ডেস্ক রিপোর্ট: বিশ্ব মিডিয়ায় জানান দিতে ও মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএসআইএসের (ইসলামিক স্টেট ইন সিরিয়া অ্যান্ড দ্য লেভান্ত)-এর সহযোগিতা পাওয়ার জন্য দেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীকে হামলা চালিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করছিল জেএমবি। এছাড়াও মন্ত্রী পরিষদের কয়েকজন সদস্যসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালানোর প্রস্তুতিও নিয়েছিল তারা। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত জঙ্গিদের কাছ থেকে এ সব তথ্য পাওয়া গেছে বলে দাবি করেন ডিএমপির মুখপাত্র জয়েন্ট কমিশনার মনিরুল ইসলাম।
এছাড়া বর্তমানে জেএমবির প্রধান আমির আব্দুল্লাহ আল তাসনিম ওরফে নাহিদকে এ লক্ষ্যেই পলাতক জঙ্গিরা নানা পরামর্শ দিয়ে আসছিল। স্কুল, বিশ্ববিদ্যালয়ে জেএমবির আলাদা ইউনিট খুলতেও তারা কাজ করছিল এবং ময়মনসিংয়ের ন্যায় জঙ্গি ছিনতাইয়েরও ছক আঁটছিল তারা।
গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে, ভালোভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে আমরা ধারণা করছি। তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমরা আরো জানতে পেরেছি যে, গ্রেপ্তারকৃত জঙ্গিরা ইরাক ও সিরিয়ায় শক্ত অবস্থান নেওয়া আইএস জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছিল এবং অনেকাংশে তারা যোগাযোগ করতে সক্ষমও হয়েছিল। এছাড়া দেশে একটা অস্থিরতা তৈরির জন্য দেশের নামিদামি ব্যক্তিদের হত্যা করার একটা টার্গেট নিয়ে তারা কাজ করছিল। বিদেশে জিহাদের প্রস্তুতি হিসেবে অনেকে পাসপোর্টও সংগ্রহ করেছিল। প্রাথমিকভাবে তারা ভিভিআইপি ও ভিআইপিদের হত্যার টার্গেট করে। তবে প্রাথমিক স্তরে জঙ্গিরা সবাই কুংফু কারাতের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, ‘চাঞ্চল্যকর ফারুকী হত্যার পেছনে তাদের হাত রয়েছে কিনা তাও আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এ ব্যাপারে আমরা কিছু তথ্যও পেয়েছি। তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হবে।’ আটককৃতদের মধ্যে মাহমুদ ইবনে বাশার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আর সিকান্দার আলী ওরফে নকি নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। নকিকে ব্লগার রাজিব হায়দার হত্যা মামলার সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় সেই সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। মনিরুল ইসলাম জানান, তাসনিম তার এই সহযোগীদের নিয়ে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করার চেষ্টা করছিলেন। এ কাজে সহায়তা করছে নকি ও বাশার। কারণ তারা টেকনোলজিতে পারদর্শী।
আইএস জঙ্গিদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন: সিরিয়া ও ইরাকে আইএস জঙ্গিদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছে জেএমবি। তবে এ সম্পর্ক বেশিদূর এগোয়নি। ইন্টারনেটে ই-মেইল প্রদানের মাধ্যমে হয়তো কিছুদূর এগিয়েছে। বিভিন্ন হামলা করে মিডিয়ায় আসার মাধ্যমে তাদের যোগসূত্র আরো সহজ হতো বলে জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গিরা জানিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে শাখা খোলার উদ্যোগ: আটককৃত জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, গ্রেপ্তারের বাইরে থেকে জঙ্গিরা বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের কর্মী বাড়াতেও কাজ করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বাশার ও নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নকি এই কাজটি করে আসছে। জিহাদে উজ্জীবিত করতে নানা কৌশলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় তারা আসা-যাওয়া করতো।
জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা: গ্রেপ্তারকৃত জঙ্গিদের আবারো ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করছিল জঙ্গিরা। যেসব জঙ্গি কারাগারে রয়েছে তাদের কোনো একটি স্থান হতে ছিনতাই করার মতো পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের জন্য সংগঠিত হচ্ছিল।
নারী সদস্য সংগ্রহ: জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গিরা জানায় বর্তমানে নারী সদস্য সংগ্রহ করছেন। এই নারী সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে তাদের তথ্য আদান প্রদান করবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়াতে এটাও এক ধরনের কৌশল বলেও জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।
পলাতক জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ: গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, ময়মনসিংয়ের ত্রিশালে পলাতক ২ জঙ্গি বোমারু মিজানসহ অপর একজন তারা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। জেএমবির আরেক দুর্র্ধর্ষ নেতা সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা সোহেল এখন ভারতে পলাতক এছাড়াও সাইদুর রহমানের জামাতা পাকিস্তানে পলাতক রয়েছে। পলাতক জঙ্গিরা তাসনিমকে নানা ধরনের তথ্য ও পরিকল্পনা দিয়ে সাহায্য করে আসছিল। পাশাপাশি বিভিন্ন হামলার পরিকল্পনা দিয়ে আসছিল।
পার্বত্য অঞ্চলে ট্রেনিং ক্যাম্প: গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেন, বান্দরবানে জেএমবির ট্রেনিং ক্যাম্প রয়েছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে। এ সব ক্যাম্পে জেএমবির নতুন সদস্যদের কুংফু, কারাতেসহ নানা ধরনের শারীরিক কসরত সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ডিবির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘তাসনিমের বিরুদ্ধে গাজীপুর ও টাঙ্গাইলে হত্যা ও বিস্ফোরণ সংক্রান্ত ২০টিরও বেশি মামলা রয়েছে বলে ইতোমধ্যে জানা গেছে। সে জেলে থেকে বের হয়ে বর্তমানে আবারও একই কাজ করে যাচ্ছিল। তার বড় ভাই আব্দুল্লাহ আল সোহাইলও গাজীপুর কোর্টে বোমাহামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। আটক অন্য সদস্যদের ব্যাপারেও খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।
সূত্র: আমাদের সময়