এক সময় মাত্র একটি ট্রাক ছিল তার। এখন তিনি ১২শ’ বাসের মালিক। তিনি হানিফ এন্টারপ্রাইজের স্বপ্নদ্রষ্টা!!!

ডেস্ক রিপোর্টঃ এক সময় মাত্র একটি ট্রাক ছিল তার। এখন তিনি একে একে ১২শ’ বাসের মালিক। দেশের বিভিন্ন এলাকার সঙ্গে সেতুবন্ধন তৈরি করে চলেছে তার বাসগুলো। এলাকায় তিনি ‘ফাদার অব ট্রান্সপোর্টেশন’ হিসেবেই পরিচিত।

সংগ্রামী ও সফল এই মানুষটির নাম জয়নাল আবেদীন। হানিফ এন্টারপ্রাইজের স্বপ্নদ্রষ্টা তিনি। জীবনের শুরুটা বেশ বন্ধুর ছিল তার। তবে তা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হন নিরলস শ্রম আর কঠোর অধ্যাবসায়ে।

তার হাত ধরেই বিকশিত হয়েছে দেশের পরিবহন খাত। গণপরিবহনে তার ভূমিকা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে সবাই। এলাকার মানুষ তাকে ডাকেন জয়না মহাজন নামে।

জয়নাল আবেদীনের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকার সাভারে। মাত্র একটি ট্রাক নিয়ে পথ চলা শুরু। পরবর্তীতে শুরু কোচ ব্যবসা। গড়ে তোলেন পরিবহন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ‌‘হানিফ এন্টারপ্রাইজ’। ছোট ছেলে হানিফের নামেই গড়ে তুলেছিলেন হানিফ এন্টারপ্রাইজ। তারপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি।

পেট্রোল পাম্প, সিএনজি স্টেশন, ব্রিকস ম্যানুফ্যাকচারিং, কোল্ডস্টোরেজ, পানীয় ও প্রকাশনা ব্যবসাও গড়ে তুলেছেন এ স্বপ্নবাজ মানুষ। পরবর্তীতে যেখানেই হাত দিয়েছেন সোনা ফলিয়েছেন সেখানেই।

বড় ছেলে আলহাজ্ব কফিল উদ্দিন রাজনীতিবিদ। সাভার উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমান সরকারের আমলে নানা প্রতিবন্ধকতার বেড়াজাল ডিঙ্গিয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছেন সাভার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।

তবে রাজনীতি সম্পর্কে তীব্র অনীহা জয়নাল আবেদীনের। বাবা হাজী মো. আজিম উদ্দিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় টানা দুই যুগ আমিনবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। কিন্তু রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে উঠলেও প্রথম থেকেই রাজনীতিকে পাশ কাটিয়ে চলেছেন জয়নাল আবেদীন। মিডিয়া তাকে আকর্ষণ করে না।

সবাই দুই ছেলেকে চিনলেও হানিফ এন্টারপ্রাইজের আসল কারিগর জয়নাল আবেদীন সবসময়ই গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলেছেন। তাই তাকে নিয়ে কৌতুহলের শেষ নেই সাধারণ মানুষের।

সম্প্রতি বাংলানিউজের পক্ষ থেকে জয়নাল আবেদীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিনীতভাবে জানিয়ে দেন, কোন সাক্ষা‍ৎকার ও ছবি নেওয়া যাবে না। কিন্তু পাঠকদের আগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে দিতেই কিছুটা নমনীয় হন তিনি। বলতে থাকেন তার সাফল্যের সেই দিনগুলোর অজানা গল্প।

জয়নাল আবেদীন বলেন, আমার জন্ম সাভারের আমিনবাজারের হিজলা গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম ব্যবসায়ী পরিবারে। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে আমি ছিলাম পঞ্চম। বাবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থাকার সময় আমদানি রফতানির ব্যবসা করতেন। বিশেষ করে তিনি ধান-চাল ও চামড়ার সফল ব্যবসায়ী ছিলেন।

আমার বাবাই ছিলেন প্রথম ব্যবসায়ী যিনি সে সময় প্রথম করাচী, বোম্বে (বর্তমান মুম্বাই) ও বার্মার (বর্তমানে মায়ানমার) সঙ্গে জলপথে আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা শুরু করেন। সে সুবাদে সমাজের অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি ও রাজনীতিবিদ আসতেন আমাদের বাড়িতে। সে সময় আমার বড় ভাই সালাউদ্দিন ডাক্তারি পড়ছিলেন।

আমি তখন ভর্তি হই আমিনবাজার মিরপুর মফিদ-ই-আম জুনিয়র মাদ্রাসায়। সেখান থেকে বাবা আমাকে ভর্তি করেন মিরপুর সিদ্ধান্ত উচ্চ বিদ্যালয়ে। সে সময় আমি অত্যন্ত দূরন্ত ছিলাম। লেখাপড়ায় মন ছিল না। সারাদিন এখানে ওখানে ঘুরতাম।

এরই মধ্যে বাবা বড় ভাইয়কে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। মিরপুরের হাজী নুরুল ইসলামের মেয়ে মমতাজ বেগমের সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক করলেন। কিন্তু বড় ভাই তখন বিয়েতে রাজি ছিলেন না। তাই আমাকেই বসানো হলো সেই বিয়ের পিঁড়িতে। তখন আমার বয়স মাত্র ১৪ বছর। আর মমতাজ বেগমের বয়স ছিল মাত্র ১২ বছর।

পড়াশোনায় মনোযোগী না হওয়ায় ব্যবসা শুরু করলাম। বাবার টাকায় শুরু করলাম ধান-চালের ব্যবসা। সে সময় এতো পরিবহন তো ছিলই না, এমনকি দূরপাল্লার রাস্তাও ছিল কম। যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম ছিল ট্রেন, না হয় নৌপথ।

ধান-চালের ব্যবসায় কমলাপুর থেকে ট্রেনে সান্তাহার-সেখান থেকে বাসে চেপে নওগাঁ-তারপর টমটম ধরে মহাদেবপুর-সেখান থেকে পায়ে হেটেঁ চলে যেতাম মহিষবাথান নামের জায়গায়। সেখানের মানুষ আমার কাছে তিন হাজার টাকা দেখে অবাক! তারা ভাবছিল এত কম বয়সী ছেলের হাতে এত টাকা! এমনকি আমাকে চাল ব্যবসায়ী মনে করাটাও বোকামি মনে করছিল অনেকে।

হঠাৎ পূর্ব পাকিস্তানে চালে আকাল। চালের সরবরাহ কম, মূল্য বেশী। তাই চাল কিনতে প্লেনে চেপে যশোর গেলাম। ভাড়া ছিলো মাত্র ২৭ টাকা। সাথে ছিল আমার গোমস্তা। সে সময়ই আমি একাই আড়াইশ মণ চাল কিনলাম। এবার ফেরার পালা।

নানা ঘাট হয়ে আমাদের চাল বোঝাই নৌকা যখন মুন্সীগঞ্জের কাছে পদ্মায় ভাসছিল তখন প্রচণ্ড ঝড়ে নৌকা ডুবে গেল। সে যাত্রায় মাঝিদের সহায়তায় প্রাণে রক্ষা পাই। যতদূর মনে পড়ে, ওই দুর্ঘটনায় হাতের মুঠোয় আকঁড়ে রাখা ৫০ টাকা ছিল বাড়ি ফেরার শেষ সম্বল। বাড়ি ফিরে ধান-চালের ব্যবসা বাদ দিলাম।

এরপর পরিবারের ৫ ভাই একসঙ্গে হজ্ব করতে সৌদি আরবে গেলাম। এ ঘটনা এলাকায় তো বটেই, ভরতবর্ষেও তোলপাড় তুলে দিলো। তৎকালীন লর্ড এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করে আমাদের পরিবারকে ঐতিহ্যবাহী পরিবার অ‍াখ্যা দেন। এলাকায় আমাদের বাড়ির নাম হলো হাজী বাড়ি। আমরা কলকাতা বন্দর থেকে জলপথে জাহাজে চেপে সৌদি বন্দরে পৌঁছালাম। সেখান থেকে উটের পিঠে চড়ে গেলাম মক্কা-মদিনায়।

স্বাধীন হওয়ার পর দেশ পুনর্গঠনে ডাক পড়লো। মানিক মিয়া এভিনিউ, সংসদ ভবন এলাকায় তখন বোরো ক্ষেত। ওই ক্ষেতে সাব কন্ট্রাক্টে শুরু করলাম মাটি ফেলার কাজ। মাত্র ১৪ হাজার টাকায় তিন টনি একটি পেট্রোল ট্রাক কিনলাম। সেখান থেকেই শুরু। সঙ্গে কয়েকটি ট্রাক ভাড়াও নিলাম। পরে ট্রাকটি বিক্রি করে বেডফোর্ডের পাঁচ টনি ডিজেল ট্রাক কিনলাম।

একই সময় কাজ পেলাম ফেনীর মাতা ম‍ুহুরী নদীর বাঁধ নির্মাণে। সেখানেও সাব কন্ট্রাক্ট। মাটি ফেলার জন্যে ঠিকাদার আমাকে অগ্রীম ১০ লাখ টাকা দিলেন। তা দিয়ে কিনলাম দুটি হিনো কোচ। ছোট ছেলে হানিফের নামে যাত্রা শুরু করলো ‘হানিফ এন্টাপ্রাইজ’। প্রথমে ঢাকা-বগুড়া রুটে। পরবর্তীতে একটির সাফল্য ধরে আরো একটি একটি করে রুট বাড়তে থাকলো। এভাবেই গত চার দশকে বহরে যুক্ত হয়েছে ১২শ’ বাস।

রাজনীতিতে না আসার কারণ জানতে চাইলে জয়নাল আবেদীন বলেন, হয়তো আরও বহুদূর যেতাম! তারপর নিজের আবেগ থামিয়ে সতর্ক হয়ে কথায় ফিরিয়ে আনেন নিজেকে।

বর্তমানে হানিফ এন্টারপ্রাইজে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। সততা, বিশ্বস্ততা আর নির্ভরতার প্রতীকে পরিণত হয়েছেন জয়নাল আবেদীন। আজ অনেকেই তার দুই ছেলেকে চেনেন। আর এখানেই তার আনন্দ।


সূত্র বাংলানিউজ ২৪.কম





নাম

অর্থ ও বাণিজ্য,237,আন্তর্জাতিক,732,কাপাসিয়া,343,কালিয়াকৈর,418,কালীগঞ্জ,253,খেলা,644,গাজীপুর,3942,চাকরির খবর,34,জয়দেবপুর,1581,জাতীয়,2968,টঙ্গী,912,তথ্যপ্রযুক্তি,512,ধর্ম,196,পরিবেশ,137,প্রতিবেদন,310,বিজ্ঞান,55,বিনোদন,698,ভিডিও,58,ভিন্ন খবর,142,ভ্রমন,115,মুক্তমত,27,রাজধানী,829,রাজনীতি,1057,লাইফস্টাইল,283,শিক্ষাঙ্গন,398,শীর্ষ খবর,10776,শ্রীপুর,481,সাক্ষাৎকার,12,সারাদেশ,649,স্বাস্থ্য,212,
ltr
item
GazipurOnline.com: এক সময় মাত্র একটি ট্রাক ছিল তার। এখন তিনি ১২শ’ বাসের মালিক। তিনি হানিফ এন্টারপ্রাইজের স্বপ্নদ্রষ্টা!!!
এক সময় মাত্র একটি ট্রাক ছিল তার। এখন তিনি ১২শ’ বাসের মালিক। তিনি হানিফ এন্টারপ্রাইজের স্বপ্নদ্রষ্টা!!!
http://3.bp.blogspot.com/-Fa-QWRNe3ZY/VJrC4PMl9SI/AAAAAAAAMLY/oSAkVf7TiXA/s1600/Hanif.jpg
http://3.bp.blogspot.com/-Fa-QWRNe3ZY/VJrC4PMl9SI/AAAAAAAAMLY/oSAkVf7TiXA/s72-c/Hanif.jpg
GazipurOnline.com
https://www.gazipuronline.com/2014/12/hanifent.html
https://www.gazipuronline.com/
https://www.gazipuronline.com/
https://www.gazipuronline.com/2014/12/hanifent.html
true
13958681640745950
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Read More Reply Cancel reply Delete By প্রচ্ছদ PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share. STEP 2: Click the link you shared to unlock Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy