গাজীপুর অনলাইনঃ সদ্য ঘোষিত ‘জাতীয় সম্প্রচার নীতি-২০১৪’ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সরকারপন্থী হিসেবে পরিচিত সাংবাদিকরাও। তারা ঘোষিত সম্প্রচার নীতিমালার কয়েকটি অধ্যায় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তাকে অগ্রহণযোগ্য বলেও মন্তব্য করেছেন।
শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘জাতীয় সম্প্রচার নীতি-২০১৪’ প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে)একাংশ। সাংবাদিকদের এ অংশটি মূলত আওয়ামী পন্থী হিসেবে পরিচিত।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, এতদিন দেশে কোনো নীতিমালাই ছিল না। নীতিমালা আসার পর সংবাদ পত্রে শৃংখলা আসবে। তবে খসড়ার প্রথম দুটি অধ্যায় বাদে তৃতীয়, চতুর্থ এবং পঞ্চম অধ্যায়ের বিশেষ কিছু জায়গা নিয়ে আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করছি।
তিনি বলেন, খসড়া নীতিমালার তৃতীয় অধ্যায়: সংবাদ ও অনুষ্ঠান সম্প্রচার, চতুর্থ অধ্যায়: বিজ্ঞাপন সম্প্রচার এবং পঞ্চম অধ্যায়: সম্প্রচারের ক্ষেত্রে অন্যান্য বিবেচ্য বিষয়কে বাধ্যতামূলকভাবে অনুসরনীয় করার বিষয়টিকে আমরা অগ্রহণযোগ্য মনে করি। শুধু আমরা নই খসড়া প্রণয়ণকারীরাও এমনটা মনে করেন। এছাড়াও এই অধ্যায়গুলোতে কিছু কিছু বাহুল্য কথন রয়েছে। সংবিধান ও অন্য আইনের আওতায় গ্রহণযোগ্য মীমাংসিত বিষয়ও রয়েছে।
তিনি আলোচনা সভা অনুষ্ঠান সম্প্রচার প্রসঙ্গে বলেন, এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে কোনো প্রকার অসত্য এবং বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কিন্তু আমি বলি ‘সাংবাদিকতার কোনো পর্যায়ে বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্য বা উপাত্ত দেয়া হলে তা সংশোধন করার সুযোগ রয়েছে। কেউ যদি উদ্দেশ্যমূলকভাবে সে ধরনের প্রচারণা চালাতে থাকে তাহলে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান প্রচলিত আইনেই আছে।
ষষ্ঠ অধ্যায়ের সম্প্রচার কমিশন নিয়ে মঞ্জুরুল আহসান বলেন, নীতিমালায় সম্প্রচার কমিশনের কর্মপরিধি বিস্তৃত করা হয়েছে কিন্তু কাঠামো বিন্যাস বিস্তৃত করা হয়নি।
তিনি সম্পাদকীয় নীতিমালাকে ভয়ংকর এবং অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন। যা দেশে বিদেশে ভূল বার্তা দেবে এবং সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের সুযোগ করে দেবে এই বলে যে, সরকার সম্প্রচার মাধ্যমের সম্পাদকীয় স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করতে চায়। কারণ সরকারি নির্দেশনায় কখনই কোনো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের সম্পাদকীয় নীতিমালা তৈরি হয় না।
মঞ্জুরুল আহসান বলেন, সবচাইতে বড় উদ্বেগের বিষয় সম্প্রচার এবং সম্প্রচার কমিশন সম্পর্কিত আইন, বিধিমালা এবং নীতিমালা প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত তথ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রচার সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। যেহেতু ষষ্ঠ অধ্যায়ে বর্ণিত সম্প্রচার কমিশন কতদিনের মধ্যে গঠিত হবে সে বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই, সেহেতু এই বলার সুযোগ থাকে, মন্ত্রণালয় বাড়তি ক্ষমতা প্রয়োগের জন্যই এই নীতিমালাটি প্রণয়ন করছে।
এসময় মঞ্জুরুল আহসান সরকারের কাছে কিছু আহ্বান তুলে ধরেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: স্বল্পতম সময়ের মধ্যে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন গঠন করা হোক। সেই সম্প্রচার কমিশনকে সময় বেধে দেওয়া হোক, যে সময়ের মধ্যে অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ করে কমিশন সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করবে। স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন গঠনের আগে এই নীতিমালার কোনো ধারা প্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
এছাড়া এই সম্প্রচার নীতিমালাকে তিনি আরো যুগোপযোগী করার আহ্বান জানান। এসময় সংগঠনটির মহাসচিব আব্দুল জলিল ভুঁইয়াসহ অন্যান্য সাংবাদিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।