স্টাফ রিপোর্টারঃ টঙ্গীর তুরাগ তীরে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব ইজতেমায় ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের সেবা দিতে প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
শনিবার সকালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের টঙ্গী অঞ্চলের কার্যালয়ে বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক প্রস্তুতি পর্যালোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি কথা জানান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটি বৃহত্তম মুসলিম প্রধান দেশ। এইদেশে মসজিদের সংখ্যা ও মুসল্লিদের সংখ্যা দেখে বলা যায় তাবলীগ জামায়াতের মেহনত বৃথা যায়নি।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জামায়াত বিশ্ব ইজতেমার আয়োজনে প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, সিটি করপোরেশনসহ গাজীপুরের এলাকাবাসী সকলেরই পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই আমরা পূর্বের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী এবারও ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের সেবা দিতে প্রস্তুত রয়েছি।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, বিশ্ব ইজতেমা আমাদের জন্য একটি গুরুত্ত্বপূর্ণ আয়োজন। ইতোমধ্যে বিভাগ অনুযায়ী বন্টন করা কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মুসল্লিদের সেবা দিতে পানি, টয়লেটসহ যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রায় ৫০টি ওষুধ কোম্পানি মুসল্লিদের সেবা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, গাজীপুর একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা। ৩৯টি রুটের গাড়ি এ রাস্তা দিয়ে চলে। তাই যে কোনো সময় রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হতে পারে। বিষয়টি মাথায় রেখে গাজীপুর পুলিশ, এলজিইডি ও সড়ক বিভাগের জন্য কিছু রেকারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, বিগত বছরগুলোতেও ইজতেমা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি এবারও সফল হবে। আমরা সার্বিকভাবে মুসল্লিদের সেবা দিতে প্রস্তুত রয়েছি।
রাজউককে উদ্দেশ্য করে জাহিদ আহসান বলেন, আমরা জানি আদালতের নির্দেশানুযায়ী ইজতেমা মাঠের পশ্চিম পাশের জায়গাটি ইজতেমা কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাজউক সেখানে একশ ফিটের রাস্তা করার কথা থাকলেও রহস্যজনক কারণে গত তিন বছরেও তা করেনি। দ্রুত তা বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানান।
ইজতেমার সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে বিভাগ ভিত্তিক পর্যালোচনা করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে দায়িত্ব প্রাপ্ত ইজতেমা প্রস্তুতি কমিটির সমন্বয়ক ও ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার জিল্লার রহমান।
তিনি বলেন, আমরা ইজতেমার সার্বিক বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে বিভাগ ভিত্তিক কমিটিকে দায়িত্ব দিয়েছি। তাদের প্রস্তুতির অগ্রগতি হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য বিভাগ গতবারের তুলনায় ০.৭ শতাং বেশি পানির ব্যবস্থা রাখবে। টয়লেটের সংখ্যা গতবারের চেয়ে ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগ তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সার্ভিস দেবে। পাশাপাশি ৪টি জেনারেটরের ব্যবস্থাও থাকবে।
তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রতিটি খিত্তায় দুইজন করে দায়িত্ব পালন করবেন। ৩টি ট্যাঙ্কার সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে। কোনো অগ্নি দুর্ঘটনার ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি থাকবে। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি পাম্প পানির যোগান দেবে।
সড়ক ও জনপদের অধীনে রাস্তা সংস্কার ও পুল নির্মাণের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। রাস্তার ধুলা দূর করতে এলজিইডির ওয়াটার ট্যাংকার পানি ছিটাবে। গাজীপুর সিভিল সার্ভিসের ৩টি টিম ২৪ঘন্টা কাজ করবে। ১৪টি অ্যাম্বুল্যান্স সার্বক্ষণিক সেবা দেবে।
ইজতেমায় সাউন্ড সিষ্টিমের দায়িত্বে থাকবে তথ্য অধিদপ্তর। যানবাহনের জন্য বিআরটিসির ৩০০ বাস প্রস্তুত থাকবে। বিদেশিদের জন্য থাকবে ৫টি বাস। রেলওয়ে প্রতিদিন ৫টি করে এবং ইজতেমার দিন ২২টি স্পেশাল সার্ভিস ছাড়বে। এছাড়া প্রত্যেক ট্রেন টঙ্গীতে যাত্রা বিরতি করবে।
ইজতেমার মুসল্লিদের সার্বক্ষণিক সেবায় নিয়োজিত তাকবে গাজীপুর সিটি করপোরেশন (জিসিসি)।
বিদেশি অতিথিদের ভিসা ও আপ্যায়নের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা সাধারণত ৪৫ দিনের ভিসা দেবো। যারা তিন দিনের চিল্লায় আসবেন তাদের ১৩০দিনের ভিসা দেবো। তবে, তা হবে তাবলীগের মুরব্বিদের সুপারিশ অনুযায়ী। তবে কোনো ধরণের জঙ্গি বা ক্ষতিকর গ্রুপের বলে সন্দেহ হলে আমরা ভিসা দেবো না।
তিনি বলেন, বিশ্বের অনেকদেশে ইবোলা ভাইরাসের প্রকোপ থাকায় আমরা নির্দেশ দিয়েছি বিদেশিদের ইবোলা ভাইরাস পরীক্ষা করে একটি সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্য। সার্টিফিকেট দেখে ভিসা দেওয়া হবে।
আইন-শৃঙ্খলা প্রস্তুতির বিষয়ে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন- গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন আর রশিদ। তিনি বলেন, ইজতেমার নিরাপত্তা জোরদার করতে আমরা পাঁচ স্তরের নিরাপত্ত ব্যবস্থা নিয়েছি। ইজতেমা এলাকাকে ট্রাফিক জোনসহ পাঁচটি জোনে ভাগ করে প্রতি জোনে দুইজন এএসপিকে দায়িত্ব পালন করবেন।
নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে চেকিং ব্যবস্থা থাকবে। সাদা পোশাকে পুলিশ থাকবে, টহল পুলিশ থাকবে, ওয়াচ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষণ করা হবে, র্যাবের পাশাপাশি পুলিশেরও স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে। সার্বক্ষণিক যোগাযোগের জন্য একটি সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুমের অধীনে পাঁচটি সাব কন্ট্রোলরুম থাকবে। দুর্ঘটনা ও ভিআইপি বহনের জন্য ৩টি হেলিপ্যাড থাকবে। ইজতেমার নিরাপত্তায় সর্বমোট প্রায় ৯ হাজার ৫০০ পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।
আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান বলেন, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ ধর্মীয় জামায়াতের আয়োজনে আমরা সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছি। আশা করছি বরাবরের মত এবারও মুসল্লিদের সেবা দিতে আমরা সফল হবো।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক, পুলিশের নব নিযুক্ত মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এ এস এম মাহফুজুল হক নরুজ্জামান, সাবেক টঙ্গী পৌরসভার মেয়র অ্যাড. আজমত উল্লাহ খান, গাজীপুর জেলা প্রশাসক নুরুল ইসলাম, ইজতেমার মুরুব্বি সাবেক সচিব বদিউর রহমান ও জিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও যুগ্ম সচিব সুলতান মাহমুদ প্রমুখ।
আগামী ৯ জানুয়ারি থেকে প্রথম দফার বিশ্ব ইজতেমা শুরু হবে। ১১ জানুয়ারি আখেরী মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে।