জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আল্লামা দেলোওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিলের চূড়ান্ত রায় আজ বুধবার ঘোষণা করা হবে। এর আগে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে জাড়িত থাকার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দায়ের করা মামলায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এর পর এ রায়ের বিরুদ্ধে উভয় পক্ষই আপিল করে। সে আপিলের রায় আজ ঘোষণা করবে আপিল বিভাগ।
মঙ্গলবার বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এ তথ্য দেয়া হয়েছে। এতে দেখা যায়, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বুধবারের কার্যতালিকার প্রথমেই সাঈদীর আপিলটি রায় ঘোষণার জন্য রাখা হয়েছে।
জানা যায়, গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অপরাধে সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। সাঈদীর বিরুদ্ধে আনা ২০টি অভিযোগের মধ্যে ৮টিই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। এর মধ্যে ইব্রাহিম কুট্টি হত্যাকাণ্ড এবং বিসাবালী হত্যাকাণ্ডের দায়ে সাঈদীকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়। এ দুটি অভিযোগে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়ায় অপর ৬টি অভিযোগের ক্ষেত্রে আলাদা দণ্ড দেয়নি ট্রাইব্যুনাল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে গত বছরের ২৮ মার্চ সাঈদী আপিল করেন। পক্ষান্তরন দোষী সাব্যস্ত হওয়া ৬ অভিযোগে সাজা চেয়ে আপিল করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ।
তারও আগে মুক্তিযুদ্ধকালের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাগুলোর মধ্যে প্রথম আপিল নিষ্পত্তি হয় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায়। গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল-২ কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিলেও আপিল বিভাগ গত ১৭ সেপ্টেম্বর তাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়। এর পর গত ১২ ডিসেম্বর রাতে ওই দণ্ড কার্যকর হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে একমাত্র ফাঁসির ঘটনা এটিই।
আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ এপ্রিল বুধবার প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতির বেঞ্চ এ রায় অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখেন। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন- বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
দুটি আপিলের ওপর গত ১৫ এপ্রিল মঙ্গলবার শুনানি শেষ হয়েছে। ওই দিন আসামিপক্ষের যুক্তি খণ্ডন শেষে রাষ্ট্রপক্ষ জবাব দেয়। তবে রায়ের দিন ধার্য না করে ওইদিন দুটি আবেদনের ওপর আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছিলেন আদালত। আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের করা আলাদা দুটি আবেদন সেদিন খারিজ করে আদালত। একই সাথে আপিলের ওপর রায় অপেক্ষমান রাখেন। আজ বুধবার এ রায়ের মধ্যদিয়ে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের ২য় মামলাটির আপিল বিভাগে নিষ্পত্তি হতে যাচ্ছে।
আদালত সূত্র জানায়, এর আগেই ইব্রাহিম কুট্টি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ সংক্রান্ত নথি তলবের জন্য আবেদন করে আসামিপক্ষ। আবেদনে মামলার রেজিস্টার খাতা (জিআর) তলবের আরজি জানানো হয়। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধের পর দালাল আইনে গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মামলার নথি তলবের জন্য আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ১৫ এপ্রিল মঙ্গলবার এ দুটি আবেদনের ওপর শুনানি শেষ হয়। আবেদন দুটি পরদিন বুধবার খারিজ করে আদালত।
পরে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আমরা আশা করি ন্যায়বিচার পাব। ইব্রাহিম কুট্টি ও বিসাবালীকে হত্যার দায়ে ট্রাইব্যুনাল সাঈদীকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন। আপিল বিভাগ তা বহাল রাখবেন। এ ছাড়া বাকি ৬টি অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল তাকে কোনো সাজা দেননি। সেগুলোতেও সর্বোচ্চ আদালত সাজা দেবেন। এ ৬টি অভিযোগে কী সাজা দেয়া হবে তা আদালতের বিষয়। তবে আমরা সাজা চেয়েছি।
১৯৭১ সালে সাঈদী কোনো অপরাধের সাথে জড়িত ছিলেন না বলে আসামিপক্ষের দাবি প্রসঙ্গে এটর্নি জেনারেল বলেন, কাদের মোল্লাও বলেছিলেন, তিনি একাত্তরে কোনো অপরাধের সাথে জড়িত ছিলেন না। কসাই কাদের নামের আরেকজন ব্যক্তি এসব অপরাধ করেছেন। কিন্তু আদালতে কাদের মোল্লার অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। আমরা আশা করি, সাঈদীর মামলায়ও একই ঘটন ঘটবে। পক্ষান্তরে সাঈদীর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে ইব্রাহিম কুট্টি হত্যা মামলা সংক্রান্ত নথি তলবের আবেদনটি আদালত খারিজ করে দিয়েছেন। তার পরও আমরা আশাবাদী যে ন্যায়বিচার পাব। সাঈদীর বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে সর্বোচ্চ আদালত তাকে সে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেবেন।
প্রসঙ্গত ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল- ১ এ প্রথম অভিযুক্ত ব্যক্তি হিসাবে সাঈদীর বিচার শুরু হয়। এর পর ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করা হয়। এ দণ্ড থেকে অব্যাহতি চেয়ে আপিল করেন সাঈদী।
অপরদিকে দণ্ড বহাল ও ৬ অভিযোগে দণ্ড ঘোষণার আরজি জানিয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। আপিলের শুনানি শেষ হওয়ার প্রায় ৫ মাস পর আজ মামলাটির চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হচ্ছে।