গোত্র, ধর্ম, অঞ্চল, ঐতিহ্যভেদে একেক দেশের বিয়ের অনুষ্ঠান একেক রকম হয়ে থাকে। আলাদা আলাদা নিয়ম আর বৈচিত্র্য দেখা যায় এসব ভিন্ন ভিন্ন বিয়েতে। এমনই কিছু লোকজ ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে সারা বিশ্বের নানা জাতির বিয়ের অনুষ্ঠানে। চলুন এমনই কিছু বিয়ের লোকজ ঐতিহ্য সম্পর্কে জেনে নিই।
সন্তান পাশে নিয়ে বিয়ে :
পাশ্চাত্য দেশের নাগরিকরা ফ্রি সেক্স এবং লিভ টুগেদারে বিশ্বাসী। তারা মনে করেন যে একজনের প্রতি ভালোলাগা তৈরি হলে তার সঙ্গে লিভ টুগেদার করা উচিৎ। অনেক বছর একসঙ্গে থাকার পরে তারা যখন সত্যিকারে উপলব্ধি করেন যে দু'জনার বোঝাপড়া ঠিকভাবে হচ্ছে তখন তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। আর এ কারণে অনেককেই দেখা যায় তারা যখন বিয়ে করেন তাদের সঙ্গে তাদের সন্তানেরাও থাকে।
পোশাক পরিবর্তন :
চীনে বিয়ের কনে একটিমাত্র পোশাকের পরিবর্তে ৩ টি বিয়ের পোশাক পরে থাকে। বিয়ের কনে প্রথমে পরেন এমব্রয়ডারি করা ফিটিং এক ধরণের ফ্রক যাকে চীনের ভাষায় কিপাও বা চেওংসেম বলা হয়ে থাকে। এই পোশাকটি লাল রংয়ের হয়ে থাকে কেননা তাদের বিশ্বাসমতে লাল রং হল শক্তি আর ভাগ্যের রূপক। এরপরে পাশ্চাত্য রীতি অনুসারে সাদা রংয়ের একটি গাউন পরেন এবং সবশেষে কনের পছন্দমত রংয়ের আরেকটি পোশাক বিয়ের রিসেপশনে পরে থাকেন চাইনিজ কনেরা।
জুতা চুরি :
রাশিয়া, পাকিস্তান, ভারত এবং বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটির দেশের বিয়েতে এই লোকজ ঐতিহ্যটি চালু রয়েছে। অর্থাৎ বর যখন বিয়ের মঞ্চে পা তুলে বসে তখন তার জুতাজোড়া চুরি করে রাখে কনে পক্ষ এবং এর জন্য মূল্য চায়। পরে তা ছাড়িয়ে আনার জন্য বরকে অর্থমূল্য দিতে হয়। লোকজ এই ঐতিহ্যগুলো আসলে বিয়ের আনন্দকে সবাই ভাগাভাগি করে নেয়ার এক ধরণের লোকজ প্রক্রিয়া।
ঝাড়ুর উপরে লাফানো :
বিয়ের সময়ে বর ও কনের ঝাড়ুর উপরে লাফানো একটি আফ্রিকান এবং আমেরিকান লোকজ ঐতিহ্য। বিয়ের দিনে বর কনেকে দিনে এই কাজটি করানো হয়। এর পেছনেও একটি লোকজ কারণ রয়েছে। আফ্রিকানরা মনে করেন যে বিয়ের দিনে স্বামী স্ত্রী একসঙ্গে এই কাজটি করলে তাদের দু'জনের দু'জনার প্রতি দাসত্ব মনোভাব থাকবে না। পাশাপাশি ভালোবাসা আরও অনেক বেশি প্রগাঢ় হবে। এই বিশ্বাসে আফ্রিকানরা বিয়ের দিনে এই ঐতিহ্যটি পালন করে থাকেন।
নকশা করা হাত :
ভারত এবং বাংলাদেশের বিয়ের অনুষ্ঠানে কনের হাত ভরা বিভিন্ন নকশার ঐতিহ্য লক্ষ্য করা যায়। বিয়ের আগেই এই নকশা বিভিন্ন হেনা মেহেদী প্যাক দিয়ে করে থাকে কনে এবং তার সমবয়সী আত্মীয়স্বজন-বন্ধুবান্ধবরা। তবে বর্তমানে মেহেদী ছাড়াও অন্যান্য বিভিন্ন ধরণের ক্যামিকেল ডিজাইনে হাত রাঙিয়ে থাকে প্রাচ্যদেশের কনেরা। এটি ভারত এবং বাংলাদেশের একটি বিয়ের লোকজ ঐতিহ্য।
গরু হত্যা :
জুলু সম্প্রদায়ের বিয়েতে এক ধরণের ঐতিহ্য প্রচলিত আছে আর তা হল গরু হত্যা। সাধারণত চার্চে তাদের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয় এবং এরা বিয়েতে সাদা পোশাক পরিধান করে। বিয়ের দিনে গরু হত্যা করে বধুকে ঘরে তোলা হয় এবং গরুর পাকস্থলীতে টাকা রেখে ঘোষণা দেয়া হয় যে আজ থেকে কনেটি তাদের পরিবারেরই একজন।
কনের মূল্য চাওয়া :
রাশিয়াতে এমন একটি বিয়ের ঐতিহ্য চালু রয়েছে যে বিয়ের আগে বরপক্ষ কনের বাড়িতে যাবে এবং কনেকে দেখতে চায়। কিন্তু কনের আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব এর জন্য বিনিময়ে টাকা, জুয়েলারি বা দামী কোনো উপহার চেয়ে থাকে। এর জন্য বরকে বেশ কিছু নাচ দেখাতে হয়। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের চাওয়া পাওয়া মিলে গেলে দু'জনার বিয়ে সম্পন্ন হয়। এমনই কিছুটা রীতি আমাদের দেশেও চালু রয়েছে অর্থাৎ বর যখন কনের বাড়িতে আসে তখন গেট ধরা হয়। যতক্ষণ না দাবি করা অর্থ পূরণ না করে ততক্ষণ বর কনের বাড়িতে ঢুকতে পারে না।