দূর্নীতির পক্ষে অপসাংবাদিকতা সামাজিক অপরাধ

এম. নজরুল ইসলাম আজহারঃ গত ২৪ আগস্ট সাপ্তাহিক বাংলাভূমি’তে ‘দুর্নীতিবাজ ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা শেফালী আক্তার একই স্টেশনে ১৪ বছর’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। ২৮ আগস্ট গাজীপুর থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিকে প্রথম পৃষ্ঠায় তিন কলামে একটি বিশাল প্রতিবাদ প্রকাশ করা হয়। প্রতিবাদটিতে শেফালী আক্তারের উদ্ধৃতি রয়েছে। পরবর্তীতে এর ধারাবাহিকতায় গত ৩১ আগস্ট বাংলাভূমি’তে ‘ভূমি উপসহকারী শেফালীর দূর্নীতির নেটওয়ার্ক’; সাব হেডলাইন-‘ঘুরে ফিরে একই অফিসে ১৪ বছর’ শিরোনামে আরো একটি সংবাদ প্রকাশ করা হয়। ওইদিনই জেলা প্রশাসক ভূমি উপসহকারী শেফালী আক্তারকে অন্যত্র বদলী করেন।

৩১ আগস্ট বাংলাভূমি’তে সংবাদ প্রকাশের পরদিন ওই দৈনিকের শেষের পাতার লীড নিউজ ‘গাজীপুরে বাড়িয়া ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা শেফালী আক্তারের বিরুদ্ধে কল্প কাহিনী’ শিরোনামে দূর্নীতিবাজ ভূমি উপসহকারীর পক্ষে একটি ফরমায়েস সংবাদ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি প্রথম পৃষ্ঠায় তিন কলামে শেফালী আক্তার পূর্বের মতো করে আরো একটি প্রতিবাদ প্রকাশ করেন। শেফালী আক্তার প্রতিবাদ লিপিতে প্রকাশিত সংবাদটির সমস্ত তথ্য ও উপাত্ত মিথ্যা ও কাল্পনিক বলেছেন।

সাপ্তাহিক বাংলাভূমি’তে যে প্রকাশিত সংবাদের স্বপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণাদি হাতে রয়েছে। সাপ্তাহিক বাংলাভূমি একজন সরকারি কর্মচারীর বিভিন্ন অনিয়ম দূর্নীতি বিষয়ে লিখছেÑ আর ওই দৈনিকটিসহ একটি সাপ্তাহিকে ওই কর্মচারীর পক্ষে সাফাই সংবাদ প্রকাশ করছেন। আবার দৈনিকটিতে দু’বার প্রতিবাদও ছাপানো হয়েছে। যা সমপূর্ণভাবে অনৈতিক একটি কাজ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই দু’টি পত্রিকার সম্পাদক ভূমি অফিসের কয়েকজন নামধারী খারিজের দালালদেরকে সাংবাদিকতার আইডি কার্ড ধরিয়ে দিয়েছেন খারিজ বাণিজ্যের জন্য। তাদের কাছ থেকে ওই পত্রিকার সম্পাদকও টু-পাইস কমিশন পেয়ে থাকেন। ওইসব খারিজের দালালরা ভূমি অফিসে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তদবির করে খারিজের ফাইল ছাড়িয়ে নেন। শেফালীর সাথে তাদের সুবিধা দেয়া-নেয়ার যোগসূত্র রয়েছে। তাছাড়াও এক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ অন্য পত্রিকায় দেওয়ার নিয়ম নেই। ওই পত্রিকার সম্পাদক কিভাবে সাংবাদিকতার নিয়মনীতি বা নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে এ কাজটি করেছেন তা আমার জানা নেই। আর সরকারী কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর পত্রিকায় প্রতিবাদ ছাপাতে হলে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি নিতে হয়। অথচ শেফালী আক্তার কোন অনুমতি না নিয়ে একাধিকবার প্রতিবাদ ছাপিয়েছেন। এক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক কেন নিরবতা পালন করছেন তা আমাদের বোধগম্য নয়।

কোন পত্রিকায় তথ্যভিত্তিক সংবাদ প্রকাশ করা হলে অন্য কোন পত্রিকায় সাফাই সংবাদ প্রকাশ করা নজিরবিহীন। একজন দূর্নীতিবাজ সরকারী কর্মচারীর পক্ষে ওই পত্রিকা দু’টি কী স্বার্থে সাফাই সংবাদ প্রকাশ করেছে তা অনুমান করা কঠিন নয়। তবে আমি ওই পত্রিকা দুটির সম্পাদক সাহেবদের বলবো, সাংবাদিকদের বিবেক বিসর্জন দিয়ে কাজ করা উচিৎ নয়। এতে রাস্ট্র বা সমাজের অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হয়।

ঢাকা থেকে প্রকাশিত নামকুয়াস্তে পত্রিকার কার্ড নিয়ে সাংবাদিক বনে গিয়ে থানার দালালী করেন। এরা থানার বিভিন্ন অফিসারদের সাথে সখ্যতা সৃষ্টি করে সমাজের বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা-ে ছড়িয়ে পড়ে। টু-পাইস নিয়ে থানার তৎবির করেন। যেমন- মামলা এন্ট্রি করানো- না করানো, চার্জসীটে আসামী বাড়ানো-কমানো, হাজত থেকে আসামী ছুটানো। আর থানার বাহিরে- বিভিন্ন অপরাধীদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে টাকা-পয়সা কামানো, বাগে না আসলে পুলিশ পাঠিয়ে হাতকড়া পরানো ইত্যাদি কাজকর্ম তাদের। তাদের কথার লম্পঝম্পে পেশাধারী সাংবাদিকদের মাথা হেট হয়ে যায়। এরা সাংবাদিকতা না বুঝার কারণে অসাধু পুলিশের অপকর্মের সাফাই গাবে সব সময়। তারা ন্যায়-অন্যায়ের ধার ধারে না। শুধু অর্থের বিনিময়ে তাদের বিবেককে বিসর্জন দেয়।

ইবলিশ শয়তান যেমন সব ভাল কাজে গিয়ে হাজির হয়ে খারাপের দিকে ধাপিত করায়। তেমনই মানুষরূপী কিছু ইবলিশ শয়তান রয়েছে তারা লোভ-লালশা দেখিয়ে খারাপের দিকে ধাবিত করায়। এদেরকে সমাজ থেকে নির্র্মূল করা কঠিন হলেও তাবিজ-কবজ, দোয়া-দুরৎ পড়ে কিছুটা দূরে রাখা যায়। মানুষরূপী ইবলিশ শয়তানরা কার্ডধারী সাংবাদিক সেজে সমাজের বিভিন্ন ক্ষতি করে যাচ্ছে।

বেশ কিছুদিন যাবৎ লক্ষ্য করছি, গাজীপুরে অতিথি পত্রিকায় সয়লাব। এসব পত্রিকার সাংবাদিক কোন সৃষ্টিশীল সংবাদ তৈরিতে ব্যস্ত না থেকে অন্য পত্রিকার সংবাদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করে অনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করছে। সংবাদে আলোচ্য ব্যক্তিটি জানার আগেই ওই সাংবাদিকরা পত্রিকার একটি কপি নিয়ে হাজির হন তাঁর কাছে। উদ্দেশ্য- ওই সাংবাদের একটি প্রতিবাদ ছেপে টাকা কামিয়ে নেয়া। উক্ত দৈনিকটিসহ কতিপয় অতিথি পত্রিকা ওয়ালার আচরণও এরকম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সম্পাদকও গা ভাসাচ্ছে এমন অনৈতিক কাজে। এগুলো সাংবাদিকতার নীতি বর্হিভূত কাজ। একে সাংবাদিকতা বলা যায় না।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন হচ্ছে এমন খবরে একে একে প্রায় ডজন খানেক অতিথি পত্রিকা গাজীপুরে অফিস গেঁড়ে বসেছে। এগুলোর অধিকাংশ ঢাকা জেলার পত্রিকা। যারা গাজীপুরে এসব পত্রিকা এনেছেন তারা মূলত ওইসব পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশকের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে গাজীপুরে মূল অফিস গেঁড়ে বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। তারা পত্রিকার প্রিন্টার্স লাইনে নিজেদের নামজুড়ে দিচ্ছেন প্রধান সম্পাদক, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, নির্বাহী সম্পাদক ইত্যাদি। এদের মধ্যে সিংহভাগের ওইসব পদের নূন্যতম যোগ্যতা নেই। এরা কেউই সাংবাদিকতার নীতিমালা মানছে না। এদের মধ্যে অনেক পত্রিকা এতোই অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছেন যা বলতে একজন সম্পাদক হিসেবে লজ্জা পাচ্ছি। কিন্তু গোপন রাখলে আমাদের সবারই ক্ষতি। সেটা হলো- গাজীপুরে বিভিন্ন চাঁদাবাজ, থানার তালিকাভূক্ত সন্ত্রাসী, পেঁয়াজের দোকানদার, ফুটপাতের কবিরাজ, মন্দকিসিমের লোকদের কাছে মোটা অংকের টাকা নিয়ে আইডি কার্ডে দিয়ে সাংবাদিক বানানো হচ্ছে। আর এরা মোটর সাইকেলের সামনে-পিছনে বড় করে সাংবাদিক লিখে দাপটের সাথে উড়ে উড়ে বেড়ায়। বিভিন্ন পেশাজীবি ও সাধারণ মানুষকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করছেন ঠুনকো উছিলায়। এদের উদ্দেশ্য আবার বিভিন্ন রকম। যেমন, কার্ড দেখালে পুলিশ ছাড় দেবে, মাস্তানী করতে সুবিধা, সাধারণ মানুষ ভয়ে কম্পমান থাকবে, কেউ সাংবাদিক ‘সাব’ বলে ডাকবে, আবার টু-পাইস কামাতে সুবিধা।

অনেক কিছুই বলে ফেল্লাম। তবে এসব কার্ডের আইনগত কোন বৈধতা নেই। কারণ সব কার্ড সম্পাদক ইস্যু করছেন না। যারা চুক্তিতে আনছেন তারাই সম্পাদকের পক্ষে সই-স্বাক্ষর দিয়ে সীল মারছেন। কিংবা নিজ পদবী ব্যবহার করে কার্ড ইস্যু করছেন। নিয়ম আছে, একমাত্র সম্পাদক ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তি বা পদবীধারী স্বাক্ষর করলে সাংবাদিকতার আইডি কার্ডের বৈধতা পাওয়া যায় না। এরা জেনে-শুনে আইডি কার্ড হোল্ডারদের ধোঁকা দিচ্ছে। এরা হলুদ সাংবাদিকতা ছড়াচ্ছে। এরা পত্রিকায় একজনের বিরুদ্ধে আবোল-তাবোল লিখে সমাজে হেয় করছে। পূণরায় মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পরের সংখ্যায় প্রতিবাদ ছাপাচ্ছেন। অথবা তাকে বিশিষ্ট সমাজ সেবক বানাচ্ছে। একজনকে বিপদে ফেলে আবার নন্দিত আকারে উদ্ধার করা। সমাজের বিশিষ্ট কিংবা গুণীজনদেরও তারা হয়রানী করতে দ্বিধাবোধ করেন না। কারণ তারা সাংবাদিক! 

হাতে গুণা কয়েকটি পত্রিকার অপসাংবাদিকতার কারণে পুরো সাংবাদিকদের কালিমা লেপন হচ্ছে। নবাগত পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ পিপিএম বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি রাখবেন বলে আমি আশাবাদী।





নাম

অর্থ ও বাণিজ্য,237,আন্তর্জাতিক,732,কাপাসিয়া,343,কালিয়াকৈর,418,কালীগঞ্জ,253,খেলা,644,গাজীপুর,3944,চাকরির খবর,34,জয়দেবপুর,1581,জাতীয়,2968,টঙ্গী,912,তথ্যপ্রযুক্তি,512,ধর্ম,196,পরিবেশ,137,প্রতিবেদন,310,বিজ্ঞান,55,বিনোদন,698,ভিডিও,58,ভিন্ন খবর,142,ভ্রমন,115,মুক্তমত,27,রাজধানী,829,রাজনীতি,1057,লাইফস্টাইল,283,শিক্ষাঙ্গন,398,শীর্ষ খবর,10778,শ্রীপুর,482,সাক্ষাৎকার,12,সারাদেশ,649,স্বাস্থ্য,212,
ltr
item
GazipurOnline.com: দূর্নীতির পক্ষে অপসাংবাদিকতা সামাজিক অপরাধ
দূর্নীতির পক্ষে অপসাংবাদিকতা সামাজিক অপরাধ
http://1.bp.blogspot.com/-14CgwHceNeY/VAtc7JlqjRI/AAAAAAAAKUY/wzAzUmTSx8o/s1600/yelow%2Bjournalism.jpg
http://1.bp.blogspot.com/-14CgwHceNeY/VAtc7JlqjRI/AAAAAAAAKUY/wzAzUmTSx8o/s72-c/yelow%2Bjournalism.jpg
GazipurOnline.com
https://www.gazipuronline.com/2014/09/yellowjurnalist.html
https://www.gazipuronline.com/
https://www.gazipuronline.com/
https://www.gazipuronline.com/2014/09/yellowjurnalist.html
true
13958681640745950
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Read More Reply Cancel reply Delete By প্রচ্ছদ PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share. STEP 2: Click the link you shared to unlock Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy