ডেস্ক রিপোর্টঃ অর্থনীতির প্রধান বাহন টাকা। এই টাকা তৈরি করতেও প্রয়োজন টাকা। মানুষের হাতে হাতে ঘোরে কাগজের তৈরি এ পণ্যটি। ব্যবহারকারীদের ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় টাকা ছেঁড়ে, পোড়ে কিংবা রং পরিবর্তন করে। ফলে একসময় তা ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। তখন বাংলাদেশ ব্যাংক সেসব টাকা পুড়িয়ে ফেলে। এরপর নতুন করে সে টাকা ছাপতে সরকারকে খরচ করতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা।
মানুষের প্রধান বিনিময়-মাধ্যম এ টাকা ছাপা বাবদ বছরে কী পরিমাণ টাকা ব্যয় হয়, তা উঠে এসেছে এক অনুসন্ধানে।
পোড়ানো টাকার সমপরিমাণ নতুন টাকাসহ চাহিদামাফিক টাকা বাজারে ছাড়তে, এর ছাপাখানা ‘দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন (বাংলাদেশ) লিমিটেড’র (টাঁকশাল) প্রতিবছর খরচ হয় ১৬৪ লাখ কোটিরও বেশি টাকা ।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জিয়াউদ্দীন আহমেদ। উল্লেখ্য, এই বিষয়ে গণমাধ্যমে এটিই তার প্রথম সাক্ষাৎকার।
তিনি জানান, দুই টাকার একটি নোট তৈরি করতে প্রতিষ্ঠানটির খরচ হয় ১.৩৫ টাকা। পাঁচ টাকার নোট তৈরিতে ১.৬১, ১০ টাকার নোটে ১.৯৭, ২০ টাকার নোটে ২.০৪ এবং ৫০ টাকার নোটে ২.০১ টাকা খরচ হয়।
টাঁকশালের এমডি জিয়াউদ্দীন আহমেদ আরো জানান, ১০০ ও ৫০০ টাকার একেকটি নোট তৈরিতে খরচ হয় যথাক্রমে ৩.৯০ ও ৪.১৮ টাকা। এ ছাড়া ১০০০ টাকার প্রতিটি নোটের খরচ ৬.২০ টাকা।
এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত এক বছরে ছেঁড়া, ফাটা, পোড়া, পোকায় খাওয়া, রং লাগা এবং ময়লাযুক্ত পুরোনো বাতিল টাকা পোড়ানো হয়েছে ৭ হাজার ৭১ কোটি ৯৭ লাখ ৬৮ হাজার ৪০ টাকা। এর মধ্যে ১০০ টাকার নোট ১৫ কোটি ৬৬ লাখ ৭৯ হাজার ৫১৯টি, ৫০০ টাকার নোট ৮ কোটি ৬১ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩২টি এবং ১ হাজার টাকার নোট রয়েছে ৪৭ লাখ ৬২ হাজার ৪৬৬টি।
এসব তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতিবছর ১ হাজার টাকার নোট পোড়ানো হয় ৪৭ লাখ ৬২ হাজার ৪৬৬টি। যা নতুনভাবে তৈরি করতে খরচ হয় ২ কোটি ৯৫ লাখ ২৭ হাজার ২৮৯ টাকা। আর ৫০০ টাকার নোট পোড়ানো হয় ৮ কোটি ৬১ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩২টি। যা নতুনভাবে বাজারে ছাড়তে টাঁকশালকে খরচ করতে হয় প্রায় ৩৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা। আর সব মিলিয়ে এ খাতে বছরে খরচ হয় ১৬৪ লাখ কোটি টাকারও বেশি।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১০০, ৫০০ ও ১০০০ টাকার বান্ডিলে মোটা পিন মারার কারণেই টাকা বেশি ছিঁড়ে যায়। সাধারণ গ্রাহকরা এই পিন খুলতে পারে না। তাদের কাছে সব সময় খোলার যন্ত্র না থাকায় খুলতে গেলেই তা ছিঁড়ে যায়। একই সঙ্গে বড় সুই-সুতা দিয়ে বান্ডিলও করা হয়। এর ফলেও প্রতিনিয়ত টাকা ছিঁড়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া অনেক সময় বহনকারীদের অবহেলায়ও ছিঁড়ে যায় অসংখ্য টাকা।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মূল্যবান মুদ্রার বান্ডিলে পিন কিংবা সুতা লাগানো হয় না। কিন্তু বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত এই পদ্ধতি অবলম্বন করায় রাষ্ট্রের অনেক টাকা গচ্চা যাচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
টাকার বান্ডিলে পিন লাগানোর বিষয়টি স্বীকার করে বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মো. সাইফুল ইসলাম খান বলেন, ‘টাকায় লেখা, দাগ দেওয়া ও পিন লাগানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে ১ হাজার টাকার বান্ডিলে পিন মারা হচ্ছে, যা গাজীপুরের টাঁকশাল থেকেই পিন লাগিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়।’
দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘প্রতিবছরই টাকা তৈরিতে খরচ বাড়ছে। এর অধিকাংশ কাঁচামালই আমদানি করতে হয়। কাঁচামালের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। একই সঙ্গে অন্যান্য খরচও বাড়ছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘মানুষের অসচেতনতার কারণে অপচয় হচ্ছে দেশের কোটি কোটি টাকা । বহনকারীরা একটু সচেতন হলেও আমাদের অনেক টাকা বেঁচে যায়।’
উৎসঃ রাইজিংবিডি