স্টাফ রিপোর্টারঃ সুইস ব্যাংকে জব্দ হওয়া সাত বিলিয়ন ডলার (৫১ হাজার কোটি টাকা) অবমুক্ত হলে পদ্মা সেতু নির্মাণে সহায়তা এবং সরকারি কর্মচারি, শিক্ষক, অসহায়, বৃদ্ধের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চান ধনকূবের প্রিন্স ড. মুসা বিন শমসের।
বৃহস্পতিবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন আলোচিত-সমালোচিত ব্যবসায়ী মেসার্স ডেটকো লিমিটেডের চেয়ারম্যান মুসা বিন শমসের।
বিদেশে অর্থ পাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন উপ পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলীর নেতৃত্বে বিশেষ একটি টিম।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সুইস ব্যাংকে তার সাত বিলিয়ন ডলার জব্দ অবস্থায় আছে বলে স্বীকার করেন তিনি।
মুসাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বেলা ১১টায় দুদকে আসতে বলা হলেও তিনি সকাল ৯টার কিছু আগে সাদা রংয়ের একটি বিলাসবহুল মার্সিডিস গাড়িতে করে নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর ৭-৮টি গাড়ির বহরসহ দুদক কার্যালয়ে আসেন।
দুদক কার্যালয়ের সামনে গাড়িগুলো থামার পর নামেন ২০-২৫ জনের নিরাপত্তা বাহিনী। নিরাপত্তা বলয়ে রাখা হয় প্রিন্সের গাড়ি। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে চারজন নারী নিরাপত্তা কর্মীও ছিলেন।
৭০ বছর বয়সের কাছাকাছি পৌছেও শ্যামলা রংয়ের সুঠাম দেহের প্রিন্স ছিলেন স্বাভাবিক। পরে নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকজন অনুসন্ধান কর্মকর্তা জয়নুল আবেদীন শিবলীর সঙ্গে যোগাযোগ করে অবহিত করলে মুসাকে দুদক ভবনের দুই তলায় কন্ট্রোল রুমে সকাল ৯টায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত টানা চার ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদকালে তার পেছনে দু’জন নারী বডিগার্ড ও পাশে একজন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি।
সাংবাদিকদের বলেন, আইনের উর্ধ্বে বাংলাদেশে কেউ নেই। আমি আইনকে শ্রদ্ধা করি। দুদক আমাকে ডেকেছিল, আমি এসেছি। দুদকের সব প্রশ্নের জবাব আমি দিয়েছি।
সুইস ব্যাংকে জব্দ থাকা সাত বিলিয়ন ডলার সম্পর্কে বলেন, প্রত্যেকটি গল্পের একটি ইতিহাস থাকে। সাত বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ৫১ হাজার টাকা বিদেশে আছে- এটা সবাই বুঝে যে, এই পরিমাণ টাকা বাংলাদেশে কারো পক্ষে অর্জন করা সম্ভব নয়। আগামী ৫০ বছরে এদেশে কেউ অর্জন করতে পারবেও না। যা উপার্জন করেছি বিদেশেই করেছি। আমি দেশ থেকে কোনো টাকা বিদেশে পাচার করিনি। দুদকের অনুসন্ধানেই তা বেরিয়ে আসবে।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, এটি সাজানো ঘটনা। অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, মিথ্যা, বানোয়াট- এটা সবাই জানে।
পদ্মা সেতু নির্মাণ বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মুসা বলেন, গোয়ালন্দ-আরিচা ও নগরবাড়ি পর্যন্ত সেতু নির্মাণ করতে তিন বিলিয়ন ডলার লাগবে। ওই সেতু নির্মাণে আর্থিক সহায়তা দিতে আমি শুধু নই আমার পিতারও স্বপ্ন ছিল। সুইস ব্যাংকের টাকা অবমুক্ত হলে পদ্মা সেতু নির্মাণে সহায়তা করা হবে। এর পাশাপাশি সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক, অসহায় ও বৃদ্ধদের পুনর্বাসনে সহায়তা করে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলব।
পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত তার নামে অবৈধ সম্পদ ও অর্থ পাচারের রিপোর্ট সম্পর্কে বলেন, পত্রিকার সংবাদ বিচারব্যবস্থার জন্য ভাইটাল কোন এভিডেন্স হতে পারে না। আমি হ্যাপি যে, দুদক অনুসন্ধান করছে। অনুসন্ধান করতে গিয়ে দুদকের চোখ খুলে যাবে।
চলতি বছরের জুনে ‘বিজনেস এশিয়া’ ম্যাগাজিনে মুসা বিন শমসেরের লাইফ স্টাইল নিয়ে প্রকাশিত রিপোর্টের তথ্য আমলে নিয়ে দুদক তার নামে-বেনামের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে গত ৩ নভেম্বর। ম্যাগাজিনের ওই প্রতিবেদনে তার বিলাসবহুল জীবন, দেশে-বিদেশে অর্জিত অর্থ-সম্পদের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার কাছে নোটিশ পাঠানো হয় গত ৪ ডিসেম্বর। নামে-বেনামে সম্পদের খোঁজে এরই মধ্যে মুসার আত্মীয় ও ঢাকার ব্যবসায়ী কেএম শহীদ উল্লাহকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আগামী ২৪ ডিসেম্বর জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে মুসার মালিকানাধীন ডেটকো লিমিটেডের ম্যানেজার ফারুক-উজ-জামানকে।