আজ গ্রেনেড হামলার রক্তস্নাত ২১ শে আগস্টের দশম বার্ষিকী

গাজীপুর অনলাইনঃ রক্তস্নাত বিভীষিকায় ২১শে আগস্ট আজ। রক্তমাখা, বীভত্স রাজনৈতিক হত্যাযজ্ঞের দিন। দশ বছর আগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এই দিনে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে নারকীয় এই গ্রেনেড হামলার ঘটনা বাংলাদেশে এক কলঙ্কময় অধ্যায়ের জন্ম দেয়।

জাতি আজ শ্রদ্ধাবনতচিত্তে ইতিহাসের ভয়াবহতম গ্রেনেড হামলার দশম বার্ষিকী পালন করবে। দিবসটি স্মরণে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

অকল্পনীয় এক নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালানো হয় সেদিন। গ্রেনেডের হিংস্র দানবীয় সন্ত্রাস আক্রান্ত করে মানবতাকে। রক্তের বন্যায় রঞ্জিত হয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের পিচঢালা রাজপথ। জীবন্ত বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণ এদিন মুহূর্তেই পরিণত হয়েছিল মৃত্যুপুরীতে। এ ঘটনা তখন প্রচণ্ড আঘাত হেনেছিল গণতন্ত্রকামী বাঙালির অস্তিত্বে।

২০০৪ সালের বঙ্গবন্ধু এভিনিউর  ওই নারকীয় হত্যাযজ্ঞে মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ নিহত হন আওয়ামী লীগের ২৪ নেতা-কর্মী। আর আহত হন পাঁচ শতাধিকেরও বেশি মানুষ।  এছাড়া আহতদের অনেকেই এখনও শরীরে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার নিয়ে দুঃসহ জীবন কাটাচ্ছেন। সেদিন অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনাকে মানববর্ম তৈরি করে প্রাণ উত্সর্গ করেছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। তবে সেই হামলা থেকে শেখ হাসিনা প্রাণে রক্ষা পেলেও তার শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সেদিনের সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও তত্কালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। বিকাল ৪টার দিকে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশের পর সারাদেশে বোমা হামলায় নিহতদের স্মরণে শোক মিছিলের কর্মসূচি ছিল।

বিকাল সাড়ে ৪টা নাগাদ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ এলাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। শেখ হাসিনা বিকাল ৫টার দিকে সমাবেশস্থলে পৌঁছান। বুলেটপ্রুফ মার্সিডিজ বেঞ্জ জিপ থেকে নেমে নিরাপত্তা কর্মী বেষ্টিত অবস্থায় তিনি দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একটি ট্রাকের ওপর তৈরি মঞ্চে উঠে বক্তৃতা শুরু করেন। বক্তৃতায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী দেশব্যাপী অব্যাহত বোমা হামলার বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। ২০ মিনিটের বক্তৃতা শেষে তিনি 'জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু' উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ দিক থেকে মঞ্চকে লক্ষ্য করে একটি গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। ঘড়ির কাঁটায় তখন ৫টা ২২ মিনিট। গ্রেনেডটি মঞ্চের পাশে রাস্তার ওপর পড়ে বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। এরপর একে একে আরো ১২টি গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়। মুহূর্তের মধ্যে পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। আতঙ্কে মানুষ দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করে। গ্রেনেডের আঘাতে মঞ্চের নিচে রাস্তার ওপরে বসা বেগম আইভী রহমানসহ অসংখ্য মানুষ লুটিয়ে পড়েন। মঞ্চে উপস্থিত ঢাকার মেয়র মোহাম্মদ হানিফ এবং শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত দেহরক্ষী তাত্ক্ষণিকভাবে এক মানবঢাল তৈরি করে তাকে গ্রেনেডের হাত থেকে রক্ষা করেন। এ সময় কেন্দ্র করে সুধা সদনে নিয়ে যাওয়া হয়। শেখ হাসিনাকে বহনকারী গাড়ির ওপরও গুলিবর্ষণ করা হয়। তবে নিক্ষিপ্ত তিনটি গ্রেনেড অবিস্ফোরিত থেকে যায়। মেয়র হানিফের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ায় অস্ত্রোপচার করার কথা থাকলেও গ্রেনেডের স্প্লিন্টার শরীরে থাকার কারণে তার অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়নি। পরে তিনি ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় মারা যান।

উপর্যুপরি বোমা হামলায় হতাহতদের রক্তে রক্তাক্ত হয়ে যায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ। বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন দলের নেতা-কর্মীরা। তারা গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদ জানাতে থাকলে পুলিশ তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পুলিশ বিক্ষুব্ধ জনতার ওপর প্রথমে বেপরোয়া লাঠিচার্জ ও পরে কাঁদানে গ্যাসের সেল নিক্ষেপ করে। এতে পুলিশের সাথে বিক্ষুব্ধ জনতার দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। পুলিশ নিরীহ পথচারীদেরও লাঠিপেটা করে। গ্রেনেড বিস্ফোরণের সাথে সাথে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, স্টেডিয়াম মার্কেট, বায়তুল মোকাররম মার্কেট, নবাবপুর রোড, নর্থ সাউথ রোড, পুরানা পল্টনসহ আশপাশের এলাকার দোকানপাট ও যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। লোকজন আতংকে এলাকা ছেড়ে পালাতে থাকে। হতাহতের মধ্যে ৩ শতাধিক আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে, আরো শতাধিক নেতা-কর্মীকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, বারডেম, বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, শমরিতা হাসপাতালসহ রাজধানীর অন্যান্য হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিত্সা দেয়া হয়।

এই বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় নিহতরা হলেন- আইভি রহমান, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ, আবুল কালাম আজাদ, রেজিনা বেগম, নাসির উদ্দিন সরদার, আতিক সরকার, আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারি, আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্জেম, বেলাল হোসেন, মামুন মৃধা, রতন শিকদার, লিটন মুনশী, হাসিনা মমতাজ রিনা, সুফিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা). মোশতাক আহমেদ সেন্টু, মোহাম্মদ হানিফ, আবুল কাশেম, জাহেদ আলী, মোমেন আলী, এম শামসুদ্দিন এবং ইসাহাক মিয়া প্রমুখ। গুরুতর আহত হয়েছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আমির হোসেন আমু, প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, ওবায়দুল কাদের, এডভোকেট সাহারা খাতুন, মোহাম্মদ হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, নজরুল ইসলাম বাবু, আওলাদ হোসেন, সাঈদ খোকন, মাহবুবা আখতার, এডভোকেট উম্মে রাজিয়া কাজল, নাসিমা ফেরদৌস, শাহিদা তারেক দীপ্তি, রাশেদা আখতার রুমা, হামিদা খানম মনি, ইঞ্জিনিয়ার সেলিম, রুমা ইসলাম, কাজী মোয়াজ্জেম হোসেইন ও মামুন মল্লিক।

গ্রেনেড হামলার পর মতিঝিল থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক শরীফ ফারুক হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল জলিল ও সাবের হোসেন চৌধুরী পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় মোট তিন দফা তদন্তে ছয়বার তদন্ত কর্মকর্তাকে (আইও) পরিবর্তন করা হয়।

এছাড়া মামলায় মোট তিনদফায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হলেও মামলার কার্যক্রম এগোচ্ছে ধীর গতিতে।
সে সময় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাবরের তত্ত্বাবধানে একটি তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় এবং এতে জজ মিয়া নামে এক ভবঘুরে, একজন ছাত্র, একজন আওয়ামী লীগের কর্মীসহ ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। অথচ পরবর্তী তদন্তে তাদের কারো বিরুদ্ধেই অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। এছাড়া তৎকালীন বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকারে বিরুদ্ধে গ্রেনেড হামলার সকল আলামত নষ্ট করারও অভিযোগ রয়েছে।

এরপর ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে এই নারকীয় গ্রেনেড হামলার নতুন করে তদন্ত শুরু হকে। হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে  সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু এবং ঢাকা সিটি ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম আরিফকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

ভয়াল গ্রেনেড হামলার দশম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন কর্মসূচি পালন করছে।

বিভীষিকাময় ২১শে অগাস্ট গ্রেনেড হামলা দিবস উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১ টায়  বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ বেদীতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের জাতীয় নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে অংশগ্রহণ করবেন। এই সময় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দও অনুরূপ কর্মসুচিতে যোগদান করবেন। একই স্থানে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত শহীদ পরিবারের সদস্যবৃন্দ ও আহতদের সাথে সাক্ষাৎ এবং আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করবেন।

রাষ্ট্রপতির বাণী
২১শে আগস্টকে আমাদের জাতীয় ইতিহাসের এক কলঙ্কজনক অধ্যায় ও শোকাবহ দিন উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেছেন, দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে বিপন্ন করার জন্য প্রতিক্রিয়াশীল চক্র এখনও সক্রিয়। তাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিরোধ ও ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল গণতন্ত্রকামী দেশপ্রেমিক জনতা একটি আত্মমর্যাদাশীল ও সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে এগিয়ে আসবেন। আর তা করতে পারলেই শহীদদের আত্মত্যাগ সার্থক হবে। রাষ্ট্রপতি ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং যারা বেঁচে রয়েছেন তাদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাণী
ভয়াল ২১ আগস্ট উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ বাণী দিয়েছেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ২১ আগস্ট একটি কলঙ্কময় দিন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “২০০৪ সালের এই দিনে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তৎকালীন বিএনপি-জামাত জোট সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশ্য দিবালোকে ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত জঙ্গি তৎপরতা বিরোধী সমাবেশে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলা চালানো হয়।

একটি শান্তিপূর্ণ নিরাপদ স্বদেশ ও সন্ত্রাসমুক্ত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে একুশে আগস্টের শহিদদের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা জানানোর আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী।




নাম

অর্থ ও বাণিজ্য,237,আন্তর্জাতিক,732,কাপাসিয়া,343,কালিয়াকৈর,418,কালীগঞ্জ,253,খেলা,644,গাজীপুর,3944,চাকরির খবর,34,জয়দেবপুর,1581,জাতীয়,2968,টঙ্গী,912,তথ্যপ্রযুক্তি,512,ধর্ম,196,পরিবেশ,137,প্রতিবেদন,310,বিজ্ঞান,55,বিনোদন,698,ভিডিও,58,ভিন্ন খবর,142,ভ্রমন,115,মুক্তমত,27,রাজধানী,829,রাজনীতি,1057,লাইফস্টাইল,283,শিক্ষাঙ্গন,398,শীর্ষ খবর,10778,শ্রীপুর,482,সাক্ষাৎকার,12,সারাদেশ,649,স্বাস্থ্য,212,
ltr
item
GazipurOnline.com: আজ গ্রেনেড হামলার রক্তস্নাত ২১ শে আগস্টের দশম বার্ষিকী
আজ গ্রেনেড হামলার রক্তস্নাত ২১ শে আগস্টের দশম বার্ষিকী
http://4.bp.blogspot.com/-unRvkYDgJ74/U_VNkyblbhI/AAAAAAAAJ_E/BgxqlLkh9dE/s1600/21%2Baugust%2Bgrened%2Bhamla.jpg
http://4.bp.blogspot.com/-unRvkYDgJ74/U_VNkyblbhI/AAAAAAAAJ_E/BgxqlLkh9dE/s72-c/21%2Baugust%2Bgrened%2Bhamla.jpg
GazipurOnline.com
https://www.gazipuronline.com/2014/08/granedhamla.html
https://www.gazipuronline.com/
https://www.gazipuronline.com/
https://www.gazipuronline.com/2014/08/granedhamla.html
true
13958681640745950
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Read More Reply Cancel reply Delete By প্রচ্ছদ PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share. STEP 2: Click the link you shared to unlock Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy