স্টাফ রিপোর্টারঃ কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠানে খাদ্য পণ্য বিক্রির জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে লাইসেন্স পেতে অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্ছে। সেনেটারি কর্মকর্তা ব্যবসায়ীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, মাংস বিক্রেতা, ফলমূল বিক্রেতাসহ দোকোনে যেকোন খাদ্যপণ্য বিক্রি করার জন্য অনুমোদন বা লাইসেন্স নিতে হয়। সেটি প্রতিবছর নবায়নও করতে হয়। আর এই লাইসেন্সের জন্য সরকারি নতুনের জন্য ১০ ও পুরাতনের জন্য ৫ টাকা জমা দিতে হয়। আবেদন কারার একদিনের মধ্যে ওই লাইসেন্স পাওয়া যায়।
উপজেলার বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার ২০-২২টি বাজার রয়েছে। এগুলির মধ্যে কালিয়াকৈর বাজার, চন্দ্রা এলাকা, চন্দরা পল্লীবিদ্যুৎ বাজার, সফিপুর বাজার, মৌচাক ও ভান্নারা বাজার এলাকায় শত শত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব বাজারে প্রতিদিন মাংস বেচা কেনাও হয়ে থাকে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে খাদ্যপণ্য বিক্রির জন্য লাইসেন্স নেওয়ার বিষয়টি খুুবই গুরুত্বহীন ভাবে দেখেন। আবার অনেক ব্যবসায়ীরা আছেন যারা নিয়মিত লাইসেন্স সংগ্রহ করে থাকেন।
লাইসেন্স নিতে হয় কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেনেটারি বিভাগ থেকে। ওই বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন সেনেটারি কর্মকর্তা উৎপলা রাণী দাস। গত তিন মাস ধরে উৎপলা রানী দাস নিজেই বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছে ছুটে যান। সেখানে গিয়ে ব্যবসায়ীদের খাদ্যপণ্য বিক্রির লাইসেন্স করে দেন। কিন্তু তিনি এজন্য ২ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকেন। এপর্যন্ত তিনি দেড় থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কোন ব্যবসায়ী টাকা দিতে রাজি না হলে ভ্রাম্যমান আদালত দিয়ে অভিযান চালানোর ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায় করেন।
সম্প্রতি তিনি উপজেলার সফিপুর বাজার মাংস ব্যবসায়ী পান্না মিয়ার কাজ থেকে ৪ হাজার টাকা নেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে একদিন পর ওই টাকা ফেরত দিয়ে আসেন। গত এক সপ্তাহে তিনি কালিয়াকৈর বাস স্ট্যান্ড এলাকার বিসিমিল্লাহ হোটেলের মালিক আ. জলিলের কাছ থেকে ২ হাজার, মালয়েশিয়া হোটেলের মালিক সোনামিয়ার কাছ থেকে ২ হাজার, ইসলামিয়া হোটেলের মালিক মোহাম্মদ আলীর কাছ থেকে ৫০০, পলাশ মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক রঞ্জিত ঘোষের কাছ থেকে ২ হাজার, আদি ভৃঙ্গরাজ হোটেল ও মিষ্টান্ন ভান্ডার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা নিয়েছেন। ওই বাজার থেকে আরো বেশ কয়েকটি হোটেল ও খাদ্যপণ্য বিক্রির দোকান থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকার ব্যবসায়ী ইউনূস আলী জানান, সেনিটারি কর্মকর্তা উৎপলা রানী চন্দ্রা এলাকার চারটি হোটেল থেকে ৮ হাজার টাকা নিয়েছেন। টাকা দিতে অস্বীকার করলে অভিযান চালনোর ভয় দেখান।
সফিপুর এলাকার আল-মদিনা বেকারির মালিক মনির হোসেন জানান, গত কয়েকদিন আগে তিনি খাদ্য বিক্রির লাইসেন্স নবায়ন করেছেন। নবায়নের জন্য সেনেটারি কর্মকর্তার তার বেকারিতে এসে ২ হাজার টাকা নিয়েছেন।
এব্যাপারে কালিয়াকৈর উপজেলা সেনেটারি কর্মকর্তা উৎপলা রাণী দাসের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ফোনে এসব কথা হয় না অফিসে আসেন কথা বলা যাবে।
গতকাল সোমবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। ফের মুঠোফেনে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ আপনি আমার বস্ ? এসব বিষয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলবো কেন? সাংবাদিকরাওতো বেকারি গুলিতে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায় করে সেগুলি দেখেন না।’
কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কুমুর উদ্দিন বলেন, ‘এর আগেও তার বিরুদ্ধে কয়েকজন অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।’
গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. শাহ আলম শরীফ বলেন, ‘ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।’