মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, দরিদ্র ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যানে দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বহুতলবিমিষ্ট ’মুক্তিযোদ্ধা পল্লী’ গড়ে তোলা হবে। এই পল্লীর আওতায় শতকরা ২৫ ভাগ অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের এনে তাদের জীবন-মান উন্নয়ন করা হবে।
তিনি বুধবার পঞ্চগড় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের উদ্বোধন শেষে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় একথা বলেন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় পঞ্চগড়-২ আসনের সাংসদ মো. নুরুল ইসলাম সুজন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক মাহমুদ হাসান, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মির্জা আবুল কালাম দুলাল, সাবেক জেলা কমান্ডার এসএম লিয়াকত আলী, জেলা জাসদ সভাপতি আব্দুল মজিদ বাবুল, সদর উপজেলা কমান্ডার ইসমাঈল হোসেন বক্তব্য দেন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের অধীনে গণপূর্ত অধিদপ্তর দুই কোটি টাকা ব্যয়ে তিন তলা এই কমপ্লেক্সটি নির্মাণ করে।
পরে মন্ত্রী বোদা উপজেলার মহাজনপাড়ায় সাবেক সাংসদ ও মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলামের কবর জিয়ারত ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
মন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, প্রশাসনের কর্মকর্তারা যাতে করে মুক্তিযুদ্ধ সর্ম্পকে পরিপূর্ণভাবে জেনে আসতে পারেন, সেজন্য আগামীতে বিসিএস পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক।
প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার তালিকা তৈরি করতে প্রত্যেক উপজেলায় সাত সদস্যের কমিটি করা হবে। কোন উপজেলায় কবে কখন এই তালিকা তৈরি হবে- তা ছয়টি জাতীয় পত্রিকা, সকল টিভি ও ওয়েবে প্রচার করা হবে। আমরা একটা স্বচ্ছ, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার চুড়ান্ড তালিকা করতে চাই। এসব কাজ সম্পন্ন করার পর তাদের ডিজিটাল সনদপত্র ও পরিচয়পত্র প্রদান করা হবে। সম্মানিত নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদান করে মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক মর্যাদা দেয়া হবে। সম্মানি ভাতা ১০ হাজার টাকায় উন্নীত করা হবে। আগামী অর্থবছরে ২৫ ভাগ মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি করে দেয়া হবে।
তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে পাঁচ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলে আর পাঁচ কোটি টাকা সংখ্যানুপাতিক হারে উপজেলায় বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালগুলো মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য দুটা করে শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগামী বাজেটে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার জন্য আলাদা বরাদ্দ থাকবে। এখানে বিনামূল্যে মুক্তিযোদ্ধারা চিকিৎসা সুবিধা পাবেন।
মুক্তিযোদ্ধার প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উঠেনা, জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয়না সেসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিন, তালা লাগিয়ে দিন।
মন্ত্রী বলেন, সকল মুক্তিযোদ্ধার কবর, বধ্যভূমি ও যুদ্ধক্ষেত্র সংরক্ষণ করা হবে। ভারতের মাটিতে যেসব মুক্তিযোদ্ধার কবর রয়েছে প্রয়োজনে সেখানকার মাটি দেশে এনে তা সংরক্ষণ করা হবে।
তিনি বলেন, যুদ্ধের সময় যাদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা ছিল তাদের সম্মানিত ও খেতাবে ভুষিত করা হবে। সকল মুক্তিযোদ্ধার নামের পূর্বে বীর মুক্তিযোদ্ধা খেতাব ব্যবহারের ব্যবস্থা করা হবে।