শাসন দীর্ঘায়িত করার আশায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি মধ্যবর্তী নির্বাচনের ডাক দিতে পারেন। একটি বিশাল ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন সত্ত্বেও সবই শেখ হাসিনার অনুকূলে। কোনো কার্যকর বিরোধী দল না থাকায় তিনি খুব কম চাপে রয়েছেন।
শুক্রবার ব্রিটিশ প্রভাবশালী সাময়িকী দ্যি ইকনোমিস্ট এর এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়।
‘ওয়ান অ্যান্ড অনলি ওয়ান’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী যদি মনে করেন ২০১৯-এ টানা তৃতীয়বার জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম, তাহলেই হয়তো তিনি নিজের শাসনকাল দীর্ঘায়িত করার আশায় একটি মধ্যবর্তী নির্বাচনের ডাক দিতে পারেন। আপাতত, অন্তহীন এ লড়াইয়ে জিতে চলেছেন এক নারী।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেগম খালেদা জিয়ার মামলা প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট সমপ্রতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে একটি দুর্নীতি মামলার বিচারক নিয়োগ বিষয়ে ছিল ওই আবেদন। আদালতের এ সিদ্ধান্তে এখন খালেদা জিয়ার বিচার শুরু করবার পথ পরিষ্কার হয়ে গেছে। তার বিরুদ্ধে প্রয়াত স্বামী জিয়াউর রহমানের স্মৃতিতে স্থাপিত দাতব্য ট্রাস্ট থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনেছে প্রসিকিউটররা। এ মামলায় দোষী প্রমাণিত হলে দেশের ২য় সর্বোচ্চ ক্ষমতাবান এ নারীর কারাদণ্ড হতে পারে। আর আদালতের এ রায়ে দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতাবান নারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্তৃত্ব আরও জোরদার হলো।
এতে বলা হয়, নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের ৮ মাস পরে এ ঘটনা ঘটলো। খালেদা জিয়ার বিএনপি ওই নির্বাচন বর্জন করে। নির্বাচনের সময় শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি করে রাখে আর বিএনপির রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতে ইসলামীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণে নিষিদ্ধ করে। কোন বিরোধী দল ছাড়া শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের জন্য এটা ছিল নিশ্চিত সহজ এক জয়। নতুন করে নির্বাচন আয়োজনের আহ্বানের মধ্যে একরকম বিচলিত শুরুর পর তার সরকার এখন বেশ স্বাচ্ছন্দ্যকর অবস্থায় উপনীত হয়েছে।
সরকারের সমালোচনা করে প্রতিবেদনে বলা হয়, এদিকে, শেখ হাসিনার সরকার তাদের শাসন স্থায়ী করতে আদালতে কতৃত্ব স্থাপন, মিডিয়া সমালোচকদের বাক্রোধ আর সংবিধান নিয়ে নাড়াচাড়া করা অব্যাহত রেখেছে। সংসদে তাদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। আর তাদের মিত্র সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদের দল জাতীয় পার্টি বিশ্বস্ত বিরোধী দল হিসেবেই আচরণ করছে। ১৭ই সেপ্টেম্বর সংসদ বিচারকদের অভিশংসন ক্ষমতা দিয়ে একটি সংবিধান সংশোধনী পাস করে।
এতে বলা হয়, আগামী সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া বিএনপির তেমন কোন উপায় নেই। আগামী ২০১৯-এর আগে যা আয়োজন হওয়া প্রয়োজন। বিএনপির দাবি আওয়ামী লীগ অলিক চিন্তার বশবর্তী। যদিও অর্থনীতির গতি সমপ্রতি কিছুটা শ্লথ হয়েছে, ব্যাংকিং খাত খারাপ হালে রয়েছে আর আইনশৃঙ্খলা টালমাটাল। তারপরও বড় কোন সঙ্কট আসন্ন বলে দৃশ্যমান নয়।
যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রসঙ্গে প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকার বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে। একটি বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে সংঘটিত গণহত্যা ও অন্যান্য অপরাধের বিচারের দীর্ঘ বিলম্বিত রায় সরকার ঝুলিয়ে রেখেছে। প্রায় সকল অভিযুক্তই হচ্ছে জামায়াতে ইসলামির সদস্য। ১৭ই সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট জামায়াতের একজন নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড লঘু করেছে। গত বছর যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ রাজপথে মারাত্মক অস্থিরতার সূত্রপাত ঘটায়। যুদ্ধাপরাধ বিচারের রায় বাতিলের সর্বশেষ আদেশটি ইঙ্গিত করে, রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে এগুলো প্রয়োজনীয়তা কার্যত ফুরিয়েছে।
এতে বলা হয়, কোনো কার্যকর বিরোধী দল না থাকায় শেখ হাসিনা খুব কম চাপে রয়েছেন। আপাত অসম এ লড়াইয়ে তিনি এখন একাই জয়ী।
ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনঃ ‘ওয়ান অ্যান্ড অনলি ওয়ান’