জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক সম্পর্কে প্রশাসনের নেতিবাচক মনোভাব থাকলেও এর আকর্ষণ থেকে দূরে থাকতে পারছে না খোদ সরকার। বরং নেতিবাচক ধারণাকে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগাতে এ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটিতে যুক্ত হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সব কর্মকর্তাকে। উদ্দেশ্য হচ্ছে সরকারকে আরও বেশি জনসম্পৃক্ত করা।
সরকারের সেবা আরও বেশি করে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া। এই অভিনব উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সব সচিবের কাছে সম্প্রতি চিঠিও পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব আবুল কালাম আজাদ সইকৃত ওই চিঠিতে ফেসবুকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা সংস্থার নামে পৃথক গ্রুপ বা পেজ খোলার পাশাপাশি ওইসব গ্রুপে নিয়মিত আড্ডার মাধ্যমে সরকারের নীতিনির্ধারণী বিষয় নিয়ে আলোচনা এবং কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনার ব্যাপারেও উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। আর গ্রুপ খোলা বা আড্ডা আয়োজনের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পরিচালিত অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এ টু আই) কর্মসূচির সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, আপনি অবগত আছেন যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বিভাগ, অধিদফতর ও জেলা প্রশাসন তাদের দাফতরিক কাজে ফেসবুক ব্যবহার করে দৈনন্দিন যোগাযোগসহ নাগরিক সেবা প্রদান, সমস্যা সমাধান, সেবায় উদ্ভাবন বিষয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা চলমান রেখেছে। একাধিক দফতর ফেসবুক-এর মাধ্যমে নাগরিকদেরও সম্পৃক্ত করেছে। এই উদ্যোগ জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছানো নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সব সরকারি কর্মকর্তাকে জরুরি ভিত্তিতে ওই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটিতে যুক্ত হওয়ার পরামর্শ দিয়ে চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ফেসবুকে পাবলিক সার্ভিস ইনোভেশন বাংলাদেশ গ্রুপ খোলা হয়েছে। এতে বর্তমানে একাধিক সচিবসহ ৩ হাজার ১৪৭ জন সরকারি কর্মকর্তা যুক্ত আছেন। আমি নিজেও এই গ্রুপের সদস্য।
সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে নাগরিক সেবার উদ্ভাবনী সংস্কৃতিকে বেগবান করাই এই গ্রুপের লক্ষ্য। এতে নাগরিক সেবায় উদ্ভাবনী উদ্যোগ উপস্থাপনা ও পর্যালোচনা, উদ্ভাবন বাস্তবায়ন বিষয়ক সমস্যা ও সমাধান এবং একাধিক নীতিনির্ধারণী বিষয়ে সংলাপ চলমান রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে সরকারের এক সচিব জানান, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পাশাপাশি তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এ ধরনের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হলে পুরো প্রশাসনকেই এর সঙ্গে যুক্ত করা দরকার। কারণ বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের ১০০ কোটিরও বেশি লোক এ যোগাযোগ মাধ্যম নিয়মিত ব্যবহার করে থাকে। জনগণের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের জন্য এখন ফেসবুক অন্যতম একটি মাধ্যম।
প্রসঙ্গত, বিশ্বের অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক, সামাজিক ব্যক্তিত্ব ফেসবুক ও টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে অভ্যস্ত। জাতিসংঘের বিভিন্ন দফতরসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা এবং রাজনৈতিক দলের নামেও গ্রুপ ও পেজ দেখা যায় এসব যোগাযোগ মাধ্যমে। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নামে ফেসবুকে অনেক আগেই পেজ খোলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় নিয়মিত ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও রাষ্ট্রীয় অনেক বিষয় টুইটারে শেয়ার করেন। এমনকি দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের ঢাকা সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টিও তিনি টুইটারে শেয়ার করেছিলেন। গত মাসে ফেসবুক পরিচালনা পর্ষদের প্রধান কর্মকর্তা শেরলি স্যান্ডবার্গের সঙ্গে বৈঠকও করেন মোদি। বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুক হতে পারে সরকার ও জনগণের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের অন্যতম মাধ্যম। জনগণের সংকট সরাসরি উপলব্ধি করতে এখন যে কোনো দেশের সরকার ফেসবুকের শরণাপন্ন হতে পারেন।