গাজীপুর জেলা সদরের জয়দেবপুর থানার নতুন ওসি তালা ভেঙ্গে নিজ অফিসে প্রবেশ করেছেন। মঙ্গলবার রাতে জয়দেবপুর থানায় এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সোমবার রাতে জয়দেবপুর থানায় নতুন ওসি হিসেবে যোগ দেন রেজাউল হাসান। পুরাতন ওসি এস এম কামরুজ্জামান নতুন ওসিকে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়ে তার কক্ষে তালা মেরে চলে যান। মঙ্গলবার রাতে পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে ওসির কক্ষের তালা ভাঙ্গার পর নতুন ওসি নিজ কক্ষে প্রবেশ করেন।
বুধবার দুপুর ১টা পর্যন্ত ওসি কামরুজ্জামানের সন্ধান দিতে পারেনি জেলা পুলিশ। থানার ডিউটি অফিসার আরশাদ হোসেন এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পুরাতন ওসি কামরুজ্জামান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অফিসের চাবি, সরকারি মোবাইল ফোন থানায় বুঝিয়ে দিয়ে যাননি।
থানা পুলিশ কন্ট্রোল রুমের অপারেটর জানান, আইনত তিনি সরকারি নাম্বার নিয়ে যেতে পারেন না।
এদিকে, মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত কামরুজ্জামান থানায় না আসায় গুঞ্জন শুরু হয়। বেলা বাড়লেও কামরুজ্জামান থানায় আসেননি। ফলে সারাদিন ওসির কক্ষে তালা ঝুলে থাকে। নতুন ওসি সেকেন্ড অফিসারের কক্ষে বসে সারাদিন ওসির দায়িত্ব পালন করেন।
ওসির তালাবদ্ধ কক্ষের ছবি সংবাদকর্মীরা যাতে তুলতে না পারেন সেজন্য ওসির কক্ষের সামনে মঙ্গলবার সকাল থেকেই পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সন্ধ্যায় গাজীপুরের নবাগত পুলিশ সুপার মো. হারুনুর রশিদের উপস্থিতিতে ওসির কক্ষের তালা ভাঙ্গার পর নতুন ওসি চেয়ারে বসেন।
গাজীপুরের একাধিক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, পুরাতন ওসি কামরুজ্জামান ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) উপ-পরিদর্শক (এসআই) থেকে পদোন্নতি পেয়ে বিধি বহির্ভূতভাবে একই জেলার সদর থানার সরাসরি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পদে যোগদান করেন। একই পদে দুই বছর থাকার নিয়ম থাকলেও তা ভঙ্গ করে ওসি কামরুজ্জামান প্রায় চার বছর জয়দেবপুর থানায় দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন সময় তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তিনি সেখানে থেকে যান।
সূত্র জানায়, গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকার সরকারি জমি দখল, জেলার বিভিন্ন স্থানে নামে-বেনামে জমির মালিক হওয়া, সাধারণ মানুষের জমি দখলে সহযোগিতা করা, মাদক ব্যবসা ও জনগণের নিকট থেকে উৎকোচ গ্রহণের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হন কামরুজ্জামান। ন্যায় বিচারের দাবিতে ভুক্তভোগীরা বহুবার থানার ভেতরে ও বাইরে বিক্ষোভ মিছিলও করেন।
গোয়েন্দা সূত্রের সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশের উপর মহলের নির্দেশে একবার কামরুজ্জামানের পাসপোর্টও জব্দ করা হয়। পুলিশের গোপন সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে কামরুজ্জামান জয়দেবপুর থানায় দাপটের সঙ্গে চাকুরী করেন। সোমবার রাতে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়ে লাপাত্তা হওয়ার পেছনে ক্ষমতার দাপট থাকতে পারে বলে সূত্রের দাবি।
এসব বিষয়ে জানতে জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সরকারি মোবাইলে বার বার ফোন করলে ফোন কেটে দেওয়া হয়। থানার দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তা ওসি কামরুজ্জামানের বিভিন্ন অনিয়মের সত্যতা নিশ্চিত করলেও নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন।