সাংবাদিকদের কটাক্ষ ও দেখে নেবার হুমকি প্রদান করে সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী বলেছেন, খুব সতর্ক থাকবায়। ধরলে কিন্তু ছাড়া অইতো নায়। শনিবার বিকালে সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ হুমকি দেন। আঞ্চলিক ভাষায় দেয়া তার বক্তব্যে তিনি সাংবাদিকদের ‘চরিত্রহীন’ ও ‘খবিস’ বলেও গালি গালাজ করেন।
এ কথা বলার পর মন্ত্রী অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করলে উপস্থিত সাংবাদিকেরা অনুষ্ঠান বয়কট করেন। এ সময় মিলনায়তনে হট্টগোল শুরু হয়।
সিলেট বিভাগীয় আদিবাসী উদযাপন কমিটি আয়োজিত আদিবাসী দিবসের আলোচনা সভায় সিলেটের সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন।
সমাজকল্যাণমন্ত্রী তার আঞ্চলিক ভাষায় দেয়া বক্তব্যে বলেন, অন্যায় করবাইতো এর লাগি সম্প্রচার নীতি অইছে (অন্যায় করবেন তাই সম্প্রচার নীতি করা হয়েছে)। আগে কইছিনা, আমি যদি হ দিন কেবিনেটও তাকতাম আরো শাসন করলাময় নে (সেদিন মন্ত্রীসভার বেঠকে উপস্থিত থাকলে আরো কঠিন আইনের কথা বলতাম)। পুয়ান্তর রস ভাইর করি ছাড়ি দিলাময়, সাংবাদি অকল..ওখন তাকি সতর্ক অই যাওগি (সাংবাদিকদের দেখে দিতাম, এখন থেকে সতর্ক হয়ে যাও)।
তিনি বলেন, বাবা, যেতা মন চায় লিখিও না, যেতা মন চায় দেখাইও না (যা মন চায় তা লিখবেন না, যা মন চায় তা দেখাবেন না)। নইলে এই সিলটের মানুষও, তোমা তাইনর এগেইনস্টে দেখাই দিতে আমার সময় লাগতো নায় (নতুবা এই সিলেটের মানুষই প্রতিবাদ করবে, তোমাদের দেখে নিতে আমার সময় লাগবে না)। হেই সময় বিয়া-শাদি কইরাও বউয়ের উপর ঘুমায়তায় পারতায় না, কবিস হগল (গালি)।
সাংবাদিকদের সতর্ক করে দিয়ে সমাজকল্যাণমন্ত্রী বলেন, কমর খিলা বানতে অয় আমিও জানি (কিভাবে ক্ষমতা দেখাতে হয় তা আমি জানি)। চরিত্রহীন হগল, টেকা দিয়া তোমরা লিখিলাও মাইনষর, লিখিলাও যেতা মন চায় (সাংবাদিকরা চরিত্রহীন, টাকা দিয়ে যা ইচ্ছা তা লিখে)। খাও টাকা আরেক জনর আর মহসিন আলীর বিরুদ্ধে বার্তা লেখ (অন্যের টাকা খেয়ে আমার বিরুদ্ধে লিখো)। এইতা আর অইতো নায়, খুব সতর্ক থাকবায়( এসব আর হবে না, খুব সতর্ক থাকুন) । ধরলে কিন্তু ছাড়া অইতো নায় (গ্রেফতার করা হলে আর ছাড়া হবে না)।
জানা যায়, বক্তৃতা দেওয়ার জন্য তাকে আহ্বান করার পর মন্ত্রী মাইক্রোফোনের সামনে এসে সাংবাদিকদের ‘সর সর ...’ বলে সামনে থেকে সরে যেতে বলেন। ‘তোমাদের মুখ দেখতে আসি নাই...’ বলে সাংবাদিকদের মাইক্রোফোনের সামনে থেকে ক্যামেরা নিয়ে চলে যেতে বলেন মন্ত্রী।
সাংবাদিকেরা ‘যা ইচ্ছে তা-ই লেখে’ দাবি করে তিনি বলেন, ‘এরা কেউ জার্নালিজম পড়ে সাংবাদিক হয়নি। একমাত্র আমার মেয়ে জার্নালিজমে এমএ করেছে। আর এরা কলেজে ঘোরাঘুরি করে সাংবাদিক বনে গেছে।’
সমাজকল্যাণমন্ত্রী বলেন, ‘আমার নেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে ডেকে বলেছেন, হাসানুল হক ইনু ১৪ দলের নেতা, আর তুমি আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা। সাংবাদিকরা যা ইচ্ছে লিখুক, তাতে কিছু যায়-আসে না। তুমি চালিয়ে যাও।’
‘খবিশ’ ও ‘চরিত্রহীন’ বলে মন্তব্যের পর মিলনায়তনে উপস্থিত সাংবাদিকেরা প্রতিক্রিয়া দেখান। সাংবাদিক গ্যালারিতে থাকা সব সাংবাদিক নীরবে বের হয়ে যাওয়ার সময়ও তিনি খবিশ ও চরিত্রহীন বলে গালি দেন। একপর্যায়ে সাংবাদিকেরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখালে মন্ত্রী বক্তৃতা বন্ধ করে চুপ ছিলেন।
মিলনায়তনজুড়ে হট্টগোল সৃষ্টি হলে মঞ্চে বসা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী ও আদিবাসী নেতারা সাংবাদিকদের মিলনায়তন থেকে নীরবে বের হয়ে যেতে সহায়তা করেন।
সাংবাদিকেরা মিলনায়তন থেকে যাওয়ার সময় পাঁচ মিনিট বিরতি দিয়ে মন্ত্রী ফের সাংবাদিকদের ভৎসনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি যুদ্ধ করেছি, তাই তোমাদের (সাংবাদিক) বিরুদ্ধে বলার সাহস আছে। তোমাদের কার কী চরিত্র, আমার জানা আছে। ডিএসবি দিয়ে চারিত্রিক ডাটা বের করতে সময় লাগবে না।’ এ কথা বলে মন্ত্রী বক্তৃতা শেষ করেন।