আমেরিকা কখনো চায় না আমরা স্বাধীনভাবে বাঁচতে শিখিঃ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি বলেছেন, “আমেরিকা কখনো চায় না আমরা স্বাধীনভাবে বাঁচতে শিখি। আমেরিকা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ঘোর বিরোধিতা করেছিল। যুদ্ধের শেষলগ্নে তারা সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল। একইভাবে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের বিরোধিতা করেছিল। তারা বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানোর স্বপ্ন দেখিয়েছিল। সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি বলেই তাদের গা জ্বালা করছে। এ কারণেই তারা নানা ছবক দিতে আসছে।”

সম্প্রতি নিশা দেশাই বিসওয়ালের সফর সম্পর্কে একান্ত সাক্ষাৎকারে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

মোজাম্মেল হক বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে এখনো কালো মানুষদের হত্যা করা হচেছ। তাদের দেশে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লক্সঘন হচেছ। সারা বিশ্ব যুদ্ধে যুদ্ধে জ্বালিয়ে পুড়ছে। ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে ফিলিস্তিনের হাজার হাজার সাধারণ মানুষকে হত্যা করলো। সমস্ত মুসলিম বিশ্বকে ধ্বংস করে চলছে। তাদের মানবাধিকার কোথায়? এটি নিয়ে তো কেউ কথা বলি না। তারা যখন মানবাধিকার শেখাতে আসে, তখন হাসি পায়।”

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের টানাপড়েন চলছে কি না এ ব্যাপারে মন্ত্রী বলেন, “আমি এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাই না। সময় এসেছে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার, কথা বলার। যুক্তরাষ্ট্র অন্যায়ভাবে শক্তি প্রয়োগ করবে আর সমস্ত পৃথিবী নিশ্চুপ হয়ে থাকবে, তা মনে করার কোনো কারণ নেই। তারা তো যা খুশি তা-ই করে চলছে। ওসামা বিন লাদেন অপরাধী ঠিক আছে। কিন্তু মৃত্যুর পর একজন মুসলমানের জানাজা হয়, কবর হয়। তারা সেটাও করতে দেয়নি। লাদেনের লাশ সমুদ্রে ভাসিয়ে দিয়েছে। এগুলো চরম মানবাধিকার লক্সঘন। রাষ্ট্রের সর্বোচচ ক্ষমতার অধিকারী জনগণ। নির্বাচন হবে কি হবে না, তা জনগণ নির্ধারণ করবে। নির্বাচন কবে হবে, তা যুক্তরাষ্ট্র বলার কে? কোনো বিদেশি শক্তির কাছে নতিস্বীকার করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব না। ”

স্বাধীনতার ৪৪ বছর পার করছে বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের আকাক্সক্ষায় কোথায় যেতে পারলাম আমরা? -এমন প্রশ্নের জবাবে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, “স্বাধীনতার ৪৪ বছরে বাংলাদেশ কাক্সিক্ষত জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ যে শক্তি এবং চেতনা নিয়ে এগুচ্ছিল, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তা থামিয়ে দেয়া হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে সংবিধানের মূলনীতির পরিবর্তন আনা হয়। ধর্মকে পুঁজি করে এবং স্বাধীনতাবিরোধী চেতনাকে ধারণ করে স্বাধীন বাংলাদেশকে মিনি পাকিস্তান বানানোর চেষ্টা চলে। শাহ্ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করা হলো। স্বাধীনতাবিরোধী আবদুল আলিম, আব্দুর রহমান বিশ্বাস, মাওলানা আব্দুল মান্নানকে মন্ত্রী বানানো হলো। তারা ক্ষমতায় এসেই পাকিস্তানি ভাবধারা প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনাকে বুকে ধারণ করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা, তা অকার্যকর হয়ে ওঠে। গণমানুষের উন্নয়নের পরিবর্তে ব্যক্তিস্বার্থকেই প্রাধান্য দেয়া হয়। একটি রাষ্ট্রকে পেছনের দিকে নিতে যা যা করণীয়, তার সবই তারা করেছিলেন।”

মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, “শহিদদের বিষয়টি আমরা দুইভাগে ভাগ করেছি। প্রথমত, যারা মুক্তিযুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন তাদের সংখ্যা। দ্বিতীয়ত, যারা যুদ্ধ করেননি কিন্তু‘ পাকিস্তানি হানাদারদের রোষানলে প্রাণ দিয়েছেন তাদের আরেকটি সংখ্যা। এটি আমরা গুলিয়ে ফেলেছিলাম। দু’পর্যায়ই শহিদ। কিš‘ মর্যাদার দিক থেকে প্রশ্ন থেকে যায়। একজন হ”েছন মুক্তিযোদ্ধা শহিদ। অন্যজন হচেছন গৌণ শহিদ। এ নিয়ে তালিকায় হেরফের আছে। মন্ত্রণালয়ে অনেক আবেদন এসেছে, যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় শহিদ হয়েছেন, তাদের মুক্তিযোদ্ধা শহিদ বলে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। অনেকের  আবার নাম ঠিকানাও নেই।”

যুদ্ধাপরাধের বিচারের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি বলেন, “যুদ্ধাপরাধের বিচার জাতীয় আকাক্সক্ষা। দীর্ঘ চার দশক পর জাতি কঠিন বাস্তবতার সম্মুখে। এই বিচার নিয়ে কোনো প্রকার অবহেলার সুযোগ নেই। বিচার আদালত করবে। কিন্তু জাতির আবেগ-অনুভূতি আমরা বুঝতে পারি, প্রকাশ করতে পারি। বিচারে দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বো”চ সাজা হবে, এটিই জাতি প্রত্যাশা করে। এই বিচার নিয়ে যাতে কোনো প্রকার বিতর্ক সৃষ্টি না হয়, সে দিকেও আমরা বিশেষভাবে নজর রাখছি। এ কারণে মাসের পর মাস ধরে শুনানি চলছে, সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিচেছন। বিচার খুবই স্ব”ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হচেছ। বিচার নিয়ে আমরা শতভাগ আশাবাদী।”

তাজউদ্দীন আহমদ সম্পর্কে মোজাম্মেল হক বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি তার অধীনেই কাজ করেছি। এ কারণে খুব কাছে থেকে তাকে মূল্যায়ন করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। তিনি বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে কাছের এবং বিশ্বস্ত মানুষ ছিলেন। বঙ্গবন্ধু জানতেন, তার অনুপস্থিতিতে তাজউদ্দীন জাতির নেতৃত্ব দিতে পারবে। মুক্তিযুদ্ধে তা-ই প্রমাণ হয়েছে। তাজউদ্দীন আহমদের সাহসী নেতৃত্বের ফলেই মাত্র ৯ মাসের ব্যবধানে আমরা পাকিস্তানি সেনাদের পরাস্ত করতে পেরেছি। সৎ, দক্ষ এবং নিষ্ঠার কারণেই তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের মনের মানুষ হতে পেরেছিলেন।”

জিয়াউর রহমানও অন্যতম মুক্তিযোদ্ধা। খলনায়ক বলছেন। কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন বটে, কিন্তু স্বাধীনতার পর তিনি আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেননি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ক্ষমতায় এসে তার কাজের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। রাজনীতিতে সবচেয়ে ঘৃণ্য অধ্যায় সংযোজন করেছেন জিয়াউর রহমান। রাজনীতি কলুষিত হওয়ার পেছনে জিয়াউর রহমানের নামই সবার আগে আসে।”

৫ জানুয়ারির নির্বাচন গণতন্ত্রের হুমকি বলে অনেকে মনে করছেন। এ ব্যাপারে কী বলবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মোজাম্মেল বলেন, “৫ জানুয়ারির  নির্বাচনে অংশ নেয়ায় সবার জন্যই রাস্তা খোলা ছিল। বিএনপি যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতকে নিয়ে নির্বাচনে অংশ না নেয়ার অর্থই ছিল ষড়যন্ত্র। ষড়যন্ত্র ছিল সাংবিধানিক কাঠামোকে ভেঙে ফেলা। ২৩ জানুয়ারি সরকারের মেয়াদ শেষ হতো। এর আগে নির্বাচন না হলে অগণতান্ত্রিক শক্তি ক্ষমতায় আসত। আমরা নির্বাচন করেই সংবিধান, গণতন্ত্র রক্ষা করেছি। ”

সাক্ষাৎকারে মোজাম্মেল হক দাবি করেন, “জনগণ সুখে আছে। দেশে কোনো অস্থিরতা নেই। যারা নির্বাচন চাইছে, তারা সংবিধানের বাইরে গিয়ে কথা বলছে। তারা আগে বলুক যে, আমরা সংবিধান মানি। তবেই সরকার বিবেচনা করবে। সংবিধানের বাইরে কোনো কথা হতে পারে না। ”




নাম

অর্থ ও বাণিজ্য,237,আন্তর্জাতিক,732,কাপাসিয়া,343,কালিয়াকৈর,418,কালীগঞ্জ,253,খেলা,644,গাজীপুর,3942,চাকরির খবর,34,জয়দেবপুর,1581,জাতীয়,2968,টঙ্গী,912,তথ্যপ্রযুক্তি,512,ধর্ম,196,পরিবেশ,137,প্রতিবেদন,310,বিজ্ঞান,55,বিনোদন,698,ভিডিও,58,ভিন্ন খবর,142,ভ্রমন,115,মুক্তমত,27,রাজধানী,829,রাজনীতি,1057,লাইফস্টাইল,283,শিক্ষাঙ্গন,398,শীর্ষ খবর,10776,শ্রীপুর,481,সাক্ষাৎকার,12,সারাদেশ,649,স্বাস্থ্য,212,
ltr
item
GazipurOnline.com: আমেরিকা কখনো চায় না আমরা স্বাধীনভাবে বাঁচতে শিখিঃ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী
আমেরিকা কখনো চায় না আমরা স্বাধীনভাবে বাঁচতে শিখিঃ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী
http://2.bp.blogspot.com/-VE43k2Rg7KY/VIqW8GVhnYI/AAAAAAAAL7g/4n_zvehI4w4/s1600/mojammel%2Bhq.jpeg
http://2.bp.blogspot.com/-VE43k2Rg7KY/VIqW8GVhnYI/AAAAAAAAL7g/4n_zvehI4w4/s72-c/mojammel%2Bhq.jpeg
GazipurOnline.com
https://www.gazipuronline.com/2014/12/interview.html
https://www.gazipuronline.com/
https://www.gazipuronline.com/
https://www.gazipuronline.com/2014/12/interview.html
true
13958681640745950
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Read More Reply Cancel reply Delete By প্রচ্ছদ PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share. STEP 2: Click the link you shared to unlock Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy