স্টাফ রিপোর্টারঃ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও একুশে পদকজয়ী নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। রোববার ভোর ৬টার দিকে তার মৃত্যু হয় বলে ল্যাবএইড হাসপাতালের সহকারী মহাব্যবস্থাপক সাইফুর রহমান লেনিন জানিয়েছেন।
দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত এই নির্মাতাকে শনিবার সকাল থেকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রের পরিচালক চাষী নজরুল ইসলামের বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।
সকাল ৯টার দিকে তার মরদেহ কমলাপুরে জসীমউদ্দিন সড়কে নিজের বাসায় নেওয়া হয় বলে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাসের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামসুদ্দিন দিদার জানিয়েছেন।
এরপর বেলা ১২টার দিকে নজরুল ইসলামের মরদেহ তার বাসার কাছের ইডেন মসজিদে নেওয়া হয়। জোহরের নামাজের পর সেখানে প্রথম জানাজা শেষে তার মরদেহ ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব প্রাঙ্গনে নেওয়ার পর ল্যাবএইডের হিমঘরে রাখা হবে মরদেহ।
চাষী নজরুল ইসলামের দুই মেয়ের একজনের স্বামী ম্যানিলা থাকেন জানিয়ে দিদার বলেন, তিনি ফিরলে সোমবার বিক্রমপুরে পারিবারিক কবরস্থানে এই চলচ্চিত্র পরিচালকের দাফন হবে। আর আগে সকালে এফডিসি ও জাতীয় প্রেসক্লাবে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে তার জানাজা হবে।
১৯৪১ সালের ২৩ অক্টোবর শ্রীনগর থানার সমষপুর গ্রামে মোসলেহ উদ্দিন খান ও শায়েস্তা খানমের ঘরে জন্ম হয় চাষী নজরুল ইসলামের। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়।
গত মাসের শুরুতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে অধ্যাপক সৈয়দ আকরাম হোসেনের তত্ত্বাবধানে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ‘ওরা ১১ জন’র নির্মাতা।
১৯৬১ সালে ফতেহ লোহানীর ‘আছিয়া’ সিনেমার সহকারী পরিচালক হিসেবে চলচ্চিত্রে আসেন চাষী নজরুল ইসলাম। এরপর পরিচালক ওয়াহেদ-উল-হকের সঙ্গেও বেশ কিছু দিন সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’ পরিচালনা করেন ১৯৭২ সালে। ছবিটি ব্যাপক প্রশংসা পায়।
এরপর ‘সংগ্রাম’, ‘ভালো মানুষ’, ‘বাজিমাত’, ‘বেহুলা লক্ষিন্দর’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা, ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’, ‘হাসন রাজা’, ‘মেঘের পরে মেঘ’, ‘শাস্তি’ ও ‘সুভদা’র মতো সিনেমা নির্মাণ করেছেন তিনি।
১৯৮২ সালে বুলবুল-কবরী-আনোয়ারাকে নিয়ে ‘দেবদাস’ নির্মাণ করেছিলেন চাষী নজরুল ইসলাম। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিয়োগান্ত এই কাহিনী নিয়ে ২০১৩ সালে আবার শাকিব খান-অপু বিশ্বাস-মৌসুমীকে নিয়ে নির্মাণ করেন চলচ্চিত্রটি।
১৯৮৬ সালে ‘শুভদা’, ১৯৯৭ সালে ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ চলচ্চিত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। ২০০৪ সালে পেয়েছেন একুশে পদক।