ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্ক ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে দেশীয় ইলেকট্রনিক মিডিয়া। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই বিদেশী চ্যানেল সম্প্রচারসহ দেশীয় টিভি মালিকদের কাছ থেকে বেআইনিভাবে বিশাল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে কিছু অসাধু ক্যাবল অপারেটর ব্যবসায়ী। এতে চরম হুমকির মুখে পড়েছে দেশীয় ইলেকট্রনিক মিডিয়া।
সূত্র মতে, দেশীয় অনুমোদিত চ্যানেলগুলোর বেশির ভাগই ক্যাবল অপারেটরদের হাতে জিম্মি। বিশেষ করে রাজধানীর ঢাকায় ক্যাবল অপারেটরদের ইচ্ছায় অনিচ্ছার উপর নির্ভর করছে প্রতিটি টিভির সম্প্রচার। রাজধানীতে চ্যানেল সম্প্রচার করার জন্য অপারেটরদের নিয়মিত টাকা দিয়ে হয়। কোন টিভি কর্তৃপক্ষ টাকা পরিশোধ না করলে ঐ এলাকায় তাদের চ্যানেল বন্ধ করে রাখা হয়। অনেক ক্যাবল অপরাটের প্রকাশ্যেই রশিদের মাধ্যমে অর্থ আদায় করছেন বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক স্যাটেলাইট চ্যানেল কর্তৃপক্ষ। একই অবস্থা জেলা ও উপজেলা শহরগুলোতে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কতিপয় ক্যাবল কোম্পানীর সিন্ডিকেট মূলত অস্থির করে তুলেছে পুরো স্যাটেলাইট অঙ্গন। এর মধ্য বেঙ্গল কমিউনিকেশন, ইউসিএস, ডিজি ২১ উল্লেখযোগ্য। এসব অপারেটর মালিকগণ চ্যানেলগুলোর কাছ থেকে বাৎসরিক চার্জের নামে নগদ টাকা আদায় করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচার করার ক্ষেত্রে বিদেশে অর্থ প্রেরনের জন্য সরকারের অনুমতির বিধান আইনে থাকলেও বেশিরভাগ বিদেশী চ্যানেল প্রচার করছে একাধিক ক্যাবল অপারেটর নেটওয়ার্ক। এছাড়া ক্যাবল অপারেটরগণ তাদের নেটওয়ার্কে বিদেশী সিনেমার একটি নিজস্ব চ্যানেল খুলে দেশীয় আঞ্চলিক বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করছে, যা থেকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্যাবল অপারেটরদের এ ধরণের অরাজকতা ফলে দেশীয় সংস্কৃতির সুস্থ বিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দর্শকরা। অতি মুনাফা লোভী ক্যাবল ব্যবসায়ীদের কারণে বিদেশী চ্যানেল ঢুকে পড়ায় দেশে যুব সমাজের ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। ক্যাবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন-২০০৬ কে পাস কাটিয়ে অনুমোদনহীন নিষিদ্ধ টিভি চ্যানেল ডাউনলিংক করে ক্যাবল অপারেটররা সঞ্চালন করছে।
ক্যাবল অপরাটেরটের অরাজকতায় প্রশ্ন উঠেছে নিয়ন্ত্রক তথ্য মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা নিয়ে। দেশের ক্যাবল টিভি/ডিশ অপারেটরদের ব্যবসায় সুশাসন, বিদেশি চ্যানেলের অবাধ প্রচার নিয়ন্ত্রণে ২০০৬ সালে ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন পাশ করা হয়। আইন অনুযায়ী, সরকারের অনুমোদিত বেসরকারী চ্যানেলসমূহ প্রাইম ব্যা- অেথ্যাৎ দেশীয় দর্শকগণ যাতে দেখতে পারেন তার জন্য সরকারী চ্যানেলের পরপরই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্প্রচার করার বাধ্যকতা রয়েছে। সরকারের নির্ধারিত অনুমোদন ব্যাতীত বিদেশী চ্যানেল সম্প্রচারের ক্ষেত্রে আইন দ্বারা বিধি নিষেধ রয়েছে। এর পরও দেশীয় সংস্কৃতির ধ্বংসকারী এসব ক্যাবল অপারেটরদের লাগাম টেনে ধরতে কোন ধরণের পদক্ষেপ নিচ্ছে না মন্ত্রণালয়।
এস ক্যাবল নেটওয়ার্কের স্বত্তাধিকারী ফজলুল হক জানান, দেশীয় টিভি চ্যানেলের কাছ থেকে কোন টাকা আদায় করি না। অন্য কোন প্রতিষ্ঠান আদায় করে কিনা ? আমরা জানা নেই।
তবে আইডিয়াল ক্যাবল নেটওয়ার্কের হাবিবুর রহমান বলেন ভিন্ন কথা। তিনি জানান, আমরা ব্যবসা করি। ব্যবসার খাতিরে টাকা নিতেই পারে। টিভি মালিকরাও ব্যবসায়ী। টিভি চ্যানেলগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে। ভালো জায়গা থাকতে তাদের ব্যবসায়িক কারণেই অনেক সময় টাকা দিয়ে থাকে। তবে জিম্মি করে নয়। উভয়েই ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তেই টাকা নেয়া হয়।
তিনি আরো জানান, নতুন কোন চ্যানেল আসলে, তাদের বাজার দখলে আসতে হলে বিভিন্ন ধরণের রিক্রুটমেন্ট লাগে। তাই তাদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়।
ক্যাবল টিভি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মীর হোসেন আখতার জানান, সব সেক্টরেই কিছু খারাপ লোক থাকে। চ্যানেল ব্যবসায়ীরা কেন টাকা দিচ্ছে। তারা না দিলে তো ক্যাবল মালিকরা নিতে পারবে না। কেউ দিয়ে থাকলে সেটা দু’ পক্ষের সমঝোতাই দেয়।
তিনি আরো বলেন, সরকারকে আমরা বার বার তাগিদ দিচ্ছি চ্যানেল মালিক ও ক্যাবল অপারেটরদের স্বার্থে মাসিক বা বাৎসরিক একটা ফি নির্ধারন করতে। কিন্তু সরকার কোন কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যেটা ভারতে আছে এবং ভারতের চ্যানেল মালিকরা দিয়ে আসছেন। অনেকে বলেন, ভারতে বাংলাদেশের চ্যানেল কেন চলে না- আপনি ফি না দিলে তারা কেন চালাবে?
অপরদিকে, অভিযোগের বিষয়ে বেঙ্গল কমিউনিকেশন, ইউসিএস, ডিজি ২১ এর কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।