আমরা কোথায় আছি কী ভাবে জানতে পারি? কী ভাবেই বা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাই? কী ভাবে এক বার ঘুরে আসা পথে আবার ফিরে যেতে পারি? মোবাইল-এর ‘জিপিএস ব্যবস্থা’-র মতো কিছু কি আছে আমাদের শরীরে? এ রহস্যের উত্তর খুঁজে এ বছরই শারীরবিদ্যার নোবেল পেলেন জন ও’কিফ এবং গবেষক দম্পতি মে-ব্রিট ও এডভার্ড মোজের।
উপরের প্রশ্নগুলি নিয়ে প্রাথমিক ভাবে কাজ শুরু করেছিলেন শারীরবৃত্তীয় মনোবিজ্ঞানের গবেষক জন ও’কিফ। ১৯৭১ সালে তিনি এ রহস্যের খানিকটা উত্তর খুঁজে পান। ইঁদুরের উপরে পরীক্ষা চালিয়েছিলেন তিনি। ইঁদুরকে তিনি স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করতে দিয়ে দেখলেন, যখন কোনও নির্দিষ্ট জায়গায় ইঁদুরটি দাঁড়িয়ে যাচ্ছে তখন মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাসের কিছু কোষ উজ্জীবিত হচ্ছে। আবার ইঁদুরটি যখন অন্য জায়গায়, তখন উজ্জীবিত হচ্ছে সেই হিপোক্যাম্পাসেরই অন্য অংশের কোষ। এর থেকে তার ধারণা হয়, জায়গা বদলের কথা মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট কোষে জমা হচ্ছে। কোষগুলির নাম দিলেন তিনি ‘প্লেস সেল’। এবং জানালেন, এ ভাবে মস্তিষ্কে শুধু তথ্য জমাই হয় না, একই সঙ্গে পারিপার্শ্বিকের মানচিত্রও সেখানে তৈরি হয়। আসলে ‘প্লেস সেল’র নানা সমন্বয়ে তৈরি হয় প্রতিটি মানচিত্র।
২০০৫ সালে এ রহস্যের বাকি উত্তর এল। উত্তর পেলেন গবেষক দম্পতি, মে-ব্রিট এবং এডভার্ড মোজের। এবারও পরীক্ষা ইঁদুরের উপরে। তারা দেখলেন ইঁদুর যখন কোনও নির্দিষ্ট জায়গা দিয়ে যাচ্ছে মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাসের কাছেই এন্টোরহিন্যাল কর্টেক্সের একটি অংশ উজ্জ্বীবিত হচ্ছে। এন্টোরহিন্যাল কর্টেক্সের এ উজ্জ্বীবিত অংশগুলি ষড়ভুজ গঠন করছে। একে গ্রিড বলে। তারা এর নাম দিলেন ‘গ্রিড সেল’। প্রতিটি ‘গ্রিড সেল’ ইঁদুরের চলাফেরার একটি নির্দিষ্ট পথকে চিহ্নিত করে।
এ ‘প্লেস সেল’ আর ‘গ্রিড সেল’ মিলিত ভাবে প্রাণীদের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করে। ৩ গবেষকের এ তত্ত্বকেই এবার নোবেল পুরস্কার দেয়া হল। স্বাভাবিক ভাবেই পুরস্কার দু’ভাগে ভাগ হল। এক ভাগ পেলেন আমেরিকা ও ব্রিটেনের যৌথ নাগরিক জন ও’কিফ। তিনি এখন ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ লন্ডন-এর ‘সাইনসবুরি ওয়েসকাম সেন্টার ইন নিউর্যাল সার্কিটস এন্ড বিহেভিয়র’র ডিরেক্টর। অন্য ভাগ পেলেন নরওয়ের মোজের দম্পতি। এর মধ্যে মে-ব্রিট মোজের এখন ট্রন্ডহেইমের ‘সেন্টার ফর নিউর্যাল কম্পিউটেশন’ ডিরেক্টর। তার স্বামী এডভার্ড মোজের ট্রন্ডহেইমেরই ‘কাভিল ইন্সস্টিটিউট ফর সিস্টেমস নিউরোসায়েন্স’র ডিরেক্টর।