নয়া দিল্লিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারত আনুষ্ঠানিক আলোচনায় বাংলাদেশকে ভারতের ১০০ কোটি ডলারের ঋণ প্রদানের বিষয়টি অধিক গুরুত্ব পেয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর মধ্যে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নতুন ঋণ প্রদানের দাবি জানালে ভারত বিষয়টি বিবেচনা করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে।
দুপক্ষই এ অর্থ ব্যবহারকারি প্রকল্প নিয়ে আলোচনার জন্য পুনরায় বৈঠকে বসবে। আজ শনিবার ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ভারত-বাংলাদেশ যৌথ কনসালটেটিভ কমিশনের (জেসিসি) তৃতীয় বৈঠকের অংশ হিসেবে এটি আলোচনা করা হয়।
বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সামগ্রীক অবস্থা পর্যালোচনা ও ২০১৩ সালের ১৬ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত জেসিসির দ্বিতীয় বৈঠকের পর থেকে দুই সরকার গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। বৈঠকে বলা হয়, দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা ও সম্পর্ক উন্নয়নে যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ নিরাপত্তা কানেটিভিটি, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, পানি, বিদ্যুৎ, নৌ, নবায়নযোগ্য জ্বালানী, উন্নয়ন সহযোগিতা, শিল্প ও সংস্কৃতি, জনগণ পর্যায়ে সফরবিনিময় মানব সম্পদ উন্নয়ন উল্লেখযোগ্য।
বৈঠকে দু’দেশের মধ্যকার বিরাজমান সম্পর্ক বজায় রাখতে তারা একমত হন। পদস্থ সরকারি কর্মকতাদের নিয়মিত বৈঠক করা এবং বিদ্যুৎ,বাণিজ্য ও নৌ সচিব পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে দু’দেশের জল সীমানায় নিষ্পত্তিতে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়। এ বিরোধের অবসানে বঙ্গোপসাগরে জলজ সম্পদের অনুসন্ধানে সহযোগিতার পথ প্রশস্ত হবে।
বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ নিরাপত্তা বিষয়ে বাংলাদেশের সহযোগিতা প্রদানের প্রতিশ্রুতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন। এতে বলা হয় দু’টি দেশের কোন দেশই অন্যদেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ভূমি ব্যবহার করতে দেবে না। দুই মন্ত্রীই সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার (সিবিএমপি) কার্যকর বাস্তবায়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন। বৈঠকে সীমান্ত অপরাধমূলক কর্মকান্ড অবৈধ চলাচলা, সহিংস ঘটনা এবং মর্মান্তিক প্রাণহানির ঘটনা প্রতিরোধে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা আরো জোরদারের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সীমান্তে প্রাণহানীর ঘটনা কমিয়ে আনতে ভারত সরকার গৃহীত পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
বৈঠকে উভয় পক্ষ সীমান্তে প্রাণহানীর সংখ্যা কমিয়ে শুন্যতে নিয়ে আনতে উভয় পক্ষ সম্মতি প্রকাশ করেন। তারা সীমান্ত এলাকায় অসমাপ্ত সীমান্ত বেড়ার কাজ যতদ্রুত সম্ভব সম্পন্œ করার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুতারোপ করেন। ফুলবাড়ি বাংলাবন্ধে অবিলম্বে ইমিগ্রেশন সুবিধা চালু করতে বাংলাদেশের অনুরোধের জবাবে ভারতের পক্ষ থেকে বৈঠকে জানানো হয়, ফুলবাড়িতে ইতোমধ্যেই নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে এবং শিগগির ইমিগ্রেশন পোস্ট চালু করা সম্ভব হবে।
বৈঠকে জানানো হয়, দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বৈঠকে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সকল বাধা দূর করতে তারা সম্মত হন। বৈঠকে বলা হয়, ২০১১ সালে বাংলাদেশী পণ্যের জন্য দেয়া শুল্কমুক্ত সুবিধায় বাংলাদেশী পণ্যের ভারতের বাজারে প্রবেশে পদক্ষেপ গ্রহণের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। বৈঠকে তারা দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষায় একমত হন। ভারতের বাজারে রফতানিতে বাধাগ্রস্থ হওয়া বাংলাদেশী পণ্যের একটি তালিকা ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। ভারতের পক্ষ থেকে এই তালিকাটি যাচাই করে দেখার আশ্বাস দেয়া হয়। বৈঠকে বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগ বৃদ্ধির ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয়।
বৈঠকে বলা হয়, বাণিজ্য ঘাটতি শুধুমাত্র কমালে চলবেনা, বাংলাদেশী পণ্যের রফতানিও বৃদ্ধি করতে হবে। ভারতের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক জোনের জন্য জমি বরাদ্দ করতে বাংলাদেশের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হয়। বৈঠকে দু’মন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি নবায়নের জন্য আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণে সম্মত হয়। ২০১৫ সালের ৩১ মার্চ এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। বৈঠকে তারা সীমান্ত হাটের সুফল লাভের উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ-ত্রিপুরা সীমান্ত এলাকায় আরো সীমান্ত হাট করা হচ্ছে। এ সকল হাটের অগ্রগতিতে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেন।