ফরিদ আলম, নিউইয়র্ক: আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে ভয়ঙ্কর ইবোলা ভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়বে লাইবেরিয়া এবং সিয়েরা লিয়নে। আধুনিক বিশ্বে অবাধ বিমান যোগাযোগের সুবিধার কারণে এ ভাইরাস দেশ থেকে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুতই। বাদ যাচ্ছে না বিশ্বের আধুনিক এবং পরাক্রমশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্রও। আর এ ভাইরাসে আক্রান্ত এবং সন্দেহভাজন রোগীদের নিয়ে এখন যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হয়েছে নতুন এক পলিটিক্স। যার নাম ‘ইবোলা পলিটিক্স’। যুক্তরাষ্ট্রে ইবোলা রোগী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এদিকে ভারতের পার্শ্ববর্তী দেশ হওয়ায় বাংলাদেশেও ভারতের মতো বড় ঝুঁকিতে আছে।
ইবোলা ভাইরাসের উৎপত্তি এবং প্রথম রোগী
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সূত্র মতে, ইবোলা ভাইরাস প্রথম ধরা পড়ে ২৯ বছর আগে। তখন দুজন রোগীর সন্ধান পাওয়া যায় সুদান এবং কঙ্গোতে। ইবোলা নদীর তীরবর্তী গ্রামে এ ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া যায় বলে এর নামও হয় ‘ইবোলা ভাইরাস’। এটাকে ইবোলা ভাইরাস ডিজিজ বা সংক্ষেপে ইডিভি বলা হয়। অফিসিয়াল নাম ইবোলা হিউমেরেজিক ফিবার।
এবার প্রথম শুরু হয় মধ্য আফ্রিকার রেইন ফরেস্ট এলাকার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে। পরে এটার ভয়াবহতা গ্রাম এবং শহরে একই পর্যায়ে চলে আসে।
যেভাবে ইবোলা ছড়িয়ে পড়ছে সারাবিশ্বে
১৯৭৬ সালেই গায়েনা থেকে একজন রোগীর মাধ্যমে এ ভাইরাস সিয়েরা লিয়ন এবং লাইবেরিয়া ঢুকে পড়ে। এ দুটি দেশেই মাত্র একজন করে ভাইরাস আক্রান্ত পর্যটক বিমানে করে সিয়েরা লিয়ন ও লাইবেরিয়াগে গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই শুরু এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া, আর বন্ধ হয়নি।
বিশ্বসংস্থার মতে, পৃথিবীর সর্বনিম্ন পর্যায়ের স্বাস্থ্য সেবা গায়েনা, সিয়েরা লিয়ন এবং লাইবেরিয়াতে। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ থেকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে ফিরে এসে যুক্তরাষ্ট্রে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে ইবোলা।
ইবোলার সংক্রমন ও মৃত্যুর হার
ইবোলা প্রথমত বন্য পশুর মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। পরে মানুষ থেকে মানুষে এটা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। ইবোলা কবলিত এলাকায় এ ভাইরাসে মৃত্যুর হার ৫০ ভাগ, তবে এটা ২৫ থেকে ৯০ ভাগ পর্যন্ত ঝুঁকি রয়েছে। আফ্রিকার রেইফরেস্ট এলাকায় গরিলা, শিম্পাঞ্জী, বানর, বাদুরসহ আরও বন্যফলভোজী অনেক পশুপাখির মাধ্যমেও ছড়াচ্ছে এ ভাইরাস।
বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন বাদুরের দেহ এ ভাইরাসের সংরক্ষণাগার। বাদুর বনাঞ্চলের কোন ফল খেয়ে নিচে ফেলে কিংবা ফলের উপর মলত্যাগ করে। সেই ফল মানুষ, বানর বা বনের অন্য পশুরা খাবার পরেই তা দেহে প্রবেশ করে। এবারে যে অঞ্চল থেকে ইবোলা ছড়িয়ে পড়েছে ওই এলাকায় বাদুর শিকার করে খাওয়া নিত্য-নৈমত্তিক বিষয়। ডাক্তারস উইথআউট বর্ডারস এর সদস্যরা এ তথ্য দিয়েছেন। ওইসব বনাঞ্চলে প্রায় প্রতিদিনই অনেক পশু মারা যাচ্ছে এ ভাইরাসে। সাধারণত ইবোলা রোগীর সাথে সরাসরি স্পর্শ হওয়া, লালা, রক্ত বা অন্য কোনো রসের মাধ্যমে এ ভাইরাস দ্রুত এক শরীর থেকে অন্য শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
ইবোলার লক্ষণ
সাধারণত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ২ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে পুরোপুরি লক্ষণ ধরা পড়তে। অর্থাৎ কারো শরীরে এ ভাইরাস জীবিত থাকলেও তার লক্ষণ প্রতিফলিত না হওয়া পর্যন্ত বুঝা যাবে না যে আক্রান্ত কিনা।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ সেন্টার সিডিসি জানিয়েছে, প্রথমে গায়ের তাপমাত্রা অত্যাধিক বেড়ে যাবে অর্থাৎ জ্বর আসবে, পেশি ব্যাথা হবে, গলায় সমস্যা হবে এবং মাথা ব্যাধা করবে। এছাড়াও বমি হবে, ডায়রিয়া হবে, শরীরে র্যাশও উঠতে পারে। এ ভাইরাসে মানবদেহের লিভার এবং কিডনী অকেজো হয়ে যেতে পারে।
৩০ বছরে ইবোলায় মৃত্যু
আজ থেকে ৩০ বছর আগে ইবোলা ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গেলেও এ ভাইরাস প্রতিরোধে আজ পর্যন্তও কার্যকরী কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। এই দিন দশকে বিশ্ব কেবল সময়ক্ষেপন করেছে। এটা নিয়ে তেমন কোনও গবেষণা হয়নি বললেই প্রমাণ হচ্ছে। ৩০ বছর আগের তুলনায় এবারের মৃত্যুর হার খুবই ভয়াবহ। ১৯৭৬ সালে প্রথম যখন এ ভাইরাস ধরা পড়ে এবং পরবর্তীতে এটা ছড়িয়ে যায় তখন সুদান এবং কঙ্গোতে ৬০২ জন রোগীর মধ্যে ৪৩১ জন মারা গিয়েছিল। ১৯৯৫ সালে কঙ্গোতে ৩১৫ জনের মধ্যে ২৫৪ জন মারা যায়। ২০০০ সালে উগান্ডাতে এ ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে ৪২৫ জনের মধ্যে ২২৪ জন মারা যায়। ২০০৭ সালে উগান্ডা এবং কঙ্গোতে আবারও ৪১৩ জনের মধ্যে ২২৪ জন মারা যায়। আর ২০১৪ সালে সেপ্টেম্বরের ২৬ তারিখ পর্যন্ত গায়েনা, লাইবেরিয়া, নাইজেরিয়া, সেনেগাল এবং সিয়েরা লিয়নে ৬৫৫৩ জন আক্রান্ত রোগীর ৩০৮৩ জনই মারা যায়। তবে অক্টোবরের শেষ নাগাদ এ সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়েছে যাবার আশঙ্কা রয়েছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, ২০১৪ সালের আগে পর্যন্ত প্রায় প্রতি বছরই সুদান, কঙ্গো, উগান্ডাতে ২০ থেকে ৩০০ জন পর্যন্ত মারা যায় এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে।
ইবোলার নতুন হুমকি
কেবলমাত্র পশ্চিম আফিকার দেশগুলোই নয়, যুক্তরাষ্ট্রসহ সারাবিশ্বই রয়েছে ইবোলার হুমকির মুখে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ইবোলা যেভাবে ছড়াচ্ছে তাতে করে আগামী জানুয়ারি নাগাদ এটা আফ্রিকার ইবোলা কবলিত দেশগুলোতে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়বে। লাখো মানুষের অকাল মৃত্যুর কারণ হবে এ ভাইরাস। তারা আশঙ্কা করছে জানুয়ারিতে ইবোলায় আক্রান্তের সংখ্যা দেড় মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এবং সিডিসি সতর্ক করে বলেছে, অক্টোবর নাগাদ ২ লাখ, নভেম্বর নাগাদ ৪ লাখ, ডিসেম্বরে ৬ লাখ, জানুয়ারিতে ৮ লাখে দাড়াবে ইবোলায় আক্রান্তের সংখ্যা। এ হারেই বাড়তে থাকবে পরবর্তী মাসগুলোতেও।
পশ্চিম আফ্রিকার বাইরে ইবোলা রোগী কত ?
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ সেন্টার বা সিডিসি’র হিসাব অনুযায়ী আফ্রিকার বাইরে ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ১৮ জন ইবোলা রোগীর চিকিৎসা হচ্ছে। যারা সবাই ইবোলা কবলিত এলাকায় স্বাস্থ্য সেবা বা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করে দেশে ফিরে চিকিৎসা নিচ্ছে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসক ক্রেইগ নিউইয়র্কে ফিরে ইবোলা পজেটিভ প্রমাণিত হয়েছেন।
ইবোলার সংস্পর্শে আসা বা এ ভাইরাস আক্রান্তরা কে কোথায়
গত আগস্টের ২ তারিখ থেকে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত চিকিৎসক, মিশনারী, স্বেচ্ছাসেবকসহ মোট ৯ ব্যক্তি যুক্তরাষ্টে ফিরেছে পশ্চিম আফিক্রার দেশগুলো থেকে। যাদের মধ্যে ১ জন ডালাসে মারা গেছেন। একজনের চিকিৎসা হচ্ছে। ফ্রান্সে ফিরেছে ১ জন, স্পেনে ফিরেছে ৩ জন। যার মধ্যে ২ জনই মারা গেছেন। জার্মানীতে ফিরেছে ৩ জন। যার মধ্যে ১ জন মারা গেছেন, ১ জনের চিকিৎসা চলছে। ১ জন সুস্থ্য হয়েছেন। নরওয়ে এবং ব্রিটেনে ১ জন করে ফিরেছে। সোমবার আমেরিকান সৈন্যরা ফিরেছেন সিয়েরা লিয়ন থেকে। সংখ্যা জানা না গেলেও এটা উল্লেখযোগ্য বলে জানা গেছে। এরা সবাই সেলফ আইসোলেশনে আছেন বলে জানানো হয়েছে।
ইবোলা আক্রান্ত দেশে স্বাস্থ্য কর্মীরা মারা যাচ্ছে ব্যাপকহারে
ইবোলা এতই ভযাবহ যে, এর সংস্পর্শে যেনো নিশ্চিত মৃত্যুর জন্য দিন গোনা। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে, ৪০০ বেশি স্বাস্থ্য কর্মী পশ্চিম আফিকার ইবোলা কবলিত দেশে রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে নিজেরাই আক্রান্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত মারা গেছে ২৩৩ জন।
ইবোলার চিকিৎসা
প্রায় এক ডজনের মতো ইবোলা প্রতিরোধক তৈরি করা হয়েছে বা হচ্ছে বলা হলেও এখনও পর্যন্ত ফুড এন্ড ড্রাগ এ্যাডমিনিস্টেশনের অনুমোদন পায়নি। বর্তমান দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় কয়েকটি কোম্পানিকে আপদকালীন পরীক্ষামূলকভাবে এ ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ‘জেএমএ্যাপ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান দুজন রোগীর উপর তাদের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের হাতে আর কোনও এ্যাম্পল না থাকায় তার প্রতিকার বা উপকারিতা সম্পর্কে জানার সুযোগ হয়নি।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এটা কোনো ছোয়াচে ভাইরাস না হলেও, আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাঁশি, লালা, রক্ত বা অন্য ফ্লুইড থেকে এ ভাইরাস অন্য দেহে প্রবেশ করতে পারে। ঘরের বাইরে থেকে ফিরে অবশ্যই প্রতিবার সাবান দিয়ে প্রথমে হাত এবং পরে মুখমন্ডল পরিষ্কার রাখারও পরামর্শ রয়েছে তাদের।
ইবোলা এখন নিউইয়র্কেও
বিশ্বজুড়ে ভ্রমন পিপাসুদের প্রিয় শহর নিউইয়র্ক সিটিতে ভয়ঙ্কর ইবোলা ভাইরাসের উপস্থিতির খবরে প্রশাসনে আতঙ্ক এবং সতর্কতা দুটোই বেড়েছে। জেএফকে এবং নিউইয়র্ক বিমানবন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। এখন থেকে কারো শরীরে ইবোলার সামান্যতম উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গেলে বা রোগীর সংস্পর্শে এলে তাকে বাধ্যতামূলকভাবে ২১ দিন নির্জনবাসে রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল পাশাপাশি দু’টি রাজ্য নিউইয়র্ক এবং নিউজার্সিও গভর্নর।
গত ১৭ অক্টোবর গিনি থেকে ফিরে আসা চিকিৎসক ক্রেইগ স্পেন্সারের শরীরে ইবোলা ভাইরাসের প্রমাণ পাওয়া গেলে তাকে বেল ভিউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাকে এমন একটি কক্ষে রাখা হয়েছে যার আশেপাশেও ডাক্তার ছাড়া আর কারো যাবার সুযোগ নেই। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ক্রেইগের অবস্থা এখন আগের চেয়ে ভাল। কিন্তু স্থানীয় পত্রিকা ডেইলি নিউজ তাদের একাধিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ক্রেইগ নিউইয়র্কে ফেরার পরে সাবওয়ের ট্রেনে ঘোরাঘুরি করেছে, বোলিং ক্লাবে গিয়েছে, কফি শপে গিয়েছে একাধিকবার, ‘উবার’ নামের একটি কোম্পানীর ভাড়া করা গাড়িতে ঘুরেছে, সে মেট্রো কার্ড কিনে সোয়াইপ করেছে , পরে ওই কার্ডটি অন্যকেও ব্যবহার করতে দিয়েছে। ক্রেইগের সংস্পর্শে আর কারা এসেছে সেসব নিয়েও এখন দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছে প্রশাসন। ক্রেইগ দেশে ফেরার পরে সুস্থই ছিলেন। পরে অসুস্থবোধ করার পরে প্রমাণ হয় সে ইবোলায় আক্রান্ত। এ কারণেই সন্দেহ করা হচ্ছে, হয়তো এমন অনেক ব্যক্তিই আছেন, যারা দেশে ফেরার সময় সুস্থই ছিলেন। পরে ইবোলায় আক্রান্তের প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। যদিও নিউইয়র্কের মেয়র বিল ডি ব্লাজিও জোর দিয়ে বলেছেন, ইবোলায় আক্রান্ত যে কোনো ব্যাক্তিকে সারিয়ে তুলতে বা চিকিৎসা দিতে পর্যাপ্ত নিরাপদ চিকিৎসার প্রস্তুতি তাদের রয়েছে।
আক্রান্ত হবার কয়েকদিন পরে অসুস্থ হবার কারণেই গত শুক্রবার নিউইয়র্কের গভর্নর এন্ড্রু এম কোমো এবং নিউজার্সির গভর্নর ক্রিস ক্রিস্টি সরাসরি ইবোলা আক্রান্ত রোগীর সাথে যোগাযোগ স্থাপনকারী সবাইকে ২১ দিন বাধ্যতামূলক নির্জনবাস করতে হবে বলে ঘোষণা করেন। এমনকি যারা রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত থাকবেন তাদের বেলাও এটা প্রযোজ্য হবে। একদিন পরে শনিবার ইলিনয়েস অঙ্গরাজ্যেও ২১ দিনের নির্জনবাসের ঘোষণা দেয়া হয়। এদিকে, গত শনিবার একজন নার্স পশ্চিম আফিকা থেকে নিউজার্সির নিউয়ার্ক এয়ারপোর্টে এলে পরীক্ষা করে তার শরীরে ইবোলা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। কিন্তু তাকে ২১ দিনের নির্জনবাসে পাঠানো হয়। কিন্তু নানামুখী চাপ আর সমালোচনায় শেষ পর্যন্ত ৩ দিন পরেই তাকে নির্জনবাস থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। পরে ওই নার্স নিজ রাজ্য সাউথ ক্যারোলিনাতে চলে যায়। এখন থেকে অবশ্য নতু গাইড লাইন অনুযায়ী পশ্চিম আফ্রিকা ফেরত সবাইকে স্বেচ্ছায় একাকী সময় কাটানোর জন্য বলা হয়েছে।
উল্লেখ করা যেতে পারে, এর কয়েক সপ্তাহ আগে ডালাসে একব্যাক্তি ইবোলায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ওই ব্যক্তির চিকিৎসা করতে যেয়ে আরেকজন আক্রান্ত হলেও তিনি অবশ্য পরে বেঁচে যান। এদিকে, ডালাসে ইবোলা আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাবার পরে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যস্ততম বিমানবন্দরগুলোতে আফ্রিকা ফেরত দেশগুলো থেকে আসা যাত্রীদের ইবোলা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।
ইবোলা নিয়ে রাজনীতি
সিয়েরা লিয়ন থেকে ফেরত কাচি হিকক্স নামে এক নার্স নিউজার্সির নিউইয়র্ক ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে নামলে তার শরীর পরীক্ষা করে ইবোলার উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। কিন্তু যেহেতু ইবোলার উপস্থিতি টের পেতে ২১ দিন পর্যন্তও সময় লাগতে পারে তাই তাকে পাঠানো হয় নির্জনবাসে। যেখানে কেউ তার সাথে দেখা করতে পারবে না। তবে সে ফোন করা, টিভি দেখা, সই পড়াসহ খাওয়া-দাওয়া করতে পারবে। এটাকে সে মেনে নিতে না পেরে গভর্নরের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দেয়। পরে হোয়াইট হাউজ থেকেও এটা প্রত্যারের কথা বলা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট ওবামাও বলেছেন, নির্জনবাসে রাখার চেয়ে স্বেচ্ছায় নিজেকে আড়াল করে রাখার পক্ষে তিনি। অনেকেই বলছেন, রিপাবলিকার গভর্নর ক্রিস ক্রিস্টি এ রুল জারি করেছে বলেই প্রেসিডেন্ট এটার বিরোধিতা করছেন। অথবা বহু সংখ্যক সেনা সদস্য যারা এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে এসেছেন সিয়েরা লিয়ন থেকে তাদের কথা বিবেচনা করেই হয়তো বাধ্যতামূলক নির্জনবাসের বিষয়টি প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ধরনের ভাইরাস সনাক্ত এবং তার হাত থেকে আরও বেশি মানুষকে বাঁচাতে হলে নির্জনবাসের বিকল্প নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা আতঙ্কিত
ডানকিন ডোনাটে পাঁচ বন্ধু এসেছে কফি খেতে। কফি পানের সাথে তাদের আলোচনার মূল বিষয় ছিল, ইবোলা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তুতি কি তাই নিয়ে। প্রশ্ন করতেই রাই নাইজেলার ঝটপট উত্তর ‘‘অবশ্যই আমরা এই ভাইরাস নিয়ে চিন্তিত। কারণ প্রতিদিনই আফ্রিকা থেকে চিকিৎসক বা স্বেচ্ছাসেবীরা ফিরছে। তাদের অনেকের শরীরেই এ ভাইরাসের প্রমাণ পাওয়া গেছে। একজন মারাও গেছে।’’ তার সাথের বন্ধু ম্যাক ওকারা একধাপ এগিয়ে বললেন, নিউইয়র্কে এ ভাইরাস একবার ছড়িয়ে পড়লে সেটা নিয়ন্ত্রণ করাই কঠিন হবে।
ইবোলা প্রতিরোধে বাংলাদেশের প্রস্তুতি কি?
বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের অন্তত একলাখ মানুষ পশ্চিম আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বসবাস করে অথবা ব্যবসায়িক কাজে নিয়মিত যাতায়াত করে। আর এসব ভারতীয় যদি এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়, তার বাতাস লাগবে বাংলাদেশেও। বাংলাদেশেরও অনেক মানুষ সেখানে কর্মরত রয়েছে। সংখ্যায় সেটা খুব বেশি না হলেও আক্রান্ত কেউ যদি দেশে চলে আসে, তার শরীর পরীক্ষা-নিরীক্ষার আদৌ কোনও ব্যবস্থা কি বাংলাদেশের আছে ? এছাড়া বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ যাওয়া আসা করছে। দুটি দেশই অতি ঘনবসতি এবং উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকার কারণে সামান্য অসতর্কতার কারণে বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাছাড়া কোনও ইবোলা রোগীর যে ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন সেটা সম্পর্কেও বাংলাদেশের চিকিৎসকরা কতটুকু অবগত তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। আর রোগীদের সেবা দিতে গেলে চিকিৎসকদের যে নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে থেকে করতে হবে, অর্থাৎ যে পোষাকের প্রয়োজন সেটাও আছে কিনা এটা এখনও সরকারিভাবে নিশ্চিত করে বলা হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুন্নত দেশগুলোতে বিশেষ করে পশ্চিম আফ্রিকা থেকে যে কেউ তার দেশের বিমান বন্দরে নামলে সতর্কতার সাথে তার শরীরে ইবোলা ভাইরাসের উপস্থিতি আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতে বলেছে।