স্টাফ রিপোর্টারঃ গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম কলেজ মাঠে আগামী ২৭ ডিসেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জনসভাকে ঘিরে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে প্রভাবশালী দুই রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। দুই পক্ষেই দেখা দিয়েছে টান টান উত্তেজনা।
খালেদা জিয়াকে গাজীপুরে ঢুকতে বাধা দেয়া ও জনসভা প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন। আবার যে কোনো উপায়ে জনসভা সফল করতে মরিয়া বিএনপি। তারা ইতোমধ্যে মিছিল মিটিং আর লিফলেট বিতরণ করে জনসভা সফল করার আহ্বান জানিয়েছে নেতাকর্মীদের। সমর্থকদেরও এতে সম্পৃক্ত করার তোড়জোর চলছে।
এদিকে, দুটি বিপরীতমুখী রাজনৈতিক দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি আর পরস্পরকে প্রতিহত করার ঘোষণায় নগর জুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। ২৭ ডিসেম্বর কী হবে এ নিয়ে তুমুল আলোচনার ঝড় উঠেছে। কেউ বলছেন, ব্যাপক রক্তপাত হবে। কেউ বলছেন, প্রশাসন থেকে সব ধরনের মিছিল সমাবেশ নিষিদ্ধ করে হয়তো সহিংসতা এড়ানো হতে পারে। কিন্তু এরপরেও দুই পক্ষে উত্তেজনা আর হুমকি পাল্টা হুমকিতে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের করা কটূক্তির প্রতিবাদে আগামী ২৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য খালেদা জিয়ার জনসভাস্থলে বিক্ষোভ সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রলীগ। ওই কর্মসূচির সমর্থনে তারা লিফলেট বিতরণ ও বিক্ষোভ মিছিল করছে। আবার ছাত্রলীগের এ ঘোষণাকে চ্যালেঞ্জ করে চেয়ারপারসনের সমাবেশ সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি। একই দিনে একই সময়ে দুটি রাজনৈতিক দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণায় উত্তেজনা বেড়েই চলেছে।
এ ব্যাপারে গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তওহীদুল ইসলাম দীপ বলেন, ‘তারেক জিয়া বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে কটূক্তি করেছে তা অত্যন্ত ধৃষ্টতাপূর্ণ। তার ওই বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে বা বিএনপি থেকে তাকে বহিষ্কার করা না হলে আগামী ২৭ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার জনসভা প্রতিহত করা হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনকে গাজীপুরে ঢুকতে দেয়া হবে না বলে হুশিয়ারি জানিয়ে তওহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দুই দাবি মানা হলেই কেবল খালেদা জিয়াকে জনসভা করতে দেয়া হবে। অন্যথায় ওই দিনে তারেক জিয়ার বক্তব্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে ছাত্রলীগ। এ কর্মসূচি সফল করতে লিফলেট বিতরণ ও বিক্ষোভ মিছিল করা হচ্ছে।’
এছাড়া আগামীকাল তারেক জিয়ার নামে রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানির মামলা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের সমাবেশ সফল করতে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে বর্ধিত সভা করা হবে।’
অপরদিকে, ছাত্রলীগের পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে শান্তিপূর্ণ এ জনসভা পায়ে পারা দিয়ে বানচালের চেষ্টা করা হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে বলে হুশিয়ার করেছেন বিএনপি নেতারা।
এবিষয়ে গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি ছাত্রলীগ কিছু শর্ত দিয়ে জনসভা বানচালের চেষ্টা করছে। কিন্তু শর্তে উল্লেখিত তারেক রহমান আমাদের দলের। ছাত্রলীগের প্রদত্ত কোনো পদ তিনি নেননি। তারেক জিয়ার পদ দিয়েছে বিএনপি। তাই কাকে সরাবে বা রাখবে তা দলের নিজস্ব বিষয়। এটা নিয়ে ছাত্রলীগের মাতব্বরি করার নৈতিক অধিকার নাই। তাই পায়ে পারা দিয়ে সমাবেশ বানচালের চেষ্টা করা হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।’
তাই প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে আয়োজন করতে যাওয়া ম্যাডামের জনসভা বাংলাদেশকে শান্ত রাখার স্বার্থেই করতে দেয়া উচিত বলে মনে করেন জেলা বিএনপির শীর্ষ ওই নেতা।
সূত্রমতে, সরকারপতনের আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠে আহুত জনসভায় ভাষণ দেয়ার কথা রয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার। এ সভাকে সফল করার লক্ষ্যে কাজ করছে জেলা বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা বিভিন্ন স্থানে লিফলেট বিতরণ করছে। মিছিল ছাড়াও দলীয় সভা করছে প্রতিদিনই।
তবে সম্প্রতি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তারেক রহমানের কটূক্তির প্রতিবাদে ওইদিন ভাওয়াল কলেজ মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগ নেতাদের দাবি, তারেক রহমানের বক্তব্য প্রত্যাহার করা না হলে ২৭ ডিসেম্বর ওই মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হবে। সমাবেশ সফল করতে ইতোমধ্যে লিফলেট বিতরণসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে তারা।
পুলিশের কাছে দুটি রাজনৈতিক দলই একই স্থানে সভা আহ্বান সংক্রান্ত আবেদন করেছে জানিয়ে গাজীপুর জেলা পুলিশ সুপার মো. হারুন অর রশিদ, পিপিএম বলেন, কর্মসূচি ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও মানুষের জানমালের ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।