ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের বর্বর হামলার প্রতিবাদে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ যখন সোচ্চার তখন সেই দলে শামিল হলেন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। অজস্র ঘৃণা আর ধিক্কার জানানোর পাশাপাশি দলটির লাখ-লাখ কর্মী কালো পতাকা হাতে বৃষ্টিভেজা ঢাকার রাস্তায় নেমে আসেন ইসরাইলি এ বর্বরতার প্রতিবাদে। আর এতে বিশ্ব দেখলো গাজায় ইসরাইলের হামলার বিরুদ্ধে ঢাকার রাস্তায় নেমে আসা জনস্রোত।
বিএনপি’র এ প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়ে সরকারের নানা টালবাহানা আর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অনুমতি দেয়া না দেয়ার দোলাচলে সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকেরই আশঙ্কা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মিছিলের অনুমতিকে সম্মতি দিলে সেই আশঙ্কা কমে যায়। কিন্তু সাধারণ মানুষ পুলিশের শেষ মুহূর্তে অনুমতি দেয়াতে বিস্ময় প্রকাশ করতেও ভুল করেননি।
অবশেষে নানা শঙ্কা কাটিয়ে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের বর্বর হামলার প্রতিবাদে রাজধানীতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের কালো পতাকা মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। মিছিলে লাখ লাখ বিএনপি কর্মী গাজায় ইসরাইলি হামালার প্রতিবাদে ধিক্কার ও নিন্দা জানান।
শনিবার বিকাল পৌনে চারটার দিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মিছিলের আগে বক্তব্য প্রদান করেন। এর পরপরই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের নেতৃতে কালো পতাকা নিয়ে লাখ-লাখ নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে মিছিলটি নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়। এসময় মিছিলে ২০ দলীয় জোটের লক্ষাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন।
এর আগে দুপুরেই নেতাকর্মীদের পদচারণায় জনসমুদ্রে পরিণত হয় গোটা নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকা। রাজধানীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা ব্যানার, ফেস্টুন ও কালো পতাকা নিয়ে মিছিলে অংশ নেন। তবে সেখানে পুলিশের অবস্থান থাকলেও তেমন বাধা সৃষ্টি করা হয়নি।
প্রতিবাদ কর্মসূচি উপলক্ষে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কয়েকটি পিক আপ থামিয়ে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করা হয়। সেখান থেকে মাইকের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের একসাথে জড়ো করা হয়। সেইসাথে মিছিলের শৃংখলার স্বার্থে প্রথমে বিএনপি ও যুবদল, এরপর জাতীয় পার্টি (জাফর), পরে ক্রমান্বয়ে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোট, জাগপা, জাতীয় পার্টি (পার্থ), কল্যাণ পার্টি, লেবার পার্টিসহ একে একে ২০ দলীয় জোটের নেতাদের অবস্থান করতে বলা হয়।
কালো পতাকা মিছিলকে কেন্দ্র করে পল্টন এলাকার ফকিরাপুল মোড় থেকে নাইটেঙ্গেল মোড় পর্যন্ত রাস্তার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসময় আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে খুবই সতর্কতাবস্থায় দেখা যায়। তবে তারা কোন বাধা সৃষ্টি করেনি।
মিছিলে অংশ নেয়া নেতাকর্মীরা গাজায় ইসরাইলি হামলার নিন্দা জানানোর পাশাপাশি সরকারের সমালোচনা করে বিভিন্ন স্লোগান দেন। কালো পতাকা মিছিলটি নয়াপল্টন বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড়, কাকরাইল, মালিবাগ হয়ে মগবাজার এলাকায় গিয়ে শেষ হয়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে মিছিলে অংশগ্রহণ করেন- দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, এনাম আহমেদ চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, সালাহউদ্দীন আহমেদ, যুবদলের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবীব উন নবী খান সোহেল, ছাত্রদল সভাপতি আব্দুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল প্রমুখ।
অন্যদিকে জোট নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মো. সেলিম উদ্দিন, কাজী জাফর আহমদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মোস্তফা জামান হায়দার, জাগপা সভাপতি সফিউল আলম প্রধান, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহীম বীর প্রতীক, জাপা প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জেবেল রহমান গানি, ইসলামিক পার্টির এডভোকেট আব্দুল মোবিনসহ ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা।
মিছিল পূর্ব সমাবেশে বক্তারা গাজায় ইসরাইলি বর্বর হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। এবং সেই সাথে হামলা বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার জন্য বিশ্ববাসীর প্রতি আহবান জানান।