গাজীপুর অনলাইনঃ সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে গালি-গালাজ ও হুমকি দেবার পরদিনই দুঃখ প্রকাশ করেছেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলী। রবিবার সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ দুঃখ প্রকাশ করেন।
নিজেকে সাংবাদিকতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল উল্লেখ করে সমাজকল্যাণমন্ত্রী বলেন, প্রকৃতপক্ষে সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। এ পেশার প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল ছিলাম, আছি এবং থাকব।
তিনি বলেন, অনিচ্ছাকৃতভাবে বলা আমার কথাগুলো থেকে যদি সাংবাদিকগণ দুঃখ পেয়ে থাকেন, তবে আমি তার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।
বিবৃতিতে মন্ত্রী বলেন, শনিবার সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে দেয়া আমার বক্তৃতায় সাংবাদিকদের প্রতি বিরাগভাজনের যে কথাগুলি বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশ পেয়েছে তা আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
সবাইকে উদ্দেশ্যে করে এসব কথা বলেননি দাবি করে মন্ত্রী বলেন, আমি কথাগুলি সকল সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলিনি। আমি বিশ্বাস করি সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। এ পেশায় জড়িত মানুষজন সৎ ও নির্ভীক জীবন যাপন করেন। এই পেশায় সংশ্লিষ্ট অনেক দেশবরণ্য সাংবাদিক আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ট বন্ধু।
তিনি বলেন, আমার দেয়া বক্তব্যের শুরুতে মঞ্চে যাবার সময় সামনে উপবিষ্ট কতিপয় সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে নিয়ে ‘টিটকিরি’ করছিলেন। আমি ঐসব কথা শুনে সইতে না পেরে হঠাৎ কিছুটা রেগে যাই এবং স্থানীয় কতিপয় সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা রাগত অবস্থায় বলি। আমার বলা কথাগুলো বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়। যা দেখে আমি কষ্টবোধ করছি।
মন্ত্রী বলেন, মূলত আমার বলা কথাগুলো ছিল কেবল দুই একজন স্থানীয় সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে। যারা গত কয়েকদিন ধরে আমার বক্তব্যকে বিকৃত করে প্রকাশ করছিলেন। কিন্তু আমার বলা কথাগুলো থেকে দেশের সাংবাদিকগণ আহত হয়েছেন দেখে আমি ভীষণভাবে ব্যথিত ও কষ্ট পেয়েছি।
এর আগে শনিবার বিকালে সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাংবাদিকদের কটাক্ষ ও দেখে নেবার হুমকি প্রদান করেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী। তিনি সাংবাদিকদের খুব সতর্ক থাকবায় কথা উল্লেখ করে বলেন, ধরলে কিন্তু ছাড়া অইতো নায়। আঞ্চলিক ভাষায় দেয়া তার বক্তব্যে তিনি সাংবাদিকদের ‘চরিত্রহীন’ ও ‘খবিস’ বলেও গালি গালাজ করেন।
এ কথা বলার পর মন্ত্রী অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করলে উপস্থিত সাংবাদিকেরা অনুষ্ঠান বয়কট করেন। এ সময় মিলনায়তনে হট্টগোল শুরু হয়।এরপরই সাংবাদিকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন।
সাংবাদিকদের সতর্ক করে দিয়ে সমাজকল্যাণমন্ত্রী বলেন, কমর খিলা বানতে অয় আমিও জানি (কিভাবে ক্ষমতা দেখাতে হয় তা আমি জানি)। চরিত্রহীন হগল, টেকা দিয়া তোমরা লিখিলাও মাইনষর, লিখিলাও যেতা মন চায় (সাংবাদিকরা চরিত্রহীন, টাকা দিয়ে যা ইচ্ছা তা লিখে)। খাও টাকা আরেক জনর আর মহসিন আলীর বিরুদ্ধে বার্তা লেখ (অন্যের টাকা খেয়ে আমার বিরুদ্ধে লিখো)। এইতা আর অইতো নায়, খুব সতর্ক থাকবায় (এসব আর হবে না, খুব সতর্ক থাকুন) । ধরলে কিন্তু ছাড়া অইতো নায় (গ্রেফতার করা হলে আর ছাড়া হবে না)।
এরপর রবিবার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীকে অপসারণ ও গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে)। নিন্দা জানিয়ে মন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)।
এর আগেও একটি বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে ধুমপান করে বিতর্কিত হন সৈয়দ মহসিন আলী। পরে তিনি ওই ঘটনায়ও দুঃখ প্রকাশ করেন। গত ২২ জুলাই নিজ মন্ত্রণালয়ের একটি অনুষ্ঠানে ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের (টেলিভিশন চ্যানেল) ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী বলেছিলেন, এমন আইন করা হচ্ছে যে তাদের কোনো স্বাধীনতা থাকবে না।