ডেস্ক : সরকারি চাকরিজীবীদের স্ত্রী বা স্বামী সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না এমন বিধান করে নতুন বিধিমালার খসড়া তৈরি হচ্ছে। এছাড়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাজনীতিতে যুক্ত হলে তা হবে গুরুতর অসদাচরণ।
সরকারি চাকরিতে থেকে সরাসরি রাজনীতিতে অংশগ্রহণ বাংলাদেশে বিরল কোনো ঘটনা নয়। তাছাড়া রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেয়া আজকাল স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আবার সরকারি চাকুরে পেশাজীবীরা রাজনৈতিক আদর্শের নানা সংগঠনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। বিষয়টি এতটাই বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সরকারও এটা নিয়ে বিব্রত। তাই সরকারি চাকরিজীবীদের আচরণ বিধিমালা সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘সরকারি কর্মচারীদের আচরণ বিধিমালা সংশোধনের কাজ চলছে। এরই মধ্যে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাছে মতামত জানতে চওয়া হয়েছে এবং তারা মতামত দিয়েছে। এ নিয়ে কয়েক দফা বৈঠকও হয়েছে। তাই শীঘ্রই এটা চূড়ান্ত হবে।’
প্রচলিত সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালায় সরকারি কর্মচারীদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও, পরিবার পরিজনের বিষয়ে কিছু বলা নাই। শুধু বলা আছে যে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্ত্রী বা স্বামী রাজনীতিতে জড়িত থাকলে তা সরকারকে জানাতে হবে। কিন্তু এই বিধান বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে না। মন্ত্রী এমপিসহ অনেক রাজনৈতিক নেতার স্বামী বা স্ত্রী সরকারি চাকরি করলেও তাঁরা সরকারকে তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানাচ্ছেন না। এমনকি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেরাও রাজনীতিতে জড়াচ্ছেন। নিজের এলাকায় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন, প্রভাব বিস্তার করছেন।
এ রকম অনেক অভিযোগ জমা পড়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। আর সরকারি চাকুরেদের রাজনীতিতে এই অতি উৎসাহের লাগাম টেনে ধরতেই নতুন নীতিমালা কঠোর করা হচ্ছে। তবে নতুন এই নীতিমালা প্রযোজ্য হবে নীতিমালা তৈরির পর যারা সরকারি চাকরিতে ঢুকবেন, তাদের জন্য।
এ নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব আলি ইমাম মজুমদার বলেন, ‘সরকারি চাকরিজীবীরা রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না এই নীতিমালা আগে থেকেই আছে। কিন্তু এটা কেউ কেউ মানছেন না। তবে সরকারি চাকরিজীবীদের স্বামী বা স্ত্রী সক্রিয় রাজনীতি করতে পারবে না এ ধরণের বিধিমালা করা সঠিক হবে না। কারণ এতে ব্যক্তির নাগরিক অধিকার খর্ব হবে। প্রত্যেক ব্যক্তিরই স্বাধীনভাবে বৈধ পেশা বা কাজ বেছে নেয়ার অধিকার আছে। তাই কেউ সরকারি চাকরি করলে তার স্বামী বা স্ত্রী রাজনীতি করতে পারবেন না, তা হতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘আসল সমস্যা অন্য জায়গায়। আর সেটা হলো স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার প্রশ্নে। কোনো সরকারি চাকুরে যেন তার রাজনীতিবিদ স্বামী বা স্ত্রীর ক্ষমতা ব্যবহার করে বাড়তি বা অবৈধ সুবিধা নিতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনীতি থেকে দূরে রাখার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ যারা সরকারে যান, তারা প্রশাসনকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করেন। এর সুবিধা নিয়ে কিছু অতি উৎসাহী, সুবিধাবাদী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।’
আলি ইমাম মজুমদার বলেন, ‘আমি আমার চাকরি জীবনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় দেখেছি যে, অধিকাংশ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে চান। কিন্তু কখনো কখনো তারা বাধ্য হয়ে রাজনৈতিক হয়ে ওঠেন। দলবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী হাতে গোনা।’
জানা গেছে, নতুন বিধিমালায় সরকারের অনুমতি ছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ইচ্ছেমতো সম্পদের মালিক হতে পারবেন না। প্লট, ফ্ল্যাট বা গাড়ি কিনতে হলে অর্থের উৎস সম্পর্কে জানিয়ে সরকারের অনুমতি নিতে হবে। আর উৎস হতে হবে বৈধ এবং অবশ্যই গ্রহণযোগ্য।
সূত্র : ডিডব্লিউ