গাজীপুর অনলাইনঃ এক যুগেরও বেশি সময় পার করা গাজীপুর জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের কমিটি পুনর্গঠনের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে ছাত্রদল। আগামী ২৭ ডিসেম্বর দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার আগমনের আগেই তারা নতুন কমিটি চায়।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কমিটি পুনর্গঠন করা না হলে মূল দলের জেলা কার্যালয়ে তালা, গণঅনশন এমনকি রাজধানীর গুলশান কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালনের হুমকি দেয়া হয়েছে।
একই দাবিতে সোমবার সকালে জেলা শহরের রাজবাড়ি রোডের দলীয় কার্যালয়ের মূল গেটে তালা লাগিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা।
পরে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলনের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত কমিটি গঠনের আশ্বাস দেন পৌর বিএনপির নেতা মীর হালিমুজ্জামান ননী। এভাবে প্রায় তিন ঘণ্টা পর তালাবদ্ধ কার্যালয় খুলে দেয়া হয়।
এবিষয়ে ছাত্রদলের এক নেতা জানান, আগামী ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুরের জনসভায় অংশ নিতে আসছেন দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়া। এর আগে ১৯ ডিসেম্বর দলের গণঅনশন কর্মসূচি রয়েছে। এ জন্য আগামী ১৯ ডিসেম্বরের মধ্যেই ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠিত না হলে ছাত্রদল বিএনপির কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেবেনা। দলীয় কার্যালয় বন্ধ করে দেয়া হবে।
আবার একই দাবিতে ১৪ ডিসেম্বর জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে তৃণমূলের ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। ঘণ্টাব্যাপী ওই কর্মসূচি থেকে দ্রুত জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণার দাবি জানানো হয়। দাবি পূরণ না হলে গণঅনশন, গুলশান কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণার হুমকিও দেয়া হয়।
ছাত্রদলের দাবি, এক যুগ পেরিয়ে গেলেও গাজীপুরে ছাত্রদলের নতুন কমিটি হয়নি। অনেক নেতারই এখন আর ছাত্রত্ব নেই। অনেকেই মূল সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এ কারণে নতুন কমিটি না হলে আগামীতে সরকার বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের দেখা পাওয়া যাবে না বলে মনে করছেন ত্যাগী নেতারা।
নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ১৩ বছর ধরে গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের কমিটি না থাকায় ঝিমিয়ে পড়েছে নেতাকর্মীরা। আন্দোলন সংগ্রামে আগের মতো রাজপথে দেখা মিলছে না আর ছাত্রদল নেতাদের। কেবলমাত্র পদ-পদবি লাভের আশায় শোডাউনের জন্য কয়েকজন ছাত্রনেতা কিছু সংখ্যক কর্মী নিয়ে নিয়মিত দলীয় কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে। বর্তমানে যারা জেলা ছাত্রদলের নেতৃত্বে রয়েছেন তাদের ছাত্রত্বও শেষ হয়ে গেছে।
দলীয় সূত্রমতে, এক যুগ আগে গঠন করা জেলা ছাত্রদল সভাপতি সরাফত হোসেন পুরোদস্তর ব্যবসায়ী। তিনি বর্তমানে জেলা বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। একই ভাবে সাধারণ সম্পাদক হান্নান মিয়া হান্নু বর্তমানে পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। অনেক আগেই ছাত্রত্ব শেষ করে এখন তিনি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত কাউন্সিলর।
এদিকে, ছাত্রদলের জেলা কমিটি পুনর্গঠন না করায় উপজেলা, পৌরসভা ও কলেজ শাখার কমিটিগুলোও থমকে আছে। এতে ছাত্রদলে একদিকে নতুন নেতৃত্ব অন্যদিকে কর্মী সৃষ্টি হচ্ছে না। এক সময় গাজীপুরের রাজনীতিতে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের যে প্রভাব ছিল সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা ফুরিয়ে গেছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন গঠন হওয়ার পর ছাত্রদলের মহানগর কমিটি গঠন নিয়ে তোড়জোর শুরু হলেও এক বছরের বেশি সময়েও তা গঠন করা যায়নি।
ছাত্রদলের জেলা ও মহানগর কমিটি পুনর্গঠন না হওয়ার কারণ হিসেবে নেতাদের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য। জেলা বিএনপির এক নেতা মনে করছেন, কমিটি পুনর্গঠন না হওয়ার জন্য দায়ী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি। তারা জেলা ও মহানগর কমিটি কেন দিচ্ছেন না তা কারোই বোধগম্য নয়। তিনি অবিলম্বে ছাত্রদলের গাজীপুর জেলা ও মহানগর কমিটি দেয়ার আহ্বান জানান।
অপরদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, দফায় দফায় গাজীপুর জেলা ও মহানগর কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হলেও জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের হস্তক্ষেপের কারণে তা হচ্ছে না। কারণ হিসেবে তিনি জেলা ও মহানগরের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেরই পছন্দের প্রার্থী রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, নেতাদের পছন্দের একাধিক প্রার্থী থাকার কারণে কমিটি গঠনের উদ্যোগ থেকে যাচ্ছে।