মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। রায়ে জানানো হয়, তার বিরুদ্ধে আটটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে দুইটি অভিযোগে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি সুস্পষ্ট। বাকি ৮টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। চারটি অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল ফাঁসির আদেশ দেন। এছাড়াও রায়ে রুমি হত্যাসহ ৪টি অভিযোগে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
বুধবার বেলা ১১টা ৭ মিনিটে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ২০৪ পৃষ্টার রায় পড়া শুরু হয়।
শুরুতেই ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, আমরা অপেক্ষায় ছিলাম কবে রায় দিতে পারব। এ জন্য অনেকে অনেক কথাই বলেছেন। ন্যায় বিচার ও আইনের শাসনের কথা আদালত বলতে পারেন, অন্য কেউ বলতে পারে না। আমরা টক-শো কিংবা রাস্তায় আদালতের বিষয়ে কোন কথা বলতে পারি না। মন্তব্য করার সময় আমাদেরকে জবাবদিহির কথা মনে রাখতে হবে।
এরপর নিজামীর মামলার সংক্ষিপ্ত রায়ের প্রথম অংশ পড়া শুরু করেন বিচারপতি আনোয়ারুল হক। পরবর্তী অংশ পড়েন বিচাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন। পরে রায়ের মূল অংশটি পড়বেন চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম।
সকাল ৯টা ১৯ মিনিটে প্রিজন ভ্যানে নিজামীকে নিয়ে ট্রাইব্যুনালে পৌঁছেন কারারক্ষিরা। এর পর তাকে রাখা হয় ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় রাখা হয়।
নিজামীর এ রায়ের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে পুরো জাতি। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের উদ্যোগে মুক্তিযোদ্ধারা ফাঁসির দাবিতে ব্যানার নিয়ে ট্রাইব্যুনালের সামনে মানবন্ধন করছেন।
এদিকে নিজামীর সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে রায় পড়া শুরুর আগে থেকেই শাহবাগে দুভাগে অবস্থান করছে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার ও কামলা পাশার গ্রুপ। তারা নিজামীর ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন। রায় ঘোষণা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা শাহবাগের ওই প্রজন্ম চত্বরেই অবস্থান করবেন।
রাষ্ট্রপক্ষ নিজামীর সর্বোচ্চ সাজা আশা করছে। অপরদিকে নিজামী নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে খালাস পাবেন বলে আশা করছেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা।
উল্লেখ্য, গত ২৪ জুন এ মামলার রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য থাকলেও আসামি মতিউর রহমান নিজামী অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে আদালতে উপস্থিত করা হয়নি। এ কারণে রায় পিছিয়ে চতুর্থবারের মতো অপেক্ষমাণ রাখা হয়।
গত বছরের ১৩ নভেম্বরও অপেক্ষমান (সিএভি) রাখা হয়েছিল মামলাটি। সেদিন আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থানের দিন ধার্য থাকলেও হরতালের কারণে না আসায় সময় আবেদন খারিজ করে মামলার কার্যক্রম শেষ করে দেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর ২০ নভেম্বর উভয়পক্ষের আইনজীবীদের সমাপনী বক্তব্য শেষে রায় অপেক্ষমান রাখেন ট্রাইব্যুনাল।
নিজামীর বিরুদ্ধে একাত্তর সালে পাবনার বিভিন্ন জায়গায় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগসহ মোট ১৬টি অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়েছে। এসব অভিযোগের মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়রে ওপর এবং ছাত্র-শিক্ষকসহ বিভিন্ন সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। এসব অপরাধ কখনো তার নির্দেশে আবার কখনো তার আদেশে সংগঠিত হয়েছে।