স্টাফ রিপোর্টারঃ কাশিমপুর এলাকায় তুরাগ নদীর তীর দখলের মহোৎসব চলছে। জেলা প্রশাসন থেকে নিষেধাজ্ঞা জারির পরও থেমে নেই দখলদারদের দৌরাত্ম। নদীর তীর দখল করে গড়ে উঠছে বিভিন্ন শিল্পকারখানা। আইনের তোয়াক্কা না করে নদী ভরাটের কারণে তুরাগ এখন মরা খালে রূপ নিয়েছে।
সূত্র জানায়, নদীর পাড় থেকে ১৫০ ফিট দূরত্বের ভেতরে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবেনা হাইকোর্টের এমন নির্দেশনা থাকলেও তুরাগ নদীর তীরবর্তী কাশিমপুর এলাকায় নদীটির পড়ের বিস্তীর্ণ জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন শিল্পকারখানা। এর মধ্যে রয়েছে ডিবিএল গ্রুপের (দুলাল ব্রাদার্স লিমিটেড) এর মাইমুন টেক্সটাইল। কারখানা কর্তৃপক্ষ ওই এলাকার নদীর পাড়সহ খাস জমি দখল করে কারখানা নির্মাণ করেছেন। দখলকৃত এসব জমির মধ্যে ‘ক’ তপসিলভূক্ত জমি ও ‘খ’ তপসিলভূক্ত জমি পরিমাণ ১২ বিঘা। এ কারখানা থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টন দূষিত শিল্পবর্জ্য গিয়ে পড়ছে তুরাগ নদীতে। এতে পানি দূষিত হয়ে মাছসহ বিভিন্ন প্রাণী মারা যাচ্ছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এক সময় খরস্রোতা তুরাগ নদীটির যত দূর চোখ যেত ততোদূর পর্যন্ত বিস্তৃতি চোখে পড়ত। এখন নদীর পাড় ঘিরে গড়ে উঠছে শিল্পকারখানা। সেই শিল্পকারখানার বর্জ্য গিয়ে পড়ছে নদীতে। শিল্পবর্জ্যে ও প্রভাবশালীদের দাপটে নদীর অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, হাইকোর্টের নির্দেশনায় ক্যাডেস্টাইল সার্ভে (সিএস) অনুযায়ী নদীর সীমানা নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে। এতে নদীর সীমানা নির্ধারণী পিলার থেকে ১৫০ ফিট রেখে স্থায়ী বা অস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করতে হবে। বিআইডব্লিউটিএ, জেলা প্রশাসক ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে তুরাগ নদীর সীমানা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী কয়েক শ’ সীমানা খুঁটি বসানো হয়েছে।
তুরাগ দখল করে ডিবিএল গ্রুপের স্থাপনা সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তুরাগ নদী রক্ষায় সরকারের পক্ষ থেকে সীমানা খুঁটি বসানো হলেও এসব খুঁটির কোন অস্তিত্ব নেই ডিবিএল গ্রুপের কারখানা সংলগ্ন নদীর পাড় এলাকায়। খুঁটি না থাকায় কারখানা কর্তৃপক্ষ ইচ্ছেমতো নদীর পাড় ভরাট করে চলছে। কারখানার ভবন নির্মাণ ও গাছ লাগিয়ে তাদের দখলের সীমানা করেছে বিস্তৃত। তাদের দখলের থাবায় ওই অংশে তুরাগ নদীর প্রশস্ততা কমে গিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। এছাড়া বর্জ্য ও ঝুট মালামাল নদীতে ফেলার কারণে নদীর গভীরতাও হ্রাস পাচ্ছে।
তবে নদী দখল মুক্ত করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বেশ কিছু উদ্যোগ। এর মধ্যে সীমানা খুঁটি বসানো ছাড়াও ডিবিএল গ্রুপের (দুলাল ব্রাদার্স লিমিটেড) এর মাইমুন টেক্সটাইলে গত ৬ নভেম্বর তারিখে কারখানাটির ভেতরে খাস জমি উদ্ধারের নিমিত্তে কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ জব্বারকে নোটিশ দেয় জেলা প্রশাসন। এরপর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ নির্বিকার থাকায় দখল মুক্ত হচ্ছে না তুরাগ নদের পাড়। এছাড়া প্রয়োজনীয় জনবল কম থাকায় প্রশাসনের উচ্ছেদ কার্যক্রম বিঘ্ন হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. নূরুল ইসলাম বলেন, ‘কারখানা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো কাগজপত্র দাখিল করেননি। তাই খাস জমি ও নদীর পাড় দখলমুক্ত করতে আগামী ১৬ ডিসেম্বরের পর উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করা হবে।