মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির আহ্বানে অস্ত্র বিরতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে ইসরাইল। ফলে ৭২ ঘণ্টার অস্থায়ী অস্ত্রবিরতি ভেস্তে গেছে। আর এ বর্বর হামলায় নিহতের সংখ্যা ইতোমধ্যেই দেড় হাজার ছাড়িয়ে গেছে। শুক্রবার দক্ষিণ গাজায় ইসরাইলের ব্যাপক গোলাবর্ষণে কমপক্ষে ২৭ জন নিহত এবং দেড় শতাধিক সাধারণ মানুষ আহত হয়েছে। যুদ্ধ বিরতি শুরু হওয়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এ হামলা চালানো হয়। গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় এ সাঁজোয়া হামলা চালানো হচ্ছে। এতে ডাক্তাররা লাশ ও আহতদের সরানোর জন্য সুযোগ পাচ্ছে না।
ইসরাইলী সেনাবাহিনী বলছে, গাজার জঙ্গীরা ইসরাইলের বিরুদ্ধে নতুন করে রকেট নিক্ষেপ করায় তারা এই হামলা চালাচ্ছে। জরুরি বিভাগের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা ২৭ জনের নিহতের কথা বলেছেন। এর আগে রাফায় হাসপাতাল সূত্র ৩০ জনের নিহতের কথা বলেছিলো।
এদিকে গত ৮ জুলাই ইসরাইলি অভিযান শুরুর পর গাজায় প্রায় ১৫০০ সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে। ৭ হাজারেরও বেশি মানুষ ইসরাইলি সেনাদের হামলায় আহত হয়। পক্ষান্তরে গাজার হামাস যোদ্ধাদের আক্রমণে ইসরাইলের ৬১ সেনা নিহত হয়েছে। এছাড়া হামাসের রকেট হামলায় ৩ ইসরাইলি নাগরিক নিহত ও অন্তত ৪০০ জন আহত হয়েছে বলে সরকারিভাবে জানানো হয়।
স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল ৮টা (বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টা) থেকে গাজায় ৭২ ঘণ্টার অস্ত্রবিরতি শুরু হওয়ার পর মাত্র ২ ঘণ্টার মধ্যেই আবারো গোলাবর্ষণ শুরু করেছে ইসরাইলি সেনারা। হামাস প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করছে অভিযোগ তুলে ইসরাইল ফের আক্রমণ শুরু করে। এ হামলায় অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন বলে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
গাজায় ইসরাইলি সেনাদের ৩ সপ্তাহের অভিযানে দেড় সহস্রাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক মহলের প্রচেষ্টায় সর্বশেষ এই ৭২ ঘণ্টার অস্ত্রবিরতিকে প্রাণহানি বন্ধের শুভ ইঙ্গিত হিসেবেই ধরে নেয়া হয়েছিল। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির প্রস্তাবিত ওই যুদ্ধবিরতি মেনে নেয়ার পরও ঠিক কী কারণে তা ভাঙা হলো, সে বিষয়ে ইসরাইলের স্পষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংগঠন হামাস ও ইসরাইলের সম্মতিতে শুক্রবার সকাল থেকে এ অস্ত্রবিরতি শুরু হয়েছিল। একই সময় মিশরের কায়রোতে হামাস ও ইসরাইলের প্রতিনিধিদের আলোচনায় বসারও কথা ছিল। কীভাবে একটি দীর্ঘমেয়াদী সমঝোতায় পৌঁছানো যায় সে বিষয়ে এ বৈঠকে দুপক্ষের আলোচনা হওয়ার কথা ছিল বলেও বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়।
৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির মাত্র দুঘণ্টা পার হওয়ার পর দক্ষিণ রাফা এলাকায় ইসরাইলের একটি ট্যাঙ্ক থেকে গোলা নিক্ষেপ করা হয়। এ ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যে তেলআবিবে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর দপ্তর থেকে দাবি করা হয়, গাজায় হামাস ও অন্যান্য অস্ত্রধারী দলগুলো ঘৃণ্যভাবে যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করছে। তবে হামাস কীভাবে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে- সে বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি ইসরাইল।
যুদ্ধবিরতি শুরুর পর সকাল ৮টার দিকে বিভিন্ন শরণার্থী শিবির ও আশ্রয়কেন্দ্র থেকে প্রয়োজনীয় মালামালের বোঝা নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসে ফিলিস্তিনিরা। ইসরাইলি বিমান হামলায় বিধ্বস্ত বাসস্থানের দিকে যেতে থাকে তারা। ৪ সন্তানকে নিয়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন ৩৮ বছর বয়সী আশরাফ জায়িদ। তিনি বলেন, আমরা বেইত লেহিয়ায় ফিরে যাচ্ছি। আশা করছি যুদ্ধবিরতি স্থায়ী হবে। আমাদেরকে আর জাতিসংঘের আশ্রয়কেন্দ্রে ফিরে যেতে হবে না।
অপরদিকে গত বুধবার জাবালিয়ায় জাতিসংঘ শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি গোলা হামলায় ১৫ জন নিহত হওয়ার পর গাজায় বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে বিশ্ব সম্প্রদায়। এর আগের সপ্তাহে একইভাবে অপর একটি জাতিসংঘ শরণার্থী শিবিরে হামলায় ১৫ জন নিহত হয়েছিল। গাজায় অভিযান শুরুর পর বিশ্বসংস্থাটির অন্তত ৬টি আশ্রয়কেন্দ্র ইসরাইলি সেনাদের হামলার শিকার হয় বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।