মোঃ মুজিবুর রহমান: সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী চিরায়ত বাংলার মহীয়সী নারী বেগম শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব। সকলের কাছে হীরক-উজ্জ্বল হয়ে ওঠা এক নারী বেগম শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব বেঁচে থাকলে আজ ৮ আগস্ট তিনি ৮৫ বছরে পা দিতেন। ৮ আগস্ট তাঁর ৮৪তম জন্মবার্ষিকী।
বেগম শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব একটি নাম। সাহসী বঙ্গমাতা। একটি ইতিহাস। মনেপ্রাণে একজন আদর্শ নারী। সন্তানদের সার্থক মাতা। শ্বশুর শাশুড়ির আদর্শ বধু । বিচক্ষণ উপদেষ্টা ও পরামর্শকারী, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের আদর্শ ভাবী । অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর সুখ-দুঃখের সাথী এবং বঙ্গবন্ধুর প্রেরণা ও শক্তির উৎস ছিলেন মহীয়সী নারী বেগম শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব। তিনি গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর ডাকনাম ছিল রেণু। বেগম শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব মাত্র তিন বছর বয়সে পিতা ও পাঁচ বছর বয়সে মাতা হারান। পিতার নাম শেখ জহুরুল হক এবং মাতার নাম হোসনে আরা বেগম। দুই বোনের মধ্যে ছোট ছিলেন তিনি। দাদা শেখ কাশেম। চাচাতো ভাই শেখ লুৎফর রহমানের পুত্র শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বেগম ফজিলাতুন্নেছার বিবাহ হয়। তখন থেকে বেগম ফজিলাতুন্নেছার শাশুড়ি বঙ্গবন্ধুর মাতা সায়েরা খাতুন নিজের সন্তানদের মাতৃস্নেহে লালন-পালন করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাত্রিতে জাতির পিতার হত্যাকারীদের হাতে তিনি নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়ে শাহাদাত বরণ করেন। ১৫ আগস্টের সেই দুঃসহ স্মৃতি ৩৯ বছর বয়ে বেড়াচ্ছেন তাঁর বড় কন্যা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও ছোট কন্যা শেখ রেহানা।
বেগম শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব প্রথমে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে ও পরবর্তীতে সামাজিক কারণে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়াশুনা করেন। তাঁর স্মৃতিশক্তি অত্যন্ত প্রখর ছিল। তিনি যে কোন পরিস্থিতি অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা, শান্ত, অসীম ধৈর্য ও সাহস নিয়ে মোকাবেলা করেছেন। তাঁর এ রকম মোকাবেলা করার ক্ষমতার সাথে দৃঢ়তা ছিল প্রবল। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত পরিবাবের সবার প্রতি ছিল সমদৃষ্টি। স্বামী যখন কলকাতায় থাকতেন বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছার সময় কাটত নানা রকম বই পড়ে। বেগম শেখ ফজিলাতুননেছা ছিলেন সঙ্গীতপ্রিয়। বঙ্গবন্ধু নিজেও ছিলেন সঙ্গীতপ্রিয়। গ্রামের বাড়িতে গ্রামোফোন ছিল, পর্যায়ক্রমে সঙ্গীতের সব রকম বাদ্যযন্ত্রই তিনি সংগ্রহ করেন। বঙ্গবন্ধু বার বার কারারুদ্ধ হলে বেগম মুজিবকে গৃহ-সামগ্রী বিক্রয় করতে হয়েছে। তিনি অনেক অলংকার বিক্রয় করেছেন, কিন্তু বাদ্যযন্ত্র আর গানের রের্কডগুলো কখনও হাতছাড়া করেননি। বাঙালির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পারিবারিক রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বেগম শেখ ফজিলাতুননেছা আড়াল থেকে সর্বান্তকরণে সহযোগিতা করেছেন। বেগম শেখ মুজিব নিজের জমির ধান বিক্রয় করে বঙ্গবন্ধুর ছাত্র জীবনের বিশেষ বিশেষ প্রয়োজনে তিনি আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছেন বলে অনেক প্রমাণ মিলেছে।
বঙ্গবন্ধু জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সময় কারান্তরালে কাটিয়েছেন বছরের পর বছর। তাঁর অবর্তমানে একজন সাধারণ গৃহবধূ হয়েও মামলা পরিচালনা, দলকে সংগঠিত করতে সহায়তা করা, আন্দোলন পরিচালনায় পরামর্শ দেয়াসহ প্রতিটি কাজে তিনি অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। আন্দোলনের সময়ও প্রতিটি ঘটনা জেলখানায় সাক্ষাৎকারের সময় বঙ্গবন্ধুকে জানাতেন। কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও নির্দেশ নিয়ে আসতেন, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে সে নির্দেশ জানাতেন। অন্যদিকে কারাগারে সাক্ষাত করে বঙ্গবন্ধুর মনোবল দৃঢ় রাখতেন। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে সংসার, সন্তান এবং বৃদ্ধ শ্বশুর শাশুড়িকে অবলম্বন করে ওই বিপদ সঙ্কুল দিনগুলোতে বেগম শেখ ফজিলাতুননেছা কেমন করে কালাতিপাত করেছেন ভাবলে বিস্মিত হতে হয়। এদিকে তাঁর মধুমাখা বিনয়পূর্ণ ব্যবহারে মুগ্ধ হয়েছে সবাই। সন্তানদের যেমনি ভালবেসেছে তেমনি শাসন করেছে। পিতা মাতা উভয়েরই কর্তব্য তিনি শেষ দিন পর্যন্ত পালন করে গেছেন। জীবনে কোন বৈষয়িক ও মোহ তাঁর ছিল না। তিনি ছিলেন একান্তভাবে সুরুচি সম্পন্ন মহিলা। নিজেকে শুধু সদা সর্বদা পরিপটি রাখতো না, তাঁর ঘর দুয়ার ছিল ছিমছাম, সুন্দর ও সুসজ্জিত। এদিকে ঘরেও আসবাবপত্রের বাহুল্য ছিল না। যতটুকু দরকার সেটুকু আসবাবপত্র ছিল। বেগম মুজিব ছিলেন কোমলে কঠোরে মিশ্রিত এক দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সাহসী নারী । মাতৃ ছাপটাই ছিল সে চরিত্রে বেশি। এই মহিয়সী নারীর স্নেহ, মায়ামমতা, দরদ আপ্যায়নের কথা আজও স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকরা অকৃত্রিম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। স্বামীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি সন্তানদের গড়ে তোলেন। তাঁর কাছে সহযোগিতা চেয়ে কেউ কখনও রিক্ত হস্তে ফিরে যায়নি। বেগম শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব অত্যন্ত দানশীল ছিলেন। আর্থিক দিক থেকে পশ্চাৎপদ লোকজনকে মুক্ত হস্তে দান করেছেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আদর্শ ভাবী হিসেবে কারাগারে আটক নেতাকর্মীদের খোঁজ খবর নেয়া থেকে শুরু করে পরিবার পরিজনদের যে কোন সংকটে পাশে দাঁড়াতেন তিনি। কন্যাদায়গ্রস্ত পিতাকে ও ছেলেমেয়েদের শিক্ষার জন্য তিনি সহযোগিতা করেছেন। বাংলাদেশের যতো মানুষ তাঁর কাছাকাছি গিয়েছেন সবার সাথেই ছিল তাঁর প্রাণের সম্পর্ক। অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে। দীক্ষা নিলেন স্বামীর দুঃখ-নির্যাতনপূর্ণ রাজনৈতিক সংগ্রামে। তারপর একবারও আর পেছনে ফিরে তাকাননি।
দেশপ্রেমের অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গেই বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আন্দোলন ও সংগ্রামে নিজেকে জড়িত রেখেছেন বেগম শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব। পাশাপাশি তিনি তাঁর স্বামীর রাজনীতিতে সবরকম সহায়তা দিতেন। অন্যদিকে তাঁর রাজনীতির একজন সক্রিয় কর্মীও ছিলেন। বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে তখন বাঙালি মুক্তির সনদ ছয় দফা কর্মসূচী ভিত্তিক লিফলেট বোরখা পরিহিত অবস্থায় বিভিন্ন স্থানে বিতরণ করতে দেখা গেছে এই নিরব বিপ্লবী কর্মীকে। তিনি যেখানে লিফলেটগুলো রেখে আসতেন সেখান থেকে ছাত্রলীগ কর্মী সংগ্রহ করে বিলি করতো।
বাঙালি জাতির সুদীর্ঘ স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতিটি পদক্ষেপে সক্রিয় সহযোগিতা করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতননেছা । ছায়ার মতো অনুসরণ করেছেন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন ও আদর্শকে বাস্তবায়ন করার জন্য। ১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধুকে প্রধান আসামী করে পঁয়ত্রিশ জন বাঙালি নৌ ও সেনাবাহিনীর সদস্য ও উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলাকে পাকিস্তানের সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে অভিহিত করে। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। বঙ্গবন্ধুসহ সকল রাজবন্দীদের মুক্তির দাবিতে বাঙালি রাস্তায় নামে। আগরতলা মামলা দায়ের করার পর তৎকালীন পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা বেগম ফজিলাতননেছাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গ্রেফতারের হুমকি দেয়। লাহোরে গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্য বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তি দেবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ বিষয়ে বেগম শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব জোরালো আপত্তি জানান এবং এক রকম প্রতিহত করেন। কেননা এই মহীয়সী নারী দেশের সার্বিক আন্দোলনের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাত করে তিনি সকল বিষয় অবহিত করেন। বাঙালিরা ঐক্যবদ্ধ, তাই বেগম মুজিবের দৃঢ় বিশ্বাস আগরতলা ষড়যন্ত্র নামে খ্যাত মামলা প্রত্যাহার করতেই হবে। বঙ্গবন্ধু যেন শক্ত থাকে সে বিষয়ে তিনি পরামর্শ দেন। বেগম ফজিলাতুননেছার গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান বেগবান হয়। প্রবল গণ-অভ্যুত্থানের মুখে বাঙালির মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমান মুক্ত হলেন ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯। পরের দিন ২৩ ফেব্রুয়ারি বাঙালিরা তাদের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দিয়ে বরণ করে নেয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয়টি মাস অসীম সাহস, দৃঢ় মনোবল ও ধৈর্য্য নিয়ে বেগম শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন। এমনকি ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ও ২৩ মার্চের পতাকা উত্তোলন বঙ্গবন্ধুর প্রধান উদ্দীপক ও পরামর্শক হিসেবে বিবেচনা করা য়ায় বেগম শেখ ফজিলাতুননেছাকে। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয়ের পর দিন ১৭ ডিসেম্বর তাঁর ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বন্দিদশার অবসান ঘটে। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু লন্ডনে যান। সেখান থেকে বেগম মুজিবের সঙ্গে তার প্রথম কথা হয়। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। অবসান ঘটে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছার দীর্ঘ প্রতীক্ষার। এরপর যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজেও বঙ্গবন্ধুর পাশে দাঁড়ান তিনি। অনেক বীরাঙ্গনাকে বিয়ে দিয়ে সামাজিকভাবে মর্যাদাসম্পন্ন জীবনদান করেন।
বেগম শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব জীবনে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেছেন, অনেক কষ্ট, দুর্ভোগ তাঁকে পোহাতে হয়েছে। তবুও বিনম্র চরিত্রের এই অসমান্য নারী কোনদিন কোনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেনি। আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তাঁর দর্দমনীয় সাহস ও ভ ূমিকার কথা প্রেরণার উৎস হিসেবে সকলের অন্তর ছুঁয়ে আছে। তাইতো বেগম শেখ ফজিলাতুননেছা এক অবিস্মরণীয় ও যুগান্তকারী নাম। দেশ ও জাতির জন্য তাঁর অপরিসীম ত্যাগ সহমর্মিতা, সহযোগিতা ও বিচক্ষণতা বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিবকে বঙ্গমাতায় অভিষিক্ত করেছে। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির পতœী হিসেবেও তিনি পাদ-প্রদীপের আলোতে আসতে প্রত্যাশী কখনও ছিলেন না। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাশে থেকে দেশ ও জাতির জন্য সেবা করে গেছেন এই মহিয়সী নারী বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিব।
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, শেখ ফজিলাতুননেছার মতো ধীরস্থির, বুদ্ধিদীপ্ত, দূরদর্শী , স্বামী অন্তপ্রাণ মহিলার সাহসী, বলিষ্ঠ, নির্লোভ ও নিষ্ঠাবান ইতিবাচক ভূমিকা শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু , বঙ্গপিতা বা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হতে সহায়তা করেছে। জনগণের কল্যাণে সমগ্র জীবন তিনি অকাতরে দুঃখবরণ এবং সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছেন। বেগম মুজিব দুর্ভাগ্যকে মাথায় নিয়ে স্বামী- তিন সন্তানের সঙ্গে মৃত্যুবরণ করেন।
ইতিহাসে গান্ধীপত্নী কস্তরী বাই, নেহরুপত্নী কমলা, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের পত্নী বাসন্তী দেবী, ম্যান্ডেলাপত্নী উইনি বিখ্যাত হয়ে আছেন স্বামীর সহযোদ্ধা হিসেবে। একইভাবে বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিবও ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
আগস্ট মাসেই আমরা হারিয়েছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে, হারিয়েছি বাঙালির উজ্জ্বল প্রতীক এক মহীয়সী নারী বেগম শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিবকে, হারিয়েছি শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু রাসেলসহ বৃহত্তর পরিবারের বঙ্গবন্ধুর পরিবারের অনেককে। বঙ্গবন্ধুর আজীবন সুখ-দুঃখের সঙ্গী মৃত্যুকালেও তার সঙ্গী হয়ে রইলেন। ইতিহাসে তাই বেগম শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব কেবল জাতির পিতার সহধর্মিণীই নন, বাঙালি মুক্তি সংগ্রামে অন্যতম এক স্মরণীয় অনুপ্রেরণাদাত্রী। বেগম শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব কিংবদন্তীর মতো বাঙালির মনের মনিকোঠায় প্রজ্বলিত মশাল হয়ে জ্বলছে। সর্বংসহা বাঙালি নারী হিসেবে শেখ ফজিলাতুননেছা বাঙালির হৃদয়ে মাতৃত্বের আসনে প্রতিষ্ঠিত। এই মহীয়সী নারী আমৃত্যু স্বামী বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে দেশ জাতি গঠনে বিপুল অবদান রেখেছেন বলেই দূরদর্শিতা, তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তা, বিচক্ষণতা, সাহসিকতা ও দেশপ্রেম তাঁকে বঙ্গবন্ধুর মতোই অমরত্ব দান করেছে। এক মহীয়সী নারী হিসেবে বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিবের অবিস্মরণীয় ভূমিকা বাঙালির অনিঃশেষ অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে চিরদিন।
বেগম শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিবের ৮৪তম জন্মবার্ষিকীতে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাই।
লেখক : কলেজ শিক্ষক, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক এবং আর্কাইভস ৭১- এর প্রতিষ্ঠাতা
বেগম শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব প্রথমে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে ও পরবর্তীতে সামাজিক কারণে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়াশুনা করেন। তাঁর স্মৃতিশক্তি অত্যন্ত প্রখর ছিল। তিনি যে কোন পরিস্থিতি অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা, শান্ত, অসীম ধৈর্য ও সাহস নিয়ে মোকাবেলা করেছেন। তাঁর এ রকম মোকাবেলা করার ক্ষমতার সাথে দৃঢ়তা ছিল প্রবল। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত পরিবাবের সবার প্রতি ছিল সমদৃষ্টি। স্বামী যখন কলকাতায় থাকতেন বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছার সময় কাটত নানা রকম বই পড়ে। বেগম শেখ ফজিলাতুননেছা ছিলেন সঙ্গীতপ্রিয়। বঙ্গবন্ধু নিজেও ছিলেন সঙ্গীতপ্রিয়। গ্রামের বাড়িতে গ্রামোফোন ছিল, পর্যায়ক্রমে সঙ্গীতের সব রকম বাদ্যযন্ত্রই তিনি সংগ্রহ করেন। বঙ্গবন্ধু বার বার কারারুদ্ধ হলে বেগম মুজিবকে গৃহ-সামগ্রী বিক্রয় করতে হয়েছে। তিনি অনেক অলংকার বিক্রয় করেছেন, কিন্তু বাদ্যযন্ত্র আর গানের রের্কডগুলো কখনও হাতছাড়া করেননি। বাঙালির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পারিবারিক রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বেগম শেখ ফজিলাতুননেছা আড়াল থেকে সর্বান্তকরণে সহযোগিতা করেছেন। বেগম শেখ মুজিব নিজের জমির ধান বিক্রয় করে বঙ্গবন্ধুর ছাত্র জীবনের বিশেষ বিশেষ প্রয়োজনে তিনি আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছেন বলে অনেক প্রমাণ মিলেছে।
বঙ্গবন্ধু জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সময় কারান্তরালে কাটিয়েছেন বছরের পর বছর। তাঁর অবর্তমানে একজন সাধারণ গৃহবধূ হয়েও মামলা পরিচালনা, দলকে সংগঠিত করতে সহায়তা করা, আন্দোলন পরিচালনায় পরামর্শ দেয়াসহ প্রতিটি কাজে তিনি অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। আন্দোলনের সময়ও প্রতিটি ঘটনা জেলখানায় সাক্ষাৎকারের সময় বঙ্গবন্ধুকে জানাতেন। কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও নির্দেশ নিয়ে আসতেন, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে সে নির্দেশ জানাতেন। অন্যদিকে কারাগারে সাক্ষাত করে বঙ্গবন্ধুর মনোবল দৃঢ় রাখতেন। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে সংসার, সন্তান এবং বৃদ্ধ শ্বশুর শাশুড়িকে অবলম্বন করে ওই বিপদ সঙ্কুল দিনগুলোতে বেগম শেখ ফজিলাতুননেছা কেমন করে কালাতিপাত করেছেন ভাবলে বিস্মিত হতে হয়। এদিকে তাঁর মধুমাখা বিনয়পূর্ণ ব্যবহারে মুগ্ধ হয়েছে সবাই। সন্তানদের যেমনি ভালবেসেছে তেমনি শাসন করেছে। পিতা মাতা উভয়েরই কর্তব্য তিনি শেষ দিন পর্যন্ত পালন করে গেছেন। জীবনে কোন বৈষয়িক ও মোহ তাঁর ছিল না। তিনি ছিলেন একান্তভাবে সুরুচি সম্পন্ন মহিলা। নিজেকে শুধু সদা সর্বদা পরিপটি রাখতো না, তাঁর ঘর দুয়ার ছিল ছিমছাম, সুন্দর ও সুসজ্জিত। এদিকে ঘরেও আসবাবপত্রের বাহুল্য ছিল না। যতটুকু দরকার সেটুকু আসবাবপত্র ছিল। বেগম মুজিব ছিলেন কোমলে কঠোরে মিশ্রিত এক দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সাহসী নারী । মাতৃ ছাপটাই ছিল সে চরিত্রে বেশি। এই মহিয়সী নারীর স্নেহ, মায়ামমতা, দরদ আপ্যায়নের কথা আজও স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকরা অকৃত্রিম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। স্বামীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি সন্তানদের গড়ে তোলেন। তাঁর কাছে সহযোগিতা চেয়ে কেউ কখনও রিক্ত হস্তে ফিরে যায়নি। বেগম শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব অত্যন্ত দানশীল ছিলেন। আর্থিক দিক থেকে পশ্চাৎপদ লোকজনকে মুক্ত হস্তে দান করেছেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আদর্শ ভাবী হিসেবে কারাগারে আটক নেতাকর্মীদের খোঁজ খবর নেয়া থেকে শুরু করে পরিবার পরিজনদের যে কোন সংকটে পাশে দাঁড়াতেন তিনি। কন্যাদায়গ্রস্ত পিতাকে ও ছেলেমেয়েদের শিক্ষার জন্য তিনি সহযোগিতা করেছেন। বাংলাদেশের যতো মানুষ তাঁর কাছাকাছি গিয়েছেন সবার সাথেই ছিল তাঁর প্রাণের সম্পর্ক। অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে। দীক্ষা নিলেন স্বামীর দুঃখ-নির্যাতনপূর্ণ রাজনৈতিক সংগ্রামে। তারপর একবারও আর পেছনে ফিরে তাকাননি।
দেশপ্রেমের অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গেই বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আন্দোলন ও সংগ্রামে নিজেকে জড়িত রেখেছেন বেগম শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব। পাশাপাশি তিনি তাঁর স্বামীর রাজনীতিতে সবরকম সহায়তা দিতেন। অন্যদিকে তাঁর রাজনীতির একজন সক্রিয় কর্মীও ছিলেন। বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে তখন বাঙালি মুক্তির সনদ ছয় দফা কর্মসূচী ভিত্তিক লিফলেট বোরখা পরিহিত অবস্থায় বিভিন্ন স্থানে বিতরণ করতে দেখা গেছে এই নিরব বিপ্লবী কর্মীকে। তিনি যেখানে লিফলেটগুলো রেখে আসতেন সেখান থেকে ছাত্রলীগ কর্মী সংগ্রহ করে বিলি করতো।
বাঙালি জাতির সুদীর্ঘ স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতিটি পদক্ষেপে সক্রিয় সহযোগিতা করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতননেছা । ছায়ার মতো অনুসরণ করেছেন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন ও আদর্শকে বাস্তবায়ন করার জন্য। ১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধুকে প্রধান আসামী করে পঁয়ত্রিশ জন বাঙালি নৌ ও সেনাবাহিনীর সদস্য ও উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলাকে পাকিস্তানের সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে অভিহিত করে। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। বঙ্গবন্ধুসহ সকল রাজবন্দীদের মুক্তির দাবিতে বাঙালি রাস্তায় নামে। আগরতলা মামলা দায়ের করার পর তৎকালীন পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা বেগম ফজিলাতননেছাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গ্রেফতারের হুমকি দেয়। লাহোরে গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্য বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তি দেবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ বিষয়ে বেগম শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব জোরালো আপত্তি জানান এবং এক রকম প্রতিহত করেন। কেননা এই মহীয়সী নারী দেশের সার্বিক আন্দোলনের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে সাক্ষাত করে তিনি সকল বিষয় অবহিত করেন। বাঙালিরা ঐক্যবদ্ধ, তাই বেগম মুজিবের দৃঢ় বিশ্বাস আগরতলা ষড়যন্ত্র নামে খ্যাত মামলা প্রত্যাহার করতেই হবে। বঙ্গবন্ধু যেন শক্ত থাকে সে বিষয়ে তিনি পরামর্শ দেন। বেগম ফজিলাতুননেছার গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের ভিত্তিতে ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান বেগবান হয়। প্রবল গণ-অভ্যুত্থানের মুখে বাঙালির মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমান মুক্ত হলেন ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯। পরের দিন ২৩ ফেব্রুয়ারি বাঙালিরা তাদের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দিয়ে বরণ করে নেয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয়টি মাস অসীম সাহস, দৃঢ় মনোবল ও ধৈর্য্য নিয়ে বেগম শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন। এমনকি ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ও ২৩ মার্চের পতাকা উত্তোলন বঙ্গবন্ধুর প্রধান উদ্দীপক ও পরামর্শক হিসেবে বিবেচনা করা য়ায় বেগম শেখ ফজিলাতুননেছাকে। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয়ের পর দিন ১৭ ডিসেম্বর তাঁর ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বন্দিদশার অবসান ঘটে। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু লন্ডনে যান। সেখান থেকে বেগম মুজিবের সঙ্গে তার প্রথম কথা হয়। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। অবসান ঘটে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছার দীর্ঘ প্রতীক্ষার। এরপর যুদ্ধ-বিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজেও বঙ্গবন্ধুর পাশে দাঁড়ান তিনি। অনেক বীরাঙ্গনাকে বিয়ে দিয়ে সামাজিকভাবে মর্যাদাসম্পন্ন জীবনদান করেন।
বেগম শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব জীবনে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেছেন, অনেক কষ্ট, দুর্ভোগ তাঁকে পোহাতে হয়েছে। তবুও বিনম্র চরিত্রের এই অসমান্য নারী কোনদিন কোনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেনি। আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তাঁর দর্দমনীয় সাহস ও ভ ূমিকার কথা প্রেরণার উৎস হিসেবে সকলের অন্তর ছুঁয়ে আছে। তাইতো বেগম শেখ ফজিলাতুননেছা এক অবিস্মরণীয় ও যুগান্তকারী নাম। দেশ ও জাতির জন্য তাঁর অপরিসীম ত্যাগ সহমর্মিতা, সহযোগিতা ও বিচক্ষণতা বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিবকে বঙ্গমাতায় অভিষিক্ত করেছে। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির পতœী হিসেবেও তিনি পাদ-প্রদীপের আলোতে আসতে প্রত্যাশী কখনও ছিলেন না। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাশে থেকে দেশ ও জাতির জন্য সেবা করে গেছেন এই মহিয়সী নারী বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিব।
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, শেখ ফজিলাতুননেছার মতো ধীরস্থির, বুদ্ধিদীপ্ত, দূরদর্শী , স্বামী অন্তপ্রাণ মহিলার সাহসী, বলিষ্ঠ, নির্লোভ ও নিষ্ঠাবান ইতিবাচক ভূমিকা শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু , বঙ্গপিতা বা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হতে সহায়তা করেছে। জনগণের কল্যাণে সমগ্র জীবন তিনি অকাতরে দুঃখবরণ এবং সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করেছেন। বেগম মুজিব দুর্ভাগ্যকে মাথায় নিয়ে স্বামী- তিন সন্তানের সঙ্গে মৃত্যুবরণ করেন।
ইতিহাসে গান্ধীপত্নী কস্তরী বাই, নেহরুপত্নী কমলা, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের পত্নী বাসন্তী দেবী, ম্যান্ডেলাপত্নী উইনি বিখ্যাত হয়ে আছেন স্বামীর সহযোদ্ধা হিসেবে। একইভাবে বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিবও ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
আগস্ট মাসেই আমরা হারিয়েছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে, হারিয়েছি বাঙালির উজ্জ্বল প্রতীক এক মহীয়সী নারী বেগম শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিবকে, হারিয়েছি শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু রাসেলসহ বৃহত্তর পরিবারের বঙ্গবন্ধুর পরিবারের অনেককে। বঙ্গবন্ধুর আজীবন সুখ-দুঃখের সঙ্গী মৃত্যুকালেও তার সঙ্গী হয়ে রইলেন। ইতিহাসে তাই বেগম শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব কেবল জাতির পিতার সহধর্মিণীই নন, বাঙালি মুক্তি সংগ্রামে অন্যতম এক স্মরণীয় অনুপ্রেরণাদাত্রী। বেগম শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব কিংবদন্তীর মতো বাঙালির মনের মনিকোঠায় প্রজ্বলিত মশাল হয়ে জ্বলছে। সর্বংসহা বাঙালি নারী হিসেবে শেখ ফজিলাতুননেছা বাঙালির হৃদয়ে মাতৃত্বের আসনে প্রতিষ্ঠিত। এই মহীয়সী নারী আমৃত্যু স্বামী বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে দেশ জাতি গঠনে বিপুল অবদান রেখেছেন বলেই দূরদর্শিতা, তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তা, বিচক্ষণতা, সাহসিকতা ও দেশপ্রেম তাঁকে বঙ্গবন্ধুর মতোই অমরত্ব দান করেছে। এক মহীয়সী নারী হিসেবে বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিবের অবিস্মরণীয় ভূমিকা বাঙালির অনিঃশেষ অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে চিরদিন।
বেগম শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিবের ৮৪তম জন্মবার্ষিকীতে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাই।
লেখক : কলেজ শিক্ষক, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক এবং আর্কাইভস ৭১- এর প্রতিষ্ঠাতা