শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে দর্শনার্থীদের ভিড় : প্রবেশপথের সড়কগুলোতে যানবাহনের চাপ

স্টাফ রিপোর্টারঃ গাজীপুরের সরকারি-বেসরকারি নামকরা পিকনিক স্পট, পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে এখন দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। স্পটগুলোর চারপাশে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শুধু মানুষ আর মানুষ। শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে দর্শনার্থী আরো বাড়তে পারে বলে মনে করছেন স্পট পরিচালকরা।

কেন্দ্রগুলোর প্রবেশপথের সড়কগুলোতে মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, ইজিবাইকসহ বিভিন্ন প্রকার যানবহনের রয়েছে প্রচ- চাপ। তবে কোথাও যানজট সৃষ্টি হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। গাজীপুরের প্রধান কয়েকটি পিকনিক স্পট ও বিনোদন কেন্দ্র পরিদর্শন করে এসব চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্কে গিয়ে দেখা গেছে নারী, পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ, শিশুসহ সব শ্রেণী পেশার মানুষের উপচেপড়া ভিড়। প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, অটোবাইক, রিকশা, ভ্যানসহ যানবাহনগুলো দাঁড়ানোর ঠাঁই নেই। পার্কটি এখন লোকে লোকারণ্য।

টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলা শহর থেকে আসা প্রাইম প্রাইভেট হাসপাতাল অ্যান্ড ক্লিনিকের মেডিকেল টেকনিশিয়ান মাসুদ পারভেজ বৃহস্পতিবার পরিবারের ৯ সদস্য নিয়ে সাফারি পার্ক দেখতে আসেন। এর আগে তিনি একা এসেছিলেন পার্ক ঘুরে দেখতে। এখানকার বৈচিত্র্যমূলক বর্ণনা শুনে পরিবারের সবাই পার্ক ঘুরে দেখতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তাদের বায়না পরিশোধ করতে এবারের ঈদে পার্ক পরিদর্শনকে প্রধান বিনোদন হিসেবে বেছে নেন মাসুদ পারভেজ।

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার গৌড় গোবিন্দপুর থেকে আসা সুমী ও সাথী আক্তার বলেন, তারা ওই এলাকা থেকে মোট ৩৫ জন একটি বাস ভাড়া করে এসেছেন। ফলে একজন দর্শনার্থীকে সব কিছু দেখার জন্য কমপক্ষে পাঁচশ করে টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে।

তারা দাবি করেন, অনেক দর্শনার্থীর পক্ষে টাকা খরচ করে সব কিছু দেখা সম্ভব হবে না। এ দেশের মানুষের জন্য সহনশীল খরচ ধার্য করা উচিত। রাজস্ব আয় বাড়ানোর জন্য বিদেশি পর্যটকদের কাছ থেকে টিকিটের বাড়তি মূল্যের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্কের ইজারাদারদের পক্ষে শ্রীপুর উপজেলা কৃষকলীগের আহ্বায়ক কবির আহমেদ জানান, ঈদের দিন ওই পার্কে ১০ হাজারের বেশি দর্শনার্থীর ভিড় ছিল। ঈদের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার এ সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। তৃতীয় দিন বুধবার ২০ হাজারের কাছাকাছি। চতুর্থ দিন বৃহস্পতিবার ২০ হাজার অতিক্রম করার আশা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি জানান, এবার ঈদে দর্শনার্থীরা নতুন কিছু পাচ্ছে। এর মধ্যে মাছের একোরিয়াম মিউজিয়াম, প্রজাপতির আবাসন, বাঘ দেখার জন্য সুসজ্জিত বাহন প্রভৃতি। তিনি বলেন, দরপত্রের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা করে পার্কের ইজারা নিতে হয়েছে। বন অধিদফতরের নিয়ম অনুযায়ী দর্শনার্থীদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা ও সেবা দেয়া হয়।

গাজীপুর ন্যাশনাল পার্কের ইজারা নিয়েছেন বন্ধু কনস্ট্রাকশন। ওই কনস্ট্রাকশনের পক্ষে মাসুদুল হক জানান, আমাদের নিজস্ব তালিকা অনুযায়ী গাজীপুরে অর্ধশতাধিক পিকনিক স্পট ও বিনোদন কেন্দ্র রয়েছে। গত কয়েক বছর যাবৎ আমি ওই পার্কটির প্রবেশাধিকার বুকিং পরিচালনা করে আসছি।

তিনি জানান, ঈদের দিন সাড়ে পাঁচ হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছে। ঈদের দ্বিতীয় দিন ৯ হাজার এবং ঈদের তৃতীয় এবং চতুর্থ দিন বিক্রি ভালো হয়েছে। টিকিটের বাইরেও অনেক দর্শনার্থী এলোপাতাড়িভাবে পার্কে ঘোরাফেরা করেছে। এ সংখ্যা প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার ছাড়িয়ে যাবে। বিকাল থেকেই স্পটগুলোতে দর্শনার্থীদের পরিদর্শন শুরু হয়েছে। ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। ঈদের অবকাশ যাপনের জন্য স্পট কর্তৃপক্ষেরও ছিল বাড়তি প্রস্তুতি। বসার ব্যবস্থা, বৈরী আবহাওয়া মোকাবিলার জন্য অস্থায়ী শেড নির্মাণ, খাওয়া-দাওয়ার জন্য অস্থায়ী হোটেল স্থাপন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী এলাকার নুহাশ পল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বাবুল জানান, ঈদের পরদিন কমপক্ষে দুই হাজার দর্শনার্থী নুহাশ পল্লী পরিদর্শন করেছে। মাইক্রোবাস ও প্রাইভেটকারের সংখ্যা ছিল দুইশর বেশি। দর্শনার্থীদের মধ্যে নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ, তরুণ, যুবক ছাড়াও শিশু, কিশোরদের উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি। ঈদের দ্বিতীয় দিনও দর্শনার্থীর উপস্থিতি ছিল এক হাজারের বেশি।

ঢাকার মালিবাগ থেকে আসা এক গৃহিণী লায়লা সুলতানা জানান, পাঁচ হাজার টাকায় মাইক্রোবাস ভাড়া করে ছোট বড় ৯ জন এসেছিলেন নুহাশ পল্লীতে। প্রত্যেককে দুইশ টাকা করে প্রবেশ টিকিট ক্রয় করে পল্লীর ভেতরে ঢুকতে হয়েছে। তিনি জানান, ঈদে ঘুরতে যাওয়ার ক্ষেত্রে টাকাটা বড় ফ্যাক্টর নয়। কিন্তু নুহাশ পল্লীতে এসে কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের সমাধি, সারিবদ্ধ নানান জাতের গাছপালা ও হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতিবিজড়িত নির্মাণ ছাড়া দর্শনের মতো উল্লেখযোগ্য কিছু পাওয়া যায়নি।

ঢাকার গাবতলী থেকে আসা সোহেল রানা জানান, তারা আহসান মঞ্জিল ঘুরে দেখতে সাতজন একত্রে বাসা থেকে বের হন। পরে গাড়িতে বসেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে চলে আসেন নুহাশ পল্লীতে। দুইশ টাকা প্রবেশ মূল্য একজন দর্শনার্থীর জন্য অনেক বেশি হয়ে গেছে দাবি করে বলেন, অনেক দর্শনার্থী ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও খরচের কথা ভেবে নুহাশ পল্লীর গেট থেকে ফিরে গেছেন।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার ভেড়ামতলী গ্রামের আব্দুল হক বলেন, গত দু’বছর যাবৎ নুহাশ পল্লীতে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম-মৃত্যু দিবস, বৈশাখী মেলা, ঈদ আয়োজনে দর্শনার্থীদের আগমন ঘটে। ঈদের দিন বাইরের দর্শনার্থীর চেয়ে এলাকার দর্শনার্থী ছিল বেশি। ঈদ ও ঈদের পর দুদিন নুহাশ পল্লীর গেটের সামনে ২০ ডজন পেয়ারা বিক্রি করেছি। মাঝারি আকারের পেয়ারা গড়ে প্রতি ডজনের বিক্রয়মূল্য ৬০ টাকা। স্থানীয় বাজারে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি করতে হতো। আব্দুল হকের নুহাশ পল্লীর আশপাশের কেউ কেউ সবজি বিক্রি করতেও নুহাশ পল্লীর গেটে বসেছেন। এর পাশাপাশি খাবার বিক্রির আয়োজনও রয়েছে।

নুহাশ পল্লীর ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম বাবুল জানান, দর্শনার্থীদের প্রবেশ মূল্যের টাকা দিয়ে নেত্রকোনায় স্যারের ( হুমায়ূন আহমেদের) প্রতিষ্ঠিত একটি বিদ্যালয় ও নুহাশ পল্লীর কর্মচারীদের খরচ চালানো হয়।

গাজীপুর জেলা প্রশাসনের ভূমি বিভাগসূত্রে জানা হেছে, গাজীপুর সদর উপজেলায় ২৫টি, কালীগঞ্জে ৩টি, কালিয়াকৈরে ১০টি, শ্রীপুরে ১৫টি, কাপাসিয়ায় পাঁচটি। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল চড়–ইপাখি, শ্যামলী, খতিব খামার বাড়ি, নুহাশ পল্লী, নক্ষত্রবাড়ি, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, অঙ্গণা, নন্দন প্রমুখ।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার সিংগারদিঘী এলাকার সী-গাল পিকনিক স্পটের ব্যবস্থাপক নুরুল ইসলাম বলেন, ঈদের দিন থেকেই তার স্পটে দর্শনার্থীদের ভিড় চলে আসছে। এবারের ঈদে দর্শনার্থীদের ভিড় তুলনামূলক কম।

গাজীপুর সদর উপজেলার হোতাপাড়া খামার বাড়ি পিকনিক স্পটের ব্যবস্থাপক আবুল হোসেন বলেন, তার স্পটেও দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় রয়েছে।

একই রকম তথ্য জানালেন গাজীপুর সদর উপজেলার সীমান্ত এলাকা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশের পুষ্পদাম রিসোর্ট ও পিকনিক স্পটের ব্যবস্থাপক বিপ্লব। তিনি জানান, বছর জুড়ে তার এ স্পটে দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে। কিন্তু ঈদের সময় চাপ বেড়ে যায়। বাংলাদেশ পর্যটক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান মাস্টার বলেন, পিকনিক স্পটগুলোতে যাতায়াতের জন্য সড়কগুলো অনেকটা ব্যবহার অনুপযোগী। যানজট লেগে থাকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। দর্শনার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে। এ সময়গুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন।

হোতাপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) হারুন-অর রশীদ জানান, ঈদের দিন থেকে জেলার পিকনিক স্পটগুলোতে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য বাড়তি জনবল মোতায়েন রয়েছে। দর্শনার্থীরা অনেকটা নিরাপদে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ঘুরে বেরিয়েছেন। কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর নেই।




নাম

অর্থ ও বাণিজ্য,237,আন্তর্জাতিক,732,কাপাসিয়া,343,কালিয়াকৈর,418,কালীগঞ্জ,253,খেলা,644,গাজীপুর,3942,চাকরির খবর,34,জয়দেবপুর,1581,জাতীয়,2968,টঙ্গী,912,তথ্যপ্রযুক্তি,512,ধর্ম,196,পরিবেশ,137,প্রতিবেদন,310,বিজ্ঞান,55,বিনোদন,698,ভিডিও,58,ভিন্ন খবর,142,ভ্রমন,115,মুক্তমত,27,রাজধানী,829,রাজনীতি,1057,লাইফস্টাইল,283,শিক্ষাঙ্গন,398,শীর্ষ খবর,10776,শ্রীপুর,481,সাক্ষাৎকার,12,সারাদেশ,649,স্বাস্থ্য,212,
ltr
item
GazipurOnline.com: শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে দর্শনার্থীদের ভিড় : প্রবেশপথের সড়কগুলোতে যানবাহনের চাপ
শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে দর্শনার্থীদের ভিড় : প্রবেশপথের সড়কগুলোতে যানবাহনের চাপ
http://4.bp.blogspot.com/-jsWqKffrvik/VDczKQiQAJI/AAAAAAAAK-w/u3acyVmZ0mk/s1600/safari%2Bpark%2Bgazipur1.jpg
http://4.bp.blogspot.com/-jsWqKffrvik/VDczKQiQAJI/AAAAAAAAK-w/u3acyVmZ0mk/s72-c/safari%2Bpark%2Bgazipur1.jpg
GazipurOnline.com
https://www.gazipuronline.com/2014/10/safaripark10.html
https://www.gazipuronline.com/
https://www.gazipuronline.com/
https://www.gazipuronline.com/2014/10/safaripark10.html
true
13958681640745950
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Read More Reply Cancel reply Delete By প্রচ্ছদ PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share. STEP 2: Click the link you shared to unlock Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy