আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান ‘অবৈধ সরকার’কে হটাতে নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতে বলেছেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নেতারা। তারা বলেন, বিএনপি’র এ লড়াই দেশের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারকে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করা হবে।
জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার প্রতিবাদে মঙ্গলবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বৃষ্টিভেজা সমাবেশে ২০ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ এ আহ্বান জানান।
ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, জামায়াতের নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি শফিউল আলম প্রধানসহ ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা।
মির্জা আলমগীর বলেন, শুধুমাত্র সম্প্রচার নীতিমালা নয়- বরং আজ বাংলাদেশের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা নিয়ে সবার মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের অস্তিত্ব টিকে থাকবে কিনা, এদেশের গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্ব থাকবে কিনা- তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ বাকশাল কায়েমের চক্রান্ত করছে। জনগণের অধিকার হরণ করতেই সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের মুখ থেকে আগে গণতন্ত্রের ফেনা বের হলেও এখন তাদের আসল চেহারা উন্মোচিত হতে শুরু করেছে। তাদের আসল চেহারা, তাদের প্রকৃত মুখোশ বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। তাদের নেতারা বলতে শুরু করেছেন, গণতন্ত্র থাকলে নাকি দেশের উন্নয়ন হয় না।
এ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে সবাইকে প্রস্তুত থাকার আহ্বানও জানান তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, জনগণের সামনে অন্যায় ও অপকর্মের মুখোশ উন্মোচন হওয়ার ভয়েই সম্প্রচার নীতিমালার নামে গণবিরোধী একটি নীতিমালা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সম্প্রচার নীতিমালার নামে যে গণবিরোধী নীতিমালা সরকার করেছে তার উদ্দেশ্য হলো জনগণকে কথা বলতে না দেয়া। তাদের ভয় জনগণ কথা বললে তাদের মুখোশ উন্মোচন হয়ে যেতে পারে। এটি কেবল কণ্ঠরোধ নয়, সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেয়ার শামিল।
সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল উঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত সরকারের দূরভিসন্ধিমূলক আচরণের পরিচয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ।
তিনি বলেন, সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্ত চরম অনৈতিক। এ দেশের মানুষ এটা বাস্তবায়ন হতে দেবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, নেতাকর্মীদের দিকে পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে বেশিদিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না শেখ হাসিনা। ঐক্যবদ্ধ বৃহত্তর অন্দোলনের ডাক দিয়ে সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আইনজীবী ও সাংবাদিকসহ সমগ্র জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলে শেখ হাসিনাকে হটিয়ে দিতে হবে। আন্দোলন ছাড়া শেখ হাসিনাকে সরানো যাবে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সরকার তার ইচ্ছা অনুযায়ী মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে। আদালত নিয়ন্ত্রণের জন্য সংবিধানে সংশোধন আনছে। এসবকিছুই অবৈধ। আর এ অবৈধ সরকারের কোনো বৈধতা নেই। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনই অবৈধ সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে পারে।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, এ সরকারই প্রথম বিটিভির সংবাদ বেসরকারি চ্যানেলগুলোকে প্রচারে বাধ্য করেছে। এখন তারা প্রাইভেট চ্যানেলগুলোকেই বিটিভির মত করতে চায়।
তিনি বলেন, কোনো বিবেকবান সাংবাদিক এটি মেনে নেবে না। খালেদা জিয়ার নেতত্বে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলে এ গণবিরোধী সম্প্রচার নীতিমালা প্রত্যাহার করতে সরকারকে বাধ্য করা হবে।
তিনি বলেন, নেতাকর্মীদের দিকে পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে বেশিদিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না শেখ হাসিনার সরকার। তাই এ সরকারকে হঠাতে হলে প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ বৃহত্তর অন্দোলন।
জামায়াতের নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, বর্তমান সরকার ভুয়া। এ সরকারের হাতে গণতন্ত্র নিরাপদ না। তারা সংবাদ মাধ্যমের টুটি চেপে ধরে গুম, খুন ও হত্যার খবর প্রচার বন্ধ করতে চাচ্ছে। বিচারকদের অভিশংসন ক্ষমতা দলের হাতে নিয়ে দেশের বিচার ব্যবস্থাকে হত্যা করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকারকে দেশের জনগণ মানে না। বিশ্বের রাষ্ট্র প্রধানরা মানেন না। জাতিসংঘ মানে না। যারা দেশের জনগণ ও বিশ্বের নেতাদের কথা শোনে না তারা ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। এমনকি এ সরকারের হাতে নারী, শিশু, তরুণ, যুবক কেউই নিরাপদ নয়।
তিনি বলেন, সরকার ৮০ বছরের বৃদ্ধ লোককে জেলে নির্যাতন করেছে, কলেজের শিক্ষার্থীদের ধরে জেলে নিয়েছে। জামায়াতকে নেতৃত্ব শূন্য করতে জামায়াত নেতা ড. মাসুদসহ নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে রিমান্ডের নামে নির্যাতন করছে।
বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ সরকারের কাছে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, সরকার সংবাদ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করে বিভ্রান্তকর তথ্য প্রচার রোধ করতে চাই বলে দাবি করছে। কিন্তু সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড, শেয়ারবাজার লুট, নারায়ণগঞ্জের সাত খুন এবং শাপলা চত্তরে মুসলমানদের হত্যা কি বিভ্রান্তকর তথ্য?
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি শফিউল আলম প্রধান বলেন, স্বাধীন দেশে এখন দিল্লির কৃতদাস সরকার ক্ষমতায় রয়েছে।
শেখ হাসিনাকে কৃতদাস আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, তিনি তার দেশের স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের দিকে আঙ্গুল দেখানোর সাহস দেখিয়েছেন। শেখ মুজিবের লাশ যারা বঙ্গোপসাগরে নিক্ষেপ করতে চেয়েছিল- তারাই এখন শেখ হাসিনার চারপাশ ঘিরে রেখেছে।
সমাবেশের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের সভাপতি মাওলানা আব্দুল মালেক। শুরুতেই বক্তব্য দেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি আতিকুর রহমান আতিক।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণে শেষ পর্যন্ত তিনি আসেননি।
মঙ্গলবার দুপুর ৩টার দিকে এ সমাবেশ শুরু হয়। তবে দুপুর ১টা থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মহানগর বিএনপি নেতাকর্মীরা ছোট ছোট মিছিল নিয়ে উদ্যানে জড়ো হতে শুরু করেন।
এর আগে সোমবার শর্তসাপেক্ষে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলকে সমাবেশ করার অনুমতি দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ।
গত ১১ আগস্ট বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ১২ আগস্ট ২০ দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। পরে জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার প্রতিবাদে সমাবেশসহ ১৫ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।