স্টাফ রিপোর্টারঃ দীর্ঘ ২৩ ঘণ্টা শ্বাসরুদ্ধকর উদ্ধার অভিযানে যখন ফায়ার সার্ভিস ও প্রশাসন পুরোপুরি ব্যর্থ, তখনই দেশীয় প্রযুক্তিতে তিন বন্ধুর নেতৃত্ব ও পরিকল্পনায় উদ্ধার হলো সাড়ে ৩ বছরের ছোট্টো শিশু জিহাদ। যখন তাকে তুলে আনা হলো তখন সে মৃত।
যাদের পরিকল্পনায় এ অসম্ভব ব্যাপারটি সম্ভব হয়েছে তারা হলেন- শফিকুল ইসলাম ফারুক, শাহ মো. আব্দুল্লাহ মুন ও সুজন দাস রাহুল। এ ছাড়া তাদের সহযোগী ছিলেন- লিটু, আবু বকর সিদ্দিক, আব্দুল মজিদ, আব্দুল কাদের চৌধুরী ও শরিফুল ইসলাম।
তবে তারা কেউই এ সফলতার কৃতিত্ব দিতে নারাজ। তারা সবাই সম্মিলিতভাবে এ কাজটি করেছেন বলে মনে করেন তারা।
শাজাহানপুরে শিশু জিহাদ গভীর কূপের ভেতর পড়ে যাওয়ার সংবাদটি তারা জানতে পারেন টেলিভিশনের মাধ্যমে। জিহাদকে উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন আর স্থানীয়দের একের পর এক ব্যর্থতা দেশের কোটি মানুষের মতো তাদেরকে উদ্বিগ্ন করে তোলে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন সহযোগী আব্দুল মজিদ, লিটু ও শরিফুল ইসলাম।
এই অভিযানের মূল নেতৃত্বে ছিলেন মাছ ব্যবসায়ী ফারুক। তিনি নিজের বাসায় টিভিতে উদ্ধার অভিযানের ব্যর্থতা দেখে নিজেই একটি কৌশল আবিষ্কারের চেষ্টা করেন। নিজস্ব চিন্তা থেকে একটি যন্ত্রের প্রোটোটাইপও আঁকেন। এরপর সেটি নিয়ে চলে আসেন ঘটনাস্থলে।
প্রথমে তারা পরিকল্পনা করেন- নিজেদের মধ্যে কেউ একজন কূপের ভেতর নামবেন। এজন্য ফায়ার সার্ভিসের কাছে অক্সিজেন মাস্ক, সেফটি বেল্টসহ আরো কিছু জিনিসপত্র চান। কিন্তু ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ এই ঝুঁকি নিতে রাজি হয়নি। এরপরও হাল ছাড়েননি তারা।
এবার তারা ভাবতে থাকেন বিকল্প কিছু। ফারুকের নেতৃত্বের তারই পরিকল্পনা অনুযায়ী শাহ আব্দুল্লাহ মুন ও সুজন দাস রাহুলের যৌথ প্রয়াসে তৈরি করা হয় সেই যন্ত্র। এর জন্য ফায়ার সার্ভিসেরও সহায়তা নেন।
কিন্তু কাজটি করতে হবে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে। ফারুক ও আবু বকর সিদিদ্দীক যোগাযোগ করেন রানপ্লাজা দুর্ঘটনায় স্বেচ্ছাসেবক যিনি পেশায় একজন ইলেকট্রিশিয়ান সেই আব্দুল মজিদের সঙ্গে। তাদের সঙ্গে আরো যোগ দেন গাড়ি ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম, লিটু ও আব্দুল কাদের চৌধুরী।
ঘটনাস্থলের সামনেই শনিবার সকালে ৩/৪ ঘণ্টার চেষ্টায় সামান্য কিছু রড, একটি সিসি ক্যামেরা, তার সঙ্গে একটি ভালো মানের টর্চ যুক্ত করে তারা তৈরি হয় বিশেষ যন্ত্রটি। যন্ত্রটি একটি খাঁচার মতো। এর শেষ প্রান্তে তিনটি রডের কিনারায় লুপের মতো করে আংটা লাগানো হয়। খাঁচাটি যখন কোনো বস্তুর গা বেয়ে ঢুকবে তখন আংটাগুলো শোয়ানো থাকবে। এরপর খাঁচাটি উপর দিকে টানলেই আংটাগুলো খুলে গিয়ে বস্তুটিকে ধারণ করবে। খাঁচাটি সঙ্গে লাগানো হয় রশি ও ক্যামেরার তার। মনিটর হিসেবে তারা ব্যবহার করেন ঘটনাস্থলের পার্শ্ববর্তী একটি বাসা থেকে আনা টেলিভিশন।
যন্ত্রটি বানানোর পর থেকে তারা অপেক্ষা করতে থাকেন। কিন্তু ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ সেখানে কাজ করতে থাকায় সুযোগ পাননি।
দুপুরে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ যখন হাল ছেড়ে দেয় তখন তারা কাজে নেমে পড়েন। যন্ত্রটি কুপের ভেতর নামানো প্রথম চেষ্টাতেই সফল। শিশু জিহাদের নিথর দেহ উঠে আসে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে সেটি ওই খাঁচার আংটাতে না আটকে বরং তার গায়ে জড়িয়ে থাকা দড়িতে ঝুলে ছিল। আংটায় লেগে ছিল সেই দড়ি।
জিহাদকে পাইপ থেকে তুলে কোলে নিয়ে হাজারো মানুষের ভিড় ঠেলে তারা দৌঁড়াতে থাকেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় তাকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা হিসেবে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু ডাক্তার জানালেন কয়েক ঘণ্টা আগেই সব শেষ হয়ে গেছে।