আজ ১২ ভাদ্র। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৩৮ তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৫ সালের এদিনেই রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (সাবেক পিজি হাসপাতাল) তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।
বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও নজরুল ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করে বাংলা সঙ্গীত জগতকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।
প্রেম, দ্রোহ, সাম্যবাদ ও জাগরণের কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও গান শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছে। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস।
নজরুলের কবিতা, গান ও সাহিত্য কর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক। তাঁর লেখনি জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তাঁর কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে।
নজরুলের সৃষ্টিকর্ম প্রসঙ্গে নজরুল বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, নজরুল ইতিহাস ও সময় সচেতন মানুষ ছিলেন- যার প্রভাব তাঁর লেখায় স্পষ্টভাবে পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, তুরস্কে কামাল পাশার নেতৃত্বে প্রজাতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা, রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব আর ভারতবর্ষে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের তরঙ্গকে নজরুল তাঁর সাহিত্যে বিপুলভাবে ধারণ করেছেন। সে সময়ে ধর্মান্ধ মুসলমানদের তিনি পুনর্জাগরণের ডাক দিয়েছেন এবং এক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল একজন বলিষ্ঠ নেতার মতো।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ডাক নাম ‘দুখু মিয়া’। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে স্বপরিবারে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তাঁর বসবাসের ব্যবস্থা করেন। ধানমন্ডিতে কবির জন্য একটি বাড়ি প্রদান করেন।
জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশন ও বিভিন্ন বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে। জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. নূর-ই ইসলাম জানান, কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকালে ফজরের নামাজের পর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে কোরআনখানি।
এছাড়া সকাল ৭টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সমাবেশ ও সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে উপাচার্যের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা সহকারে কবির সমাধি প্রাঙ্গণে গমন, পুষ্পার্পণ এবং ফাতেহা পাঠ। পরে কবির মাজার প্রাঙ্গণে উপাচার্যের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা।
আওয়ামী লীগ জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর সমাধিতে পুষ্পমাল্য নিবেদন, ফাতেয়া পাঠ ও দোয়া করবেন।
এছাড়া বিশ্ব কবিতাকণ্ঠ পরিষদ সকালে ৭টায় পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও রুহের মাগফেরাত কামনা সহ মোনাজাত এবং সকাল ১১টায় তোপখানা রোড়স্থ মাহবুব প্লাজায় আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।
এ দিকে কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমী আজ বিকেল সাড়ে ৪টায় একাডেমীর কবি শামসুর রহমান মিলনায়তনে প্রবন্ধ পাঠ, বক্তৃতা ও সংস্কৃতি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
৩৮তম মৃৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর স্মৃতিজড়িত কুমিল্লায় নজরুল পরিষদে উদ্যোগে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। এদিন সকাল ৯টায় নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউট কুমিল্লা কেন্দ্রে নজরুল প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও দোয়া মাহফিল, সকারে ১০টায় চেতনায় নজরুল স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে কবিতা কুইজ ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা (নজরুল ভিত্তিক প্রতিযোগিতায় প্রথম শ্রেণী হতে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রী ৪টি গ্রুপে অংশগ্রহণ করবে) অনুষ্ঠিত হবে।
সন্ধ্যা ৬টায় টাউন হলে আলোচনাসভা পুরস্কার বিতরণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং জেলায় শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদের পরিবেশনায় নাটক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।