নারায়ণগঞ্জে বহুল আলোচিত ৭ খুনের আসামি নূর হোসেনের বিনিময়ে বাংলাদেশের কারাগারে বন্দি থাকা বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামের (উলফা) সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়াকে ভারতের হাতে তুলে দিচ্ছে বাংলাদেশ।
ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রের বরাত দিয়ে গতকাল শনিবার ভারতে পশ্চিম বাংলার আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, নূর হোসেনের বিনিময়ে অনুপ চেটিয়াকে ফেরত দিতে ২ দেশের সরকার 'বোঝাপড়ায়' পৌঁছেছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ভারতীয় হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা গাজীপুরের জেলে গিয়ে অনুপ চেটিয়ার সাথে দেখা করেছেন। চেটিয়া তাকে জানিয়েছেন, আইনগত জটিলতা না থাকলে ভারতে ফিরে যেতে তিনি রাজি। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়, এরপরেই চেটিয়াকে জেল থেকে মুক্ত করে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ঢাকার মোহাম্মদপুরের একটি বাড়ি থেকে ১৯৯৭ সালে অনুপ চেটিয়াকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। এরপর অবৈধ অনুপ্রবেশ, জাল পাসপোর্ট ও অস্ত্র রাখার ৩টি মামলায় তার ৭ বছর কারাদণ্ড হয়। ২০০৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি চেটিয়ার সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও তাকে নিরাপদ হেফাজতে জেলে রেখে দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। অপরদিকে ২০০৯ সালে চেয়ারম্যান অরবিন্দ রাজখোয়াসহ উলফার বেশ কিছু প্রথম সারির নেতাকে গোপনে ভারতের হাতে তুলে দেয় শেখ হাসিনার সরকার।
ভারত সরকার তাদের সাথে শান্তি আলোচনা শুরু করলে চেটিয়াও তা সমর্থন করে দেশে ফিরতে বাংলাদেশ সরকারের কাছে আহবান জানান। কিন্তু আইনগত কিছু জটিলতায় বাংলাদেশ চেটিয়াকে হস্তান্তর করতে পারেনি। তারপরে বন্দি প্রত্যর্পণ নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশ বেশ কিছু চুক্তিতে স্বাক্ষর করার পরে চেটিয়ার দেশে ফেরা শুধু সময়ের অপেক্ষা হয়ে দাঁড়ায়।
গত বৃহস্পতিবার ভারতীয় হাইকমিশনের কনসুলার জে পি সিং এক দোভাষীকে নিয়ে গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে অনুপ চেটিয়ার সাথে দেখা করেন। চেটিয়া দেশে ফিরতে চান কি না, তার কাছে জানতে চান সিং। জবাবে চেটিয়া বলেন, দেশে ফিরতে চেয়ে তিনি ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবারই বাংলাদেশ সরকারের কাছে আহবান জানিয়েছেন। তার আপত্তির কোনো কারণ নেই।
এদিকে কয়েক মাস আগে দমদম বিমানবন্দরের কাছে একটি বহুতল ভবন থেকে ধরা পড়েন বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে ৭ খুনের প্রধান আসামি নূর হোসেন। সাধারণ পরিবহন কর্মী থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা হয়ে ওঠা নূর হোসেনকে বাংলাদেশ সরকার ফিরিয়ে আনবে কিনা, তা নিয়ে জল্পনা সৃষ্টি হয়েছিল।
বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, নূর হোসেন ফিরে এসে কাঠগড়ায় দাঁড়ালে সরকারি দলের অনেক প্রথম সারির নেতাই ফেঁসে যেতে পারেন। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগাগোড়াই বলে আসছিলেন, নারায়ণগঞ্জে নিহতরাও শাসক দলের নেতা-কর্মী বা সমর্থক।
এই খুনের বিচারে রাজনীতির রং দেখা হবে না। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নূর হোসেনকে দেশে ফেরানোর ক্ষেত্রে খুঁটিনাটি বিষয় প্রায় চূড়ান্ত। ভারত সরকার শিগগিরই তাকে বাংলাদেশের নিরাপত্তা রক্ষীদের হাতে তুলে দেবে।
সূত্র: আনন্দবাজার