জাতীয় সংসদের ‘ডিঅঙি রাইবো নিউক্লিক এসিড (ডিএনএ) বিল-২০১৪’ পাস হয়েছে। বুধবার জাতীয় সংসদে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে কোন তা কণ্ঠ ভোটে পাস হয়। বিলটির উপর জনমত যাচাই ও বছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব জমা দেন জাতীয় পার্টির সদস্য এম এ হান্নান এবং স্বতন্ত্র সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী ও হাজি মো. সেলিম। তাদের প্রস্তাব কণ্ঠ ভোটে নাকচ হয়ে যায়।
ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ ও উহার বিশ্লেষণ প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি নির্ধারণ, ডিএনএ নমুনা ও প্রোফাইলের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরি স্থাপন, জাতীয় ডিএনএ ডাটাবেজ প্রতিষ্ঠা ও আনুষাঙ্গিক বিষয়ে বিধান প্রণয়নে এ বিলটি পাস করা হয়। এ বিলটি কার্যকর হলে অপরাধী চিহ্নিত, পিতৃত্ব-মাতৃত্ব নিরূপণ কিংবা মৃতদেহ শনাক্ত করার মতো কাজ সহজ হবে বলে বিলটি পাসের আগে মন্ত্রী দাবি করেছেন।
পাস হওয়া বিলে ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরি স্থাপন ও জাতীয় ডাটাবেজ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীকে চেয়ারম্যান করে ১৮ সদস্যের একটি ফরেনিসিক ডিএনএ ল্যাবরেটরি উপদেষ্টা পরিষদ গঠনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, পুলিশ, বিশেষজ্ঞসহ বিশিষ্ট নাগরিকদের রাখার কথা বলা হয়েছে।
বিলে বলা হয়েছে, যদি কোনো ল্যাবরেটরি বা সংস্থা অননুমোদিতভাবে ডিএনএ কার্যক্রম পরিচালনা করে তাহলে ওই কার্যক্রমে জড়িত প্রত্যেক ব্যক্তির ৭ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড বা ২ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দন্ডই দিতে পারবেন আদালত। আর ডিএনএ নমুনা বা দেহগত পদার্থের নমুনা ধ্বংস, পরিবর্তন, দূষিতকরণ, জালকরণ কলা হলে অভিযুক্ত ব্যক্তি ৫ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড বা ১ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। অনুমোদিত নয় এমন কোন উপায়ে ডিএনএ সম্পর্কিত ডাটাবেজে প্রবেশ করলে ২ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড এবং ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন। অননুমোদিতভাবে ডিএনএ সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ বা প্রকাশ বা ব্যবহার করলে অপরাধী ব্যক্তি ৩ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড এবং ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।
আরো বলা হয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি অননুমোদিত বা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ডিএনএ সম্পর্কিত কোন তথ্য সংগ্রহ করেন তাহলে ৩ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড এবং ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন। আর দায়িত্বরত কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন ডিএনএ নমুনা বা এর ফলাফল হস্তান্তর বা প্রকাশ করেন তাহলে ৩ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড এবং ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন। নমুনা সংগ্রহে গাফিলতি করলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক বা তদন্তকারী কর্মকর্তা বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যের ২ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড এবং ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হবে।
বিলে উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়, ডিএনএ প্রোফাইলের মাধ্যমে ধর্ষণ, হত্যাসহ জঘন্যতম অপরাধের অপরাধী শনাক্ত, পিতৃত্ব, মাতৃত্ব ও ভাইবোনের সম্পর্ক নির্ধারণ বিদেশে অভিবাসী হতে ইচ্ছুকদের প্রয়োজনীয় ডিএনএ পরীক্ষা বা বংশের ধারা প্রদান এবং বিচ্ছিন্ন বিকৃত মরদেহ সনাক্ত করা যায়। এ বিলের মাধ্যমে নমুনা সংগ্রহ বিশ্লেষণ, ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা, উপদেষ্টা গঠন, কারিগরি কমিটি গঠন এবং ডিএনএ ডাটাবেজ তৈরির কথা বলা হয়েছে। গত বছরের ২৫ নভেম্বর মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনের খসড়াটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। এরপর গত ২৩ জুন বিলটি সংসদে উত্থাপনের পর তা অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।