ৩৭ রান ছাড়া বাকি স্কোরগুলো মোবাইল ডিজিট বললে ভুল হবে না। ৭, ১, ৪, ৬, ০, ৬, ২, ২, ০, ০- এই হল বাকি ব্যাটসম্যানদের স্কোর। ভাগ্যকে ধন্যবাদ! শঙ্ক ছিল সর্বনিম্ন রানে অলআউট হওয়ার। কিন্তু শেষ অবধি তা থেকে পরিত্রাণ মিলেছে। দেশের মাটিতে এই ওয়েষ্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই ২০১১ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপে ৫৮ রানে অলআউট হওয়ার লজ্জায় পড়েছিল বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে কয়েকমাস আগেও হোম সিরিজে সেই ৫৮ রানেই অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। এবারে অন্তত ওই লজ্জার পুনরাবৃত্তি করেননি মুশফিকরা!
শামসুর রহমান-মুশফিকুর রহিম-মাহমুদ উল্লাহ রিয়াদ-তামিম ইকবাল-নাসির হোসেন-সোহাগ গাজী যেন ব্যাট করতে ভুলেই গেছেন। শামসুরের বিদায়ের পর চিত্রনাট্য যে এতো ভয়াবহ হবে সেটা কেউই বোধকরি অনুমান করতে পারেননি। কেননা তখনও ক্রিজে তামিম ইকবাল থেকে গেছেন; সঙ্গে অধিনায়ক মুশফিক। ভরসা দেওয়ার মতোই ব্যাটসম্যান তারা। কিছু একটা হয়তো হবে, এমন ভরসায় থাকা যায় তামিম-মুশফিকের ব্যাটিংয়ে থাকলে। কিন্তু অভিজ্ঞ এই দুই ক্রিকেটার যেভাবে আউট হয়েছেন তা রীতিমতো বিস্ময়কর।
মুশফিক সুনিল নারিণকে খেলতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন। যে কোন আনাড়ি ক্রিকেটারও এমন ভুল করবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়। মুশফিকের অবস্থা আরও শোচনীয়। আউট হওয়ার আগে খেলেছেন ১৬ বলে ৬ রানের বিরক্তিকর ইনিংস। অধিনায়ককে হারিয়ে রিয়াদ-তামিম হয়তো ড্রেসিং রুমের কথা একটু বেশিই ভেবেছেন। এমনটা মনে হতে পারে কারণ এই দুই ব্যাটসম্যান মুশফিকের আউটের পর আর কোন রান যোগ না করেই ড্রেসিংরুমের পথ ধরেছেন। তামিম অবশ্য দলের পক্ষে সর্বোচ্চ স্কোরার। ৫০ বলে তিনি করেছেন ৩৭ রান।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের মধ্যে সুনীল নারিন ও কেমার রোচ সর্বোচ্চ ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন। এছাড়া রবি রামপাল ২টি ও হোল্ডার একটি উইকেট নিয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নামার আগে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৪৭ রান সংগ্রহ করেছে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৮ রান করেছেন ওপেনার ক্রিস গেইল। এছাড়া ড্যারেন ব্রাভো ৫৩ এবং ল্যান্ডল সিমন্স ৪০ রান করেছেন। বাংলাদেশের পক্ষে মাশরাফি বিন মর্তুজা ৩টি এবং আল আমিন হোসেন ২টি উইকেট নিয়েছেন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও সোহাগ গাজী ১টি করে উইকেট নিয়েছেন।
তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে শুক্রবার টস জিতে আগে ফিল্ডিং বেছে নেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। ম্যাচের শুরুতে আল-আমিন ব্রেকথ্রো এনে দিয়েছেন দলকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপেনার ক্রিক এডওয়ার্ডসকে রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় করেছেন এই তরুণ পেসার। ম্যাচে ৬০ রান খরচায় ২টি উইকেট দখল করেছেন আল আমিন। ম্যাচের শেষ দিকে অসাধারণ বোলিং করেছেন মাশরাফি। ৩৯ রান খরচায় তিনি নিয়েছেন ৩ উইকেট।
প্রথম ম্যাচে ব্যর্থ হওয়া ক্রিস গেইল দ্বিতীয় ম্যাচে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন। এক বছর পর ওয়ানডে ক্রিকেটে হাফসেঞ্চুরি করেছেন এই গেইল। তবে গেইল ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগেই তাকে সাজঘরে ফিরিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই হার্ডহিটিং ব্যাটসম্যানকে সোহাগ গাজীর ক্যাচে পরিণত করে মুশফিককে চিন্তামুক্ত করেছেন রিয়াদ। গেইল আউট হয়েছেন ৬৭ বলে ৫৮ রান করে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৬তম হাফসেঞ্চুরিও করেছেন গেইল। মাশরাফির বলে সিঙ্গেল নিয়ে ৬১ বলে তিনি এই মাইলফলকে পৌঁছেন। ৩ চার এবং ৪ ছয়ে পূর্ণ করেছেন হাফসেঞ্চুরি।
গেইল আউট হওয়ার পর ড্যারেন ব্রাভো তার ক্যারিয়ারের ১৬তম হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন। তিনি ৭১ বল খেলে ২ চার ও এক ছয়ে ৫০ রান করেছেন। শেষ অবধি আরও ৩ রান যোগ করে সোহাগ গাজীর বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েছেন ব্রাভো। এরপর রামদিন ও সিমন্স মিলে এগিয়ে নিতে থাকেন দলীয় স্কোরকে। ভাল খেলতে থাকা রামদিন আল-আমিনের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হয়েছেন। ৫১ বলে ৩৪ রান করে মুশফিকের তালুবন্দী হয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। প্রথম ম্যাচের সেরা পারফরমার কিরণ পোলার্ড ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগেই তাকে ফিরিয়েছেন বাংলাদেশের সেরা পেসার মাশরাফি। ২০ বলে ২৭ রান করে মাশরাফির বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরেছেন এই হার্ডহিটার। ৪৯তম ওভারে কারিশমা দেখিয়েছেন মাশরাফি। তার করা তৃতীয় বলে সাজঘরে ফিরে গেছেন সিমন্স। মাশরাফির ডেলিভারি সজোরে মারতে গিয়ে রিয়াদের তালুবন্দী হয়েছেন সিমন্স; আউট হওয়ার আগে ৪০ রান করেছেন ৬১ বল খেলে। পরের বলে আবার উইকেট পেয়েছেন মাশরাফি। এবারে ডোয়াইন ব্রাভোকে মুশফিকের তালুবন্দি করেছেন তিনি। ম্যাচের শেষ ওভারে সুনিল নারিন ও হোল্ডার আল-আমিনকে বেধড়ক পিটিয়ে দলীয় স্কোর ২৪৭ রানে টেনে নিয়েছেন।
ম্যাচে মোট ৬ জন বোলার ব্যবহার করেছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। এই ম্যাচে দলে ফেরা বামহাতি স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক কোন উইকেট নিতে পারেননি। তিনি ১০ ওভার বল করে ৪৩ রান খরচায় উইকেট শুন্য থেকেছেন।