মেয়েদের শরীরের লোভ করেনি এমন পুরুষ খুব কম: তসলিমা নাসরিন

অনেক দিন প্রেম না করলে এমন হয়, প্রেম করতে ভুলে যাই। প্রেম না করে বছরের পর বছর কী করে যে পার করি! ভাবলেই কষ্ট হতে থাকে সারা শরীরে। প্রেম কার সঙ্গে করব? হাবিজাবি লোকদের সঙ্গে প্রেম করার চেয়ে বেড়াল নিয়ে খেলা করা অনেক ভালো। প্রেম না করার অনেক সুবিধে আছে, প্রচুর সময় জোটে যা ভালো লাগে তা করার, পড়ার, লেখার, ভাবার, কোথাও যাওয়ার। প্রেমিক থাকা মানে ২৪ ঘণ্টা তাকে নিয়ে থাকতে হবে, তার সঙ্গে কথা বলতে হবে, তাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে, ঘন ঘন তাকে ফোন করতে হবে, টেক্সট করতে হবে, তার সুবিধা-অসুবিধা দেখতে হবে,
সে কী খেতে, কী শুনতে, কী করতে পছন্দ করেন এসব মুখস্থ রাখতে হবে। তার জীবনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। সে বেড়াতে চাইলে বেড়াতে যেতে হবে। সঙ্গে বসে খেতে হবে, শুতে চাইলে শুতে হবে। ফুলটাইম প্রেমিকের বদলে পার্টটাইম প্রেমিক থাকা ঢের ভালো। বেশির ভাগ সময় আমারই রইল, ফুল টাইমের ধকল থেকে বাঁচল, পর্বতপ্রমাণ দায়িত্বের বোঝা বয়ে হাড়গোড় গুঁড়ো হলো না, মাঝে-মধ্যে তুমুল প্রেমও হলো, শুকিয়ে যাওয়া থেকে বাঁচল জীবন। কিন্তু সাপিয়োসেক্সয়ালদের জন্য যার-তার সঙ্গে প্রেম করা একটু অসুবিধেই বটে। সাপিয়োসেক্সয়ালরা প্রতিভাবান, বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ ছাড়া আর কারও প্রতি আকৃষ্ট হয় না। একটা ছ’ফুট হ্যান্ডসাম গবেট এনে দাও, দুই মিনিট কথা বলে আমি আগ্রহ হারিয়ে ফেলব। শেষ প্রেম তিন বছর আগে করেছিলাম। পার্ট টাইমই ছিল। কিন্তু বেচারা এমনই ফুলটাইম প্রেমিকের মতো আচরণ শুরু করেছিল, আমার লেখাপড়ার বারোটা বেজেছিল। উপদ্রব বিদেয় হয়েছে, বেঁচেছি। আজ আবার তিন বছরের হিসাবটা করে মনে হচ্ছে জীবন শুকিয়ে যাচ্ছে, একটু মদ্যপান করার মতো কালে-ভদ্রে একটুখানি প্রেম না হলে মনে হচ্ছে আর চলছে না। দীর্ঘদিন লেখাপড়ায় ডুবে থাকলে নিজেকে কেমন জম্বি বলে মনে হয়, তখন আড়মোড়া ভেঙে উঠে চা-টা খেয়ে, চান টান করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলে ইচ্ছে হয়, কেউ এসে ঠোঁটে আলতো করে একটু চুমু খাক, কবিতা শোনাক, একটুখানি ভালোবাসুক। উন্মাদের মতো ভালোবাসুক, চাই না। ও খুব রক্তক্ষয়ী। বেশ কবার আমাকে ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ বলে পালাতে হয়েছে।

চিরকালই আমি ভুল মানুষের সঙ্গে প্রেম করেছি, এতে সবচেয়ে বড় যে সুবিধে হয়েছে, তা হলো কারও সঙ্গে দীর্ঘকাল সংসার করতে হয়নি আমার। বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ একটা লোক আমার শোবার ঘরে, পড়ার ঘরে, বসার ঘরে, বারান্দায়, আমার বাথরুমে অবাধ বিচরণ করবে, আর ভালবাসার শর্ত হিসেবে আমার তাকে বর্ণনা করতে হবে আমি কোথায় গেলাম, কী করলাম, কী লিখলাম, কী ভাবলাম, কী খেলাম, থেকে থেকে মিষ্টি মিষ্টি হাসতে হবে আর তাকে সুখ-শান্তি দিতে সকাল-সন্ধ্যা বলতে হবে অথবা বোঝাতে হবে, তাকে ভালবাসি। ও ভাবলে আমার শ্বাসকষ্ট হতে থাকে। ভালবাসলে যে কারও গাধামো আর ছাগলামোকেও মধুর মনে হয়, জানি। দীর্ঘদিন ভালোবাসা পেলে পদার্থও কিন্তু অপদার্থ হয়ে ওঠে, আর অপদার্থের সঙ্গে এক বাড়িতে জীবনযাপন বেশি দিন করলে সত্যিকার জম্বি হয়ে যেতে হয়। পার পাওয়ার কোনো পথ থাকে না। মাঝে-মধ্যে ভাবি, ভুল প্রেমিকের বদলে ঠিকঠাক প্রেমিক পেলে সর্বনাশ হতো আমার। ওই এক চেহারা দেখতে দেখতে, ওই এক পড়া-বই বারবার পড়তে পড়তে, বিরক্ত হওয়ার বোধশক্তিও বোধ হয় হারিয়ে যেত। দীর্ঘদিন কারও সঙ্গে বাস করলে ওই হয়, বোধ-বুদ্ধি লোপ পেয়ে যায়। তারপর বাচ্চা-কাচ্চা ঘটে যাওয়া মানে তো, নির্ঘাত পরপারে চলে যাওয়া। ভুল প্রেমিকরা আমাকে জন্মের বাঁচা বাঁচিয়েছে। এখন একখানা ভুল প্রেমিক জুটে গেলে দীর্ঘ তিন বছরের প্রেমহীন জীবনের দুঃখও কিছু ঘোচানো যাবে। মুশকিল হলো, ওই জোটানো জিনিসটাই আমি সারা জীবনে পারিনি। ও পথে আমার পা এক পাও চলে না। লোকেরা বরং সময় সময় আমাকে জুটিয়ে নিয়েছে। আমার নিজের পছন্দে একটি প্রেমও আমি আজ অবধি করিনি। অন্যের পছন্দের বলি হয়েছি কেবল। ভাবলে শিউরে উঠি।

এই তো গত সপ্তাহে এক চোখ ধাঁধানো বেলজ যুবকের সঙ্গে পরিচয় হলো। নিউরোসায়েন্সে পিএইচডি করেছে, এখন শখের ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল সামলাচ্ছে ক’দিনের জন্য। আমি ছিলাম ওই মিলেনিয়াম ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের অতিথি। ছবিতে আমার পাশে সাদা শার্ট পরা ছেলেটিই ডেভিড, যার কথা বলছিলাম।

ওকে দেখে আমার মনে হলো প্রেম করার জন্য পারফেক্ট একটা ছেলে। বুদ্ধিদীপ্ত, তার ওপর সুদর্শন। কিন্তু হলে কী হবে, ওর বয়স ২৭।

আমার হাঁটুর বয়সী। বয়সটা শুনে প্রেমের উদ্রেক হওয়ার বদলে একটুখানি স্নেহের উদ্রেক হলো। এখানেই পুরুষের মতো হতে পারি না। না পারার পেছনে কতটা আমি আর কতটা সমাজের মরালিটি লেশন, তা মাপা হয়নি। হাঁটুর বয়সী মেয়েদের সঙ্গে পুরুষরা দিব্যি প্রেম করছে। আর মেয়েদের যেন বেছে নিতেই হবে দ্বিগুণ-ত্রিগুণ বয়সী বুড়ো ভামকে। না, আজকাল বুড়োদের আমি আমার ত্রিসীমানায় ঘেঁষতে দিতে রাজি নই। কলকাতার এক ভেতরে-ভেতরে-বুড়ো; কিন্তু-বাইরে-বাইরে তুখোড়-যুবকের প্রেমে হঠাৎ করে পড়েছিলাম, কী ভীষণ ঠকাই না ঠকেছিলাম। লাভের লাভ এক বই কবিতা লেখা হয়েছে। যদিও খুব জ্ঞানীগুণী দার্শনিকের মতো আমরা প্রায়ই বলি, জীবন একবারই আসে, জীবন খুব ছোট, চোখের পলকে ফুরিয়ে যায়, জীবনটাকে উপভোগ কর, সাধ মিটিয়ে প্রেম কর। কিন্তু বুঝি, বলা সহজ, করাটা সহজ নয়। প্রেম করা কি অতই সহজ! বিশেষ করে মেয়ে হয়ে জন্মালে এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে, পুরুষরা যেখানে রাজা আর মেয়েরা প্রজা? প্রভু আর দাসীর সম্পর্কের তুলনা না হয় আজ বাদই দিলাম। নারী-পুরুষে সমানাধিকার নেই যে সমাজে, সেই সমাজে নারী-পুরুষের মধ্যে আর যা কিছু হোক, প্রেম হয় না। সমকামীদের সম্পর্ক বিষমকামীদের সম্পর্কের তুলনায় আমি মনে করি, ঢের ভালো। অন্তত জেন্ডার বৈষম্যটা ওই সম্পর্কে নেই। প্রেম করার চেয়ে বরং সেক্স করা ভালো এসব সমাজে। তা-ই-বা বলি কী করে, সেক্সটা পুরুষরা ভাবে, অব দ্য পুরুষ, ফর দ্য পুরুষ, বাই দ্য পুরুষ। ভারতীয় উপমহাদেশের কোনো পুরুষের মুখে আমি আজ অবদি শুনিনি, উই মেইক লাভ। এ যাবৎ যা শুনেছি, তা হলো, ‘আই মেইক লাভ টু হার’। এমন যারা বলে তাদের সঙ্গে শুতে ইচ্ছে করে? একদমই না। শুধু বলেই না, মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে যে, সেক্সটা দম্যান থিংদ। বড় করুণা হয় বেচারা পুরুষগুলোর জন্য। দাসী-বাঁদি, অধস্তনদের জীবনসঙ্গী করে জেনারেশনের পর জেনারেশন কাটিয়ে গেল। সমকক্ষ অথবা সমানে সমান মেয়েদের সঙ্গে একটা সভ্য সমৃদ্ধ জীবন কাটাল না। পুরুষ-নারীতে এত বড় এক (মেন-মেইড) ব্যবধান তৈরি করা হয়েছে, এটা সারাতে আরও ক’শ বছর লাগে, কে জানে!

জানি অনেকে অবাক হচ্ছে, এই বয়সেও প্রেম আর সেক্স নিয়ে ভাবছি আমি! আসলে ওরা তো ওদের মা-দিদিমাকে দেখেছে কুড়িতেই বুড়ি হতে, না হলেও মেয়েরা কুড়িতেই বুড়ি প্রবাদটা তো শুনতে শুনতে বড় হয়েছে! এসব নিম্নমানের নারীবিরোধী প্রবাদ এক সময় আমাকেও প্রভাবিত করত। উনিশ পেরুতেই হুড়মুড় করে আমার ভেতরে বার্ধক্য চলে এলো। ২১ বছর বয়সে বেশ অনেকগুলো মৃত্যুর কবিতা লিখে ফেলেছিলাম। জীবন আসলে আমি যাপন করতে শুরু করেছি আমার চল্লিশের পর থেকে। এর আগে প্রতি বছরই আমাকে লোকেরা ভাবতে বাধ্য করতো জীবন ফুরিয়ে গেছে, যদিও ভীষণ টগবগে জীবন আমি যাপন করে গেছি, পুরুষতন্ত্রের গায়ে চাবুক চালানোর মতো স্পর্ধা করেছি, সেই ১৬-১৭ বছর বয়স থেকেই প্রচলিত কোনো নিয়ম-কানুন মানিনি, নানা প্রথা আর নিষেধের দেয়াল ডিঙিয়েছি একা একা, রীতিগুলো পায়ে মাড়িয়েছি, বাধাগুলো ছুড়ে ফেলেছি, অসম্ভব অসম্ভব কাণ্ড করেছি। আমার জীবনে প্রেমের খুব বড় ভূমিকা কখনও ছিল না। যখন প্রেমের পেছনে যৌবন ব্যয় করার কথা, ব্যয় করেছি প্রেমপ্রার্থী যুবকদের সামনে উঁচু দেয়াল তৈরি করতে, যেন আমার ছায়াই কখনও না মাড়াতে পারে।

সেই কিশোরী বয়স থেকেই আমি ছিলাম ধরাছোঁয়ার বাইরে একটা মেয়ে। বাবার বাড়ি কাম-দুর্গে জীবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছে। হাসপাতালের চার দেয়ালের মধ্যে ডাক্তারি পড়ায় আর ডাক্তারি করায় ব্যস্ত থেকেছি। কুড়ির কোঠায় বয়স, সুন্দরী বিদূষী ডাক্তার-কাম-লেখক, তাও আবার জনপ্রিয় লেখক, লোভ করেনি ছেলে কমই ছিল। গা বাঁচাতেই ব্যস্ত ছিলাম, প্রেম করার ইচ্ছা হঠাৎ হঠাৎ উদয় হতো, কিন্তু সে কল্পনার কোনো ভালো মানুষ পুরুষের সঙ্গে। বাস্তবে যে কটা পুরুষকে চোখের সামনে দেখেছি, কেউই আমার সেই ভালো মানুষ পুরুষটার মতো ছিল না। নিতান্তই সরল-সহজ, মিথ্যা না বোঝা, জটিলতা না বোঝা, হিংসা-বিদ্বেষ, ছলছাতুরি না বোঝা, সাহিত্যে আর চিকিৎসাশাস্ত্রে বুঁদ হয়ে থাকা আমি তারপরও দু-একজন বাস্তবের পুরুষকে ভালো মানুষ কল্পনা করে নিয়েছিলাম, নেওয়ার দুদিন পরই জ্বলে-পুড়ে ছাই হতে হলো। বলে না, চুন খেয়ে মুখ পুড়লে দই দেখে ভয় লাগে। আমারও তাই হয়েছিল, ধেয়ে আসা পুরুষদের আমার মনে হতো নরকের আগুন। না, আমাকে স্পর্শ করতে পারত না কেউ। একটা অদৃশ্য দুর্গ চিরকালই আমি রচনা করে রেখেছি। আমি ছাড়া কারও সাধ্য নেই সেই দুর্গের দরজা খোলে।

জীবনের অনেকটা পথ চলা শেষ করে, একটা জিনিস আমার জানা হয়েছে, খুব কম পুরুষই, সে দেশের হোক বিদেশের হোক, সাদা হোক কালো হোক, নারী-পুরুষের সমানাধিকারে যে মেয়েরা প্রবলভাবে বিশ্বাস করে, সেই সচেতন, শিক্ষিত, স্বনির্ভর মেয়েদের সঙ্গে সংসার করতে বা প্রেম করতে আগ্রহী। পুরুষ যদি ইনসিকিউর না হতো, পুরুষতন্ত্রকে কবেই সমাজ-ছাড়া করত। আত্মবিশ্বাস না থাকা পুরুষই বৈষম্যের পুরনো প্রথাকে আঁকড়ে ধরে রাখে, তাদের ভীষণ ভয়, পুরুষতন্ত্র ভেঙে পড়লেই বুঝি মেয়েরা পুরুষের প্রভু বনে যাবে, হাজার বছর ধরে পুরুষদের নির্যাতন করবে, যেরকম নির্যাতন হাজার বছর ধরে পুরুষরা করছে মেয়েদের। ইনসিকিউর লোকদের সঙ্গে প্রেম করে আনন্দ নেই, একথা নিশ্চয় করে বলতে পারি।




নাম

অর্থ ও বাণিজ্য,237,আন্তর্জাতিক,732,কাপাসিয়া,343,কালিয়াকৈর,418,কালীগঞ্জ,253,খেলা,644,গাজীপুর,3942,চাকরির খবর,34,জয়দেবপুর,1581,জাতীয়,2968,টঙ্গী,912,তথ্যপ্রযুক্তি,512,ধর্ম,196,পরিবেশ,137,প্রতিবেদন,310,বিজ্ঞান,55,বিনোদন,698,ভিডিও,58,ভিন্ন খবর,142,ভ্রমন,115,মুক্তমত,27,রাজধানী,829,রাজনীতি,1057,লাইফস্টাইল,283,শিক্ষাঙ্গন,398,শীর্ষ খবর,10776,শ্রীপুর,481,সাক্ষাৎকার,12,সারাদেশ,649,স্বাস্থ্য,212,
ltr
item
GazipurOnline.com: মেয়েদের শরীরের লোভ করেনি এমন পুরুষ খুব কম: তসলিমা নাসরিন
মেয়েদের শরীরের লোভ করেনি এমন পুরুষ খুব কম: তসলিমা নাসরিন
http://3.bp.blogspot.com/-zFr8Vr3i98s/VJNA-YrA2WI/AAAAAAAAMEE/aYJeBSJsB30/s1600/taslima.jpg
http://3.bp.blogspot.com/-zFr8Vr3i98s/VJNA-YrA2WI/AAAAAAAAMEE/aYJeBSJsB30/s72-c/taslima.jpg
GazipurOnline.com
https://www.gazipuronline.com/2014/12/tnasreen.html
https://www.gazipuronline.com/
https://www.gazipuronline.com/
https://www.gazipuronline.com/2014/12/tnasreen.html
true
13958681640745950
UTF-8
Loaded All Posts Not found any posts VIEW ALL Read More Reply Cancel reply Delete By প্রচ্ছদ PAGES POSTS View All RECOMMENDED FOR YOU LABEL ARCHIVE SEARCH ALL POSTS Not found any post match with your request Back Home Sunday Monday Tuesday Wednesday Thursday Friday Saturday Sun Mon Tue Wed Thu Fri Sat January February March April May June July August September October November December Jan Feb Mar Apr May Jun Jul Aug Sep Oct Nov Dec just now 1 minute ago $$1$$ minutes ago 1 hour ago $$1$$ hours ago Yesterday $$1$$ days ago $$1$$ weeks ago more than 5 weeks ago Followers Follow THIS PREMIUM CONTENT IS LOCKED STEP 1: Share. STEP 2: Click the link you shared to unlock Copy All Code Select All Code All codes were copied to your clipboard Can not copy the codes / texts, please press [CTRL]+[C] (or CMD+C with Mac) to copy