ডেস্ক রিপোর্টঃ বিশ্বের শীর্ষ স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের নাম কী? এত দিন ধরে সবাই এর উত্তরে বলে আসছিলেন—স্যামসাং। কিন্তু গত তিন মাসের অ্যাপল ও স্যামসাংয়ের মধ্যে স্মার্টফোন-যুদ্ধ দেখলে আর তা বলার উপায় নেই। বড় মাপের স্মার্টফোনের যুদ্ধে অ্যাপলের সাড়ে পাঁচ ইঞ্চি মাপের আইফোন ৬ প্লাস ও ৪.৭ ইঞ্চি মাপের আইফোন ৮-এর কাছে মার খেয়ে গেছে স্যামসাংয়ের ফোন। চীনের মতো বড় বাজারে অ্যাপলের চেয়ে পিছিয়ে পড়ছে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠানটি।
গতকাল দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠানটি তাদের শেষ প্রান্তিক, অর্থাৎ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর—এই তিন মাসের আর্থিক হিসাব প্রকাশ করেছে, যাতে স্মার্টফোন বিক্রি থেকে বড় ধরনের মুনাফা ঘাটতির তথ্য জানিয়েছে। অবশ্য সেমিকন্ডাক্টর ব্যবসায় উন্নতি হলেও মোবাইল বিভাগের মুনাফা ঘাটতি তা পুষিয়ে উঠতে পারেনি।
চীনের মতো বড় বাজারে বিশ্বের বৃহত্তম স্মার্টফোন নির্মাতা স্যামসাংয়ের বাজার দখল হঠাৎ কমতে শুরু করে। বিশ্বজুড়েই স্যামসাংয়ের বাজার কমার কারণে এই প্রভাব চীনের বাজারেও পড়েছে। এক সময়ে স্মার্টফোনের বাজারে ৩০ শতাংশের বেশি দখল থাকলেও গত প্রান্তিকে তা কমে ২০ শতাংশে নেমে এসেছে।
অ্যাপল ছাড়াও স্যামসাংকে চীনের স্মার্টফোন নির্মাতাগুলোর সঙ্গেও তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হচ্ছে। সিলিকন ভ্যালির গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েটিভ স্ট্র্যাটেজির বিশ্লেষক বেন বাজারন বলেন, ‘চীনের মতো বাজারে স্যামসাংকে ধুঁকতে হচ্ছে। কারণ স্থানীয় ব্র্যান্ডগুলো স্যামসাংয়ের বাজার দখলে ভাগ বসাচ্ছে। এর মধ্যে হুয়াউয়ে ও জিওমির নাম না বললেই নয়। এখন বড় মাপের ফোন নিয়ে অ্যাপলও হাজির হওয়ায় এক সময়ে শীর্ষ অবস্থানে থাকা স্যামসাং তার ধার হারাতে শুরু করেছে।’
গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যানালিসের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে চীনের বাজারে স্যামসাংকে ছাড়িয়ে যায় জিওমি। কিন্তু চতুর্থ প্রান্তিকে এসে চীনের বাজারে শীর্ষস্থানে চলে আসে অ্যাপল আর স্যামসাং নেমে যায় তিনে।
অ্যাপল ও স্যামসাংগত বছরের শেষ প্রান্তিকে সাত কোটি ৪৫ লাখ ইউনিট আইফোন বিক্রি হয়েছে। অত্যন্ত চড়া দামে নতুন এই ফোন বিক্রি করায় অ্যাপলের মুনাফাও হয়েছে ঢের। প্রথা ভেঙে সাড়ে পাঁচ ইঞ্চি মাপের নতুন আইফোন বাজারে এনে এক প্রকার বাজিই ধরেছিল অ্যাপল। তাদের সেই বাজি কাজে এসেছে। গত বছরের শেষ প্রান্তিক অর্থাৎ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই তিন মাসে রেকর্ডসংখ্যক আইফোন বিক্রি হয়েছে এবং করপোরেট ইতিহাসে এক প্রান্তিকে রেকর্ড মুনাফা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে আইফোন ৬ ও ৬ প্লাস বাজারে ছাড়ে অ্যাপল। আইফোন বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় শেষ প্রান্তিকে অ্যাপলের মোট মুনাফাও গত বছরের শেষ প্রান্তিকের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্ট্র্যাটেজি অ্যানালাইটিকসের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের শেষ প্রান্তিক বিবেচনায় ধরলে অ্যাপল ও স্যামসাংয়ের স্মার্টফোনের লড়াই হয়েছে সমানে সমান। অর্থাৎ, কেউ কাউকে হারাতে পারেনি। অবশ্য স্যামসাং ২০১১ সালের পর এই প্রথমবার বড় ধরনের অগ্রগতি ধরে রাখতে পারেনি। চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের বাজারে স্যামসাংয়ের তুলনায় অ্যাপলের ফোন বেশি জনপ্রিয় হয়েছে।
স্ট্র্যাটেজি অ্যানালাইটিকসের তথ্য অনুযায়ী, টানা চতুর্থ প্রান্তিকে মুনাফা কমার ধারা থেকে বের হতে পারল না স্যামসাং। গত প্রান্তিকে ২৭ শতাংশ মুনাফা কমেছে স্যামসাংয়ের। গত প্রান্তিকে অ্যাপলের সমান অর্থাৎ সাত কোটি ৪৫ লাখ ইউনিট ফোন বিক্রি করেছে স্যামসাং যা ২০১৩ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে চেয়ে কম। স্যামসাং অবশ্য নির্দিষ্ট সংখ্যক ফোন বিক্রির কথা বলেনি। স্যামসাং জানিয়েছে, সাত কোটি ১০ নাথ থেকে ৭ কোটি ৬০ লাখ ইউনিটের মতো ফোন বিক্রি হয়েছে। ২০১৩ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে নয় কোটি ইউনিট ফোন বিক্রি করেছিল স্যামসাং।
সেপ্টেম্বরে বড় মাপের আইফোন এনে বাজার মাত করে অ্যাপল। এদিকে, আইফোনের প্রতিদ্বন্দ্বী স্যামসাংয়ের গ্যালাক্সি এস ৫ নকশার কারণে সমালোচনার মুখে পড়ে। সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েকটি মডেলে নকশায় পরিবর্তন আনে স্যামসাং। তবে বিশ্লেষকেরা স্যামসাংয়ের মুনাফার ধারায় ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন। গত তিন প্রান্তিকের তুলনায় চতুর্থ প্রান্তিকে বেশি মুনাফা করেছে স্যামসাং।
বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, শুধু মুনাফার দিক থেকেই নয়, ফোন বিক্রির হিসাবেও স্যামসাংকে টক্কর দিয়েছে অ্যাপল। অবশ্য, কেউ কেউ বলছেন, স্যামসাং হেরেই গেছে। তবে স্ট্র্যাটেজি অ্যানালাইটিকসের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ স্মার্টফোনের বাজার দখলে নিয়ে এখন যৌথভাবে শীর্ষ স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির খেতাব ভাগাভাগি করবে অ্যাপল ও স্যামসাং।
এ বছর স্মার্টফোনের বাজারে সে শীর্ষে যাবে তা নির্ধারিত হবে অ্যাপলের নতুন আইফোন ও স্যামসাংয়ের নতুন গ্যালাক্সি সিরিজের স্মার্টফোন দেখেই। ইতিমধ্যে নতুন আইফোন ও গ্যালাক্সি সিরিজের নতুন স্মার্টফোন আসার খবর প্রযুক্তি বিষয়ক বিভিন্ন সাইটে আসতে শুরু করেছে।