হিটলার এ. হালিম: গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈরে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম ডাটা সেন্টার গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে সরকার। কালিয়াকৈরের হাইটেক পার্ক সংলগ্ন প্রায় ২০ একর জায়গার ওপর এই ডাটা সেন্টার গড়ে তোলার প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, ডাটা সেন্টার গড়ে তোলার জন্য মাঠ পর্যায়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। ন্যাশনাল ডাটা সেটার গড়ে তোলার জন্য কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক সংলগ্ন প্রায় ২০ একর জমি চিহ্নিত করে চূড়ান্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে সরকারের একটি প্রতিনিধি দল কালিয়াকৈরে গিয়ে ডাটা সেন্টারের জায়গা চূড়ান্ত করেছে। প্রতিনিধি দলে ছিলেন থাকছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ আইসিটি বিভাগের কর্মকর্তারা। এই দলে অারও ছিলেন চীনের একটি প্রতিনিধি দল। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলে (বিসিসি) চাহিদার নিরিখে প্রথম ন্যাশনাল ডাটা সেন্টার গড়ে তোলা হয়। টায়ার-টু এর আওতায় এই ডাটা সেন্টারে র্যাক রয়েছে ৬৭টি। নতুন করে কালিয়াকৈরে যে ডাটা সেন্টার গড়ে তোলা হবে সেটি হবে টায়ার-ফোর এর আওতায়। বিশালাকার এই ডাটা সেন্টারের র্যাকের সংখ্যা হবে ছয় শতাধিক।
চীনের কারিগরি সহায়তায় এই ডাটা সেন্টার গড়ে তোলা হবে। চীনের প্রতিষ্ঠিত এবং সুপরিচিত প্রযুক্তি পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জেডটিই-এর একটি প্রতিনিধি দল এখন বাংলাদেশ সফরে রয়েছে। প্রতিনিধি দলে জেডটিই’র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজারও ছিলেন। এই ধরনের বড় ডাটা সেন্টার গড়ে তুলতে গেলে যে ধরনের অবকাঠামো থাকা প্রয়োজন তা সংশ্লিষ্ট জায়গায় তা অাছে কিনা সফররত প্রতিনিধি দল সেসবও খতিয়ে দেখেন। টায়ার-ফোর‘র জন্য সংশ্লিষ্ট প্রকল্প এলকায় ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, সাশ্রয়ী মূল্যে উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, অাবাসন সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা থাকার নিয়ম রয়েছে। প্রতিনিধি দল এসব খতিয়ে দেখনে।
আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, যে আয়তনে এই ডাটা সেন্টার গড়ে উঠছে, নির্মাণ কাজ শেষ হলে তা হবে বিশ্বে পঞ্চম বৃহত্তম। তিনি বলেন, হাইটেক পার্কের যে বর্ধিত জায়গা রয়েছে (হাইটেক পার্কে আগে ছিল ২৩২ একর জায়গা। পরে যুক্ত হয়েছে আরও ৯৭ একর) সেই জায়গার প্রায় ২০ একর ডাটা সেন্টারের জন্য চূড়ান্ত করেছি আমরা। তিনি আরও জানান, ডাটা সেন্টার গড়ে তোলার বিষয়টি নিয়ে এখন জেডটিইর সঙ্গে নেগোসিয়েশনের পর্যায়ে রয়েছে। চলতি মাসে বাণিজ্যিক চুক্তি হয়ে গেলে আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বর নাগাদ ডাটা সেন্টারের কাজ শুরু করা হবে। সেই হিসেবে ২০১৫-’১৬ সালের মধ্যে ডাটা সেটার তৈরির কাজ শেষ হতে পারে।
আইসিটি বিভাগের যুগ্ম সচিব (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) শ্যামা প্রসাদ ব্যাপারী জানান, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে এ ধরনের ডাটা সেন্টার গড়ে তোলার কোনও বিকল্প নেই। তিনি নিজেও এই ডাটা সেন্টার গড়ে তোলার পরিকল্পনাকারীদের একজন। আগামী দিনে ডিজিটাল ডাটার কোনও অভাব হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, তখন এত সব ডাটা কোথায় রাখা হবে? এ কারণেই বিশাল ডাটা সেন্টার গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তিনি জানান, ডিজিটাল ভূমি রেকর্ড, জন্ম নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র সর্বোপরি দেশের ১৬ কোটি মানুষের তথ্য সংরক্ষণ করতে হলে বিসিসিতে যে ‘ন্যাশনাল ডাটা সেন্টার‘ রয়েছে তাতে জায়গা হবে না। এর সঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সব ধরনের তথ্য সংরক্ষণের জন্যই এই ডাটাবেজ গড়ে তোলা হচ্ছে।
তিনি বললেন, এটিএম (অটোমেটেড টেলার মেশিন) বুথে গিয়ে যদি টাকা তোলা সম্ভব হয় তাহলে কেন ভূমি রেকর্ডের বিভিন্ন দলিল-দস্তাবেজ (সিএস, এসএ ও আরএস পড়চা) এটিএম বুথের মতো যন্ত্র থেকে পাওয়া যাবে না। আর এসব পেতে গেলে আর বড় আকারে ডাটা সেন্টার লাগবেই।