সফিকুল ইসলামঃ দশম জাতীয় সংসদের মেয়াদ এক বছরই পূর্ণ না হতেই পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের ছক আঁকতে শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। শুধু তাই নয়-দলটির পক্ষ থেকে চলছে নির্বাচনকেন্দ্রিক বহুমুখী গবেষণা। এরই মধ্যে অ্যান্টি আওয়ামী লীগ ও ভাসমান ভোট নিশ্চিত, তরুণ ও নারী ভোটারদের প্রাধান্য, জয়ের সম্ভাবনা বুঝে পরবর্তী নির্বাচন, আসন ও কেন্দ্রওয়ারি ভোট গবেষণাসহ মোট পাঁচটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে আগাম নির্বাচনের হিসাব-নিকাশ করছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তবে উল্লেখিত ইস্যুগুলো নিজেদের অনুকূলে না আসলে সহসাই নির্বাচনে যাবে না সরকারে থাকা দলটি।
জানা গেছে, আগামি ২০১৯ সালের আগে কোনো নির্বাচন হবে না এমনটি জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলের প্রথম সারির নেতারা বলছেন, আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনা নেই। তবে দলটির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আগাম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্য নিয়ে গোপনে গোপনে প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
জানা গেছে, ঈদুল আজহার আগে নির্বাচন কমিশন থেকে ১২টি সুনির্দিষ্ট তথ্য নেয় আওয়ামী লীগ। ১৯৯১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৬টি জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে ওই তথ্যগুলো সংগ্রহ করা হয়। কোন আসনে কোন প্রার্থী কত ভোট পেয়েছেন, নিকটবর্তী প্রার্থীর সঙ্গে ভোটের ব্যবধান কত, কোন কেন্দ্রে কে কত ভোট পেয়েছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন কি না, থাকলে কত ভোট পেয়েছেন_ এ ধরনের ১২টি তথ্য চাওয়া হয় সিআরআই থেকে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন সব তথ্য দিতে না পারলেও অনেক তথ্যই সিডি আকারে দিয়েছে বলে কমিশনের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় নির্বাচনী ডেটাবেজ তৈরি এবং নির্বাচন নিয়ে কিছু গবেষণার জন্য এ উদ্যোগ নিয়েছেন। আগামী নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতে সজীব ওয়াজেদ জয়ের দেশে ফেরার কথা। তিনি ফিরলেই এ বিষয়ে বিস্তারিত কাজ শুরু হবে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেও একাধিক গবেষণা চালায় দলটি। শেষ পর্যন্ত বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট নির্বাচনে না আসায় ওই গবেষণার ফল তেমন একটা কাজে আসেনি। এর আগে দেশের বিভাগীয় শহরে ৫টি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরাজয়ের পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আরেকটি গবেষণা চালানো হয়। ওই গবেষণার তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতেই ২০১৩ সালের ২৩ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে যুবলীগের ইফতারপূর্ব সমাবেশে সজীব ওয়াজেদ জয় দাবি করেছিলেন, আমার কাছে তথ্য আছে। আওয়ামী লীগ আগামীবার আবারও ক্ষমতায় আসবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির বেশ কয়েকজন নেতা জানান, যদি দেখি ভোটাররা আমাদের চাচ্ছে, জয়ের সম্ভাবনা আছে, তা হলেই আগাম নির্বাচন দেয়া হতে পারে। এর ফলে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলার মুখ বন্ধ করা যাবে। তবে নির্বাচনের বিষয়টি নিয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও জানান তারা। বেশ কিছু গবেষণা ও জরিপের ফলাফল পাওয়ার পরই আগাম নির্বাচন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হবে। তবে এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ২০১৯ সালের আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র মতে, অ্যান্টি আওয়ামী লীগ বা আওয়ামী লীগ বিরোধী দোদুল্যমান ভোট নিশ্চিতকরণ, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনী আসন ও ভোটকেন্দ্রওয়ারি বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের ভোটের হার, ভোটারদের ভোট দেওয়ার প্রবণতা প্রভৃতি বিষয়েও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নিজস্ব গবেষণা সেল সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) কাজ করছে। একই সঙ্গে নির্বাচনকেন্দ্রিক মার্কিন সংস্থা ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালসহ (ডিআই) বেশ কয়েকটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানেরও সহযোগিতা নিচ্ছে সরকারে থাকা দলটি।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী গবেষণা উইংয়ের দায়িত্বরত সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক দলের আধুনিকীকরণে গবেষণার বিকল্প নেই। আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে থেকেই গবেষণাকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। ভোটারদের পছন্দ ও রুচি যেহেতু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায়, তাই তাদের মনোভাব বুঝে দলের নীতি নির্ধারণ করে থাকে আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের এবারের গবেষণায় ভোটারের বড় অংশ নারী ও যুবকদের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার ডিআই-এর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে নির্বাচনী নীতিনির্ধারণ সংক্রান্ত একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান এবং আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। এ বিষয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ডিআই-এর এক কর্মকর্তা আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। সংস্থাটি নির্বাচন নিয়ে কাজ করে। তাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচন সংক্রান্ত কিছু কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছে তারা। এর আগে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেও সারা দেশে মাস্টার পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়াসহ একাধিক কাজে আওয়ামী লীগকে সহযোগিতা করেছিল ডিআই। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রধানমন্ত্রীর এক উপদেষ্টা বলেন, দিন দিন অরাজনৈতিক ভোটার বাড়ছে। পরবর্তী নির্বাচনে এ ধরনের ভোটারের সংখ্যা আরও বাড়বে। তাদের কীভাবে প্রভাবিত করা যায়_ এখন থেকেই সে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে আওয়ামী লীগে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য,স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ২০১৯ সালের আগে এ দেশে কোনো নির্বাচন নয়। সংবিধান অনুযায়ী ৫ বছরের আগে কোনো নির্বাচন হতে পারে না।
সূত্রঃ দৈনিক জনতা