দেশকে‘ গণতন্ত্রহীন’ করতে সরকার একের পর এক আইন করছে বলে অভিযোগ করেছেন খালেদা জিয়া। এর বিরুদ্ধে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সোচ্চার হওয়ার আহবানও জানান তিনি। একই সঙ্গে ১৫ আগস্ট ‘চাঁদাবাজি’ করে আওয়ামী লীগ তাদের নেতাকে ( শেখ মজিবুর রহমান) অসম্মান করেছে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
শনিবার রাতে এক শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারস খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘ দেশে আজ গণতন্ত্র মৃত। বর্তমান অবৈধ সরকার জনগনের ভোট ছাড়া ক্ষমতায় বসে একের পর এক আইন করছে। কিছুদিন আগে সম্প্রচার নীতিমালা করেছে। আর কিছুদিন পর দেখা যাবে আমাদের বক্তব্যও প্রচার করা হবে না। দেশকে তারা কোন পথে নিয়ে যাচ্ছে।’’
‘‘ এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঘরে বসে নয়, বাইরে এসে সবাইকে প্রতিবাদ করতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে।’’
রোববার শ্রী কৃষ্ণের জন্মাষ্টমী। এই উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসন হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান কল্যাণ ফ্রন্ট। গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের এই অনুষ্ঠানে টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ,নেত্রকোনা, মাদারীপুর,গাজীপুর,বরিশাল,ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন জেলা থেকে হিন্দু সস্প্রদায়ের সদস্যরা অংশ নেন।
খালেদা জিয়া হিন্দু সস্প্রদায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। অনুষ্ঠান শেষে অতিথিদের প্রসাদ দিয়ে আপ্যয়ন করা হয়।
দিবসটি উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘ আমরা সংখ্যালঘু বলে কিছুু বিশ্বাস করি না। আমরা সবাই বাংলাদেশী। বিএনপি ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাস করে। যেখানে সব ধর্মের মানুষ সমান অধিকার ভোগ করবে।’’
বর্তমান সরকারের আমলে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন বেশি নির্যাতিত ও তাদের সহায়-সম্পদ বেদখল হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সরকারের রোষানলে পড়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্য যুগ্ম সচিব বিজন কান্তি সরকারকে বাধ্যতামূলকভাবে অবসরে পাঠানো সমালোচনা করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘ বিজন একজন ভালো সরকারি কর্মকর্তা। ভালো কাজ করে বলে তাকে আমরা কাজে লাগিয়েছিলাম। এই সরকার বিজনকে দীর্ঘদিন ওএসডি করে এখন চাকুরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে।’’
‘‘ এভাবে গোটা প্রশাসনকে তারা দলীয়করণ করে ফেলেছে।এই সরকারের আমলে ১০০০ জন কর্মকর্তা ওএসডি। অযোগ্য কর্মকর্তাদের তারা প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় বসানো হয়েছে। সেজন্য প্রশাসন চলছে না।’’
‘‘ কেবল তাই নয় একইভাবে বিচার বিভাগকে তারা দলীয়করণ করেছে। এখন তারা আরো কিভাবে বিচার বিভাগকে আষ্টে-পিষ্টে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেজন্য আইন করা হচ্ছে। আমরা মনে করি, এভাবে আর দেশ চলতে পারে না।’’
সরকারের দুর্নীতি ও অপশাসনের কথা উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘ সর্বত্র দুর্নীতি ছেয়ে গেছে। টাকা ছাড়া কিছুই হয় না। জেলখানায়ও এখন টাকা লাগে।’’
ব্যবসা-বানিজ্যও সরকারের ভ্রান্তনীতির কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তিনি বলেন, ‘‘ ব্যবসায়ীরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালাতে পারছেন না। গতকাল ১৫ আগস্ট কীভাবে চাঁদাবাজি হয়েছে। এ মাধ্যমে তারা তাদের নেতাকে অসন্মান করেছে।’’
বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধে চেতনাকে ধ্বংস করেছে দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘ আজ দেশে মানুষ বলুন, যেকোনো ধর্মের মানুষ বলুন, কেউ শান্তি নেই। দেশটাকে তারা এমন জায়গা নিয়ে গেছে, সেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভুলন্ঠিত হচ্ছে। এই চেতনাকে ফিরিয়ে আনতে হলে আজ আমাদের এক হতে হবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘ দেশ এক কঠিন সময় অতিক্রান্ত করছে। এ থেকে উত্তরণে শ্রী কৃষ্ণের শিক্ষা অনুসরণ করলে রাষ্ট্র ও সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে। তাই দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে আজ সবাইকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। কি পাবো, কি পেলাম এটা চিন্তা করলে চলবে না।’’
হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের আহবায়ক গৌতম চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, জাতীয় পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সদ্য বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো যুগ্ম সচিব বিজন কান্তি সরকার, সাংবাদিক বাসু দেব ধর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. হরিপ্রদ ভ’ট্টাচার্য, গুলশান-বনানী পূজা উদযাপন কমিটির নেতা পান্না লাল দত্ত, ইশকনের পৌরহিত তেজগোবিন্দ দাস ব্রক্ষচারী, হিন্দু মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ বাবু,্রহিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান কল্যান ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতা অপর্ণা রায় দাস, নিতাই চন্দ্র ঘোষ, অমলেন্দ্র দাস অপু, রমেশ দত্ত, তরুন দে, জয়দেব রায়, মিল্টন বৌদ্ধ বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, জ্যেষ্ঠ নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু, এম এ কাইয়ুম, বরকত উল্লাহ বুলু, শামীমুর রহমান শামীম, নকুল ঘোষ, দেবাশীষ রায় মধু, ইসকনের সম্পাদক চারুদত্ত ব্রক্ষচারী, মহামন্ত্র কীর্তন দাস,দুলাল ব্রক্ষচারী প্রমূখ ছিলেন।
অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সহ সম্পাদক জয়ন্ত কুন্ড।