সনাতন ধর্মের মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আজ শুভ জন্মতিথি। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উত্সব। শুভ জন্মাষ্টমী। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস অনুসারে, পৃথিবী থেকে দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনের জন্যই মহাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই দিনে স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন।
পাশবিক শক্তি যখন সত্য সুন্দর ও পবিত্রতাকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছিল, তখন সেই অপশক্তিকে দমন করে জাতিকে রক্ষা এবং শুভ শক্তিকে প্রতিষ্ঠার জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটে। পঞ্জিকামতে, ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে যখন রোহিণী নক্ষত্রের প্রাধান্য হয়, তখন জন্মাষ্টমী পালিত হয়।
এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন। জন্মাষ্টমী উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি। রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন মন্দিরে পূজা অর্চনা, তারকব্রহ্ম হরিনাম সংকীর্তন ও তারকব্রহ্ম নামযজ্ঞেরও আয়োজন করেছে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
বিভিন্ন মন্দিরে আজ সকালে ষোড়শ উপচারে পূজা শেষ করে প্রসাদ বিতরণ ও ধর্মীয় আলোচনা অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আজ ঢাকেশ্বরী মন্দিরে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় গীতাযজ্ঞ, ঐতিহাসিক জন্মাষ্টমী মিছিল ও রাতে কৃষ্ণপূজা এবং কাল আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। মন্দির ছাড়াও ঘরে-ঘরে ভক্তরা উপবাস থেকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা করবেন।
সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, কৃষ্ণ ছিলেন স্বয়ং ঈশ্বর। শ্রীকৃষ্ণ পৃথিবীকে কলুষমুক্ত করতে কংস, জরাসন্ধ ও শিশুপালসহ বিভিন্ন অত্যাচারী রাজাদের ধ্বংস করেন এবং ধর্মরাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। সনাতন ধর্মমতে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অপ্রাকৃত লীলাকে কেন্দ করেই জন্মাষ্টমী উত্সব। অসুররূপী রাজশক্তির দাপটে পৃথিবী যখন হয়ে ওঠে ম্রিয়মাণ, ধর্ম ও ধার্মিকেরা অসহায় সংকটাপন্ন হয়ে পড়েন তখনই অসহায় বসুমতি পরিত্রাণের জন্য প্রজাপতি ব্রহ্মার শরণাপন্ন হন। পরিত্রাণের উপায় খুঁজে বের করতে ব্রহ্মার পরামর্শে দেবতারা সবাই মিলে যান দেবাদিদেব মহাদেবের কাছে। সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়ের যুগসন্ধিক্ষণে তারা সকলে বিষ্ণুর বন্দনা করেন। স্বয়ং ব্রহ্মা মগ্ন হন কঠোর তপস্যায়। ধরণীর দুঃখ-দুর্দশায় ব্যথিত হয়ে দেবতাদের ডাকে সাড়া দিয়ে ভগবান দেবতাদের অভয়বাণী শোনান। দৈববাণীতে তিনি জানান, তিনি অচিরেই মানবরূপে ধরাধামে অবতীর্ণ হবেন দেবকীর সন্তানরূপে, শঙ্খ, চক্র, গদাপদ্মধারী শ্রীকৃষ্ণ নামে। মথুরা নগরীতে অত্যাচারী রাজা কংসের কারাগারে বন্দী দেবকী ও বাসুদেবের কোলে জন্মগ্রহণ করলেও তিনি বেড়ে উঠেছিলেন মা যশোদার ঘরে।
শ্রীকৃষ্ণ অবতারের দুটি উদ্দেশ্য রয়েছে। অন্তর্জগতে মানবাত্মার উন্নতি সাধন ও বাহ্য জগতে মানব-সমাজের নৈতিক পরিবর্তন সাধন। গীতাতে স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছেন, আমি জন্মহীন, অব্যয় আত্মা, ভূতগণের ঈশ্বর হয়েও নিজ প্রকৃতিকে আশ্রয় করে আত্মমায়ায় জন্মগ্রহণ করি।